প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগের গোড়া অনেক মজবুত, এটা কেউ নাড়াতে পারবে না। অনেক ঝড়-ঝাপ্টা এসেছে, কিন্তু কেউ এর গোড়া উপড়াতে পারেনি।
আজ সোমবার বিকালে গণভবনে আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগরের সদ্য নির্বাচিত নতুন দুটি কমিটির নেতাকর্মীরা সাক্ষাৎ করতে গেলে তাদের উদ্দেশে দলীয় প্রধান এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই বেশি জীবন দিয়েছেন। শহীদের তালিকায় তাদের নামই আগে পাওয়া যাবে। এতো আত্মত্যাগ একটি জাতির জন্য আর কোনো দল এবং সংগঠন করেনি, কিন্তু আওয়ামী লীগই করেছে। এই ত্যাগের মধ্য দিয়েই সংগঠন গড়ে উঠেছে বলেই আওয়ামী লীগের ভিত অত্যন্ত মজবুত।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের দলের ওপর বারবার আঘাত এসেছে। এতে হয়ত উপরের দিকে কিছুটা ভেঙে গেছে, ঝড় এলে তো গাছের উপর দিকের অংশ আগে ভাঙে। কিন্তু গোড়া শক্ত থাকলে তাড়াতাড়ি উপড়ায় না। আওয়ামী লীগের গোড়া অত্যন্ত শক্ত এবং মজবুত।”
শেখ হাসিনা বলেন, “সবাইকে নিয়ে চলতে হবে। ত্যাগীরা যেন বাদ না পড়ে সে বিষয়টি নতুন নেতৃত্বকে দেখতে হবে। সবাই বসে মিলেমিশে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে হবে।”
নগর নেতাদের নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “রাজনীতি করতে হলে সহনশীলতা অত্যন্ত প্রয়োজন। তাই কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সবাইকে নিয়ে চলতে হবে, লক্ষ্য রাখতে হবে কেউ যাতে বঞ্চিত না হন। বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হিসেবে ত্যাগের আদর্শ নিয়ে চলতে হবে। মনে রাখতে হবে, দেশের ইতিহাসে একমাত্র জাতির জনক বঙ্গবন্ধুই দলকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করে দলের হাল ধরেছিলেন। এটা মনে রেখেই সংগঠনকে গড়ে তুলুন। জনগণের জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতেও সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সংগঠনকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি নগরবাসীকেও সজাগ ও সচেতন করতে হবে। কেউ যাতে সন্ত্রাস কিংবা জঙ্গিবাদে লিপ্ত হতে না পারে সেজন্য সর্বত্র কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। প্রতিটি এলাকায় নজর রাখতে হবে, কেউ এ ধরনের অপতৎপরতায় জড়িত হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের ধরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোপর্দ করতে হবে।”
তিনি বলেন, “একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে শুধু বক্তৃতাই নয়, সামাজিক দায়িত্বও পালন করতে হবে। আমরা শক্তহাতে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমন করেছি বলেই দেশের মানুষ আজ সুখে-শান্তিতে রয়েছে, দেশ আজ সব দিক থেকে এগিয়ে চলেছে। এই উন্নয়নের গতিধারাকে অব্যাহত রাখতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াত জোটের সরকার উৎখাতের আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও ও নির্বিচারে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার কঠোর সমালোচনা করে বলেন, “বাংলাদেশ একমাত্র বঙ্গবন্ধুর আমলে প্রবৃদ্ধি ৭ ভাগের ওপরে অর্জন করেছিল। এরপর এবার তার হাতে গড়া রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের আমলে দেশ ৭ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পেরেছে। আর কেউ করতে পারেনি।” তিনি বলেন, “একটি দেশে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দরকার। আর দেশে তেমন পরিবেশ থাকলে সবদিক থেকে উন্নতি হয় আমরা তা প্রমাণ করেছি।”
শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার উৎখাতের নামে তিনটি মাস ধরে দেশজুড়ে জ্বালাও-পোড়াও, ধ্বংসযজ্ঞ এবং পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা না করতো, দেশবাসীকে জিম্মি করে কষ্ট না দিত, তবে দেশের প্রবৃদ্ধি ৭ ভাগের ওপরে অনেক আগেই উঠতো। আন্দোলনের নামে এভাবে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যার বীভৎসতা অতীতে দেশের মানুষ কখনো দেখেনি। যা বিএনপি-জামায়াত জোট মিলে করেছে।”
তিনি বলেন, “দেশে নির্বাচন হচ্ছে, এটা হতেই থাকবে। আগামীতেও নির্বাচন হবে। আমরা স্থানীয় সরকারগুলোও দলীয় প্রতীকের মাধ্যমে নির্বাচনের ব্যবস্থা করে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করছি।”
বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে আবেগজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাবা-মা, ভাইসহ সবাইকে রেখে আমরা দুই বোন বিদেশে গিয়েছিলাম। ফিরে এসে আর কাউকে পাইনি। দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যেই আমি হারানো বাবা-মা, ভাইসহ সবাইকে পেয়েছি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সমর্থকরাই তো আমার পরিবার, দেশের জনগণই আমার পরিবার। তাই দেশ ও জনগণের কল্যাণে আমি যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত।”
প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে মহানগর আওয়ামী লীগের অগ্রণী ভূমিকার প্রশংসা করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। এ সময় তিনি গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় তার মুক্তির দাবিতে ঢাকা মহানগরীতে খুব স্বল্প সময়ে ২৫ লাখ মানুষের স্বাক্ষর গ্রহণ করে তা জমা দেয়ার ঘটনারও প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহ এমপি ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী আবুল হাসনাত ও শাহে আলম মুরাদ প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এ সময় মঞ্চে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং উত্তর-দক্ষিণ কমিটির গঠনে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালনকারী কেন্দ্রীয় নেতা ড. আবদুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খানসহ মহানগরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান শেষে নবনির্বাচিত নগর নেতাদের পোড়াবাড়ীর চমচম দিয়ে আপ্যায়িত করেন প্রধানমন্ত্রী।
পাঠকের মতামত: