ঢাকা,শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

অরক্ষিত ৩০ রোহিঙ্গা ক্যাম্প

ইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ রোহিঙ্গাদের আশ্রিত ৩০টি ক্যাম্প অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরে যেভাবে নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে, উখিয়া টেকনাফের ওইসব আশ্রয় শিবিরগুলোতে তা নেই। ৩০টি ক্যাম্পে কাঁটাতারের ঘেরা বা বাউন্ডারি দেয়াল না থাকায় রাতের বেলায় শিবির অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ছে সন্ত্রাসী-ডাকাত ও অস্ত্রধারী রোহিঙ্গা জঙ্গীরা। এতদিন যারা পাহাড়ে অবস্থান করেছিল, প্রশাসনের ভয়ে তারা সবাই বর্তমানে ক্যাম্পে ঢুকে পড়েছে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, আশ্রিত ক্যাম্প ছেড়ে কে কোথায় যাচ্ছে, কে ঢুকছে এবং কোন শেডে রাত যাপন করছে, তা মোটেও অবগত নন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। লাখ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে কয়েকজন সন্ত্রাসী জায়গা করে নিলেও প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করে না রোহিঙ্গারা। এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পে অনায়াসে যাতায়াত করছে তারা। রোহিঙ্গাদের অত্যাচারে স্থানীয়দের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে বিলম্ব হলে আপাতত সকল রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নতুবা অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সূত্র জানায়, ১৮ মাস ধরে কাঁটাতারের ঘেরাবিহীন খোলামেলা আশ্রয় শিবিরে লাখ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এছাড়াও প্রায় ২৭বছর ধরে টেকনাফ ও উখিয়ার দুইটি শরণার্থী শিবিরে আশ্রিত রয়েছে ১৯৯২ সালে অনুপ্রবেশ করা প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা। ওইসময় প্রত্যাবাসিত প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা ফের অনুপ্রবেশ করে রেজিস্টারবিহীন অবস্থায় থাকে। এছাড়াও গ্রামেগঞ্জে ঢুকে পড়া রোহিঙ্গার সংখ্যা হচ্ছে দুই লাখের বেশি। এরপর ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর অনুপ্রবেশ করেছে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা। আশ্রয় শিবিরগুলোতে প্রায় ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাস করছে। ওই ক্যাম্পগুলোর চতুর্দিকে কোন ধরনের বেড়া নেই। যেখানে ইচ্ছে যাতায়াত করছে রোহিঙ্গারা। প্রতিনিয়ত ক্যাম্প ত্যাগ করছে তারা। দেশের কোথাও ওই রোহিঙ্গা ধরা পড়লে তাদের ফের পাঠানো হচ্ছে আশ্রয় শিবিরে। এ কারণে তাদের মনে কোন ধরনের ভীতি থাকে না। আটক হওয়ার পর ওসব রোহিঙ্গাকে মামলা ঠুকে দিয়ে কারাগারে পাঠালে এবং সাজা ভোগ শেষে মিয়ানমারের বাহিনীর হাতে সোপর্দ করার ব্যবস্থা নেয়া হলে হয়তো ভয়ে ক্যাম্প ত্যাগ করা থেকে বিরত থাকত তারা। সম্প্রতি ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ৩১ রোহিঙ্গাকে সাজা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে। ইতিপূর্বেও সাজা ভোগ শেষে ভারত বহু রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার সরকারের কাছে সোপর্দ করেছে। ত্রিপুরা রাজ্যের একটি আদালত তাদের ১৪ দিনের কারাদন্ড দিয়ে জেলে পাঠিয়েছে। তবে বাংলাদেশে কোথাও প্রশাসনের হাতে রোহিঙ্গা ধরা পড়লে তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা না নিয়ে নিরাপদ স্থানে (আশ্রয় শিবির) পাঠানো হয়ে থাকে বিধায় রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ত্যাগে ভয় পায় না।

লাখ লাখ রোহিঙ্গার কারণে উখিয়া টেকনাফ এমনকি গোটা জেলার হাট-বাজারগুলোতে নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় ওইসব পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়ে নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। এখানে রোহিঙ্গাদের কোন ধরনের দুর্ভোগ নেই। ফ্রি রেশন পাচ্ছে, বিভিন্ন এনজিওতে ভাল বেতনে চাকরি করে রোহিঙ্গারা দু’হাতে কামাই করছে টাকা। মাছ-মাংস ও তরিতরকারির দাম আকাশচুম্বী হলেও রোহিঙ্গারা আফসোস করে না।

ঠিকই তারা কিনে নিচ্ছে ওসব পণ্য। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে শরণার্থীদের চাকরি দেয়া এমনকি যে দেশে আশ্রিত, সেই দেশের মুদ্রাও তারা বহন করতে পারেনা। কিছু এনজিও এবং আরএসও ক্যাডাররা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন এবং ভাসানচরে না যাওয়ার জন্য আন্দোলনমুখী করে তুলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রত্যাবাসনের বিষয়ে তাদের অভিমত হচ্ছে-তারা কখনও স্বদেশে ফিরে যাবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের নাগরিকত্ব প্রদানের দাবি পূরণ না হয়।

স্থানীয়রা বলেন, এক দেশ থেকে পালিয়ে এসে আরেকটি দেশে যেখানে আশ্রয়স্থল খোঁজে শান্তিতে বসবাস করার কথা, সেখানে রোহিঙ্গারা আন্দোলনমুখী হওয়ার পেছনে কাদের ষড়যন্ত্র এবং কারা এদের পেছনে অর্থব্যয় করছে, তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। শরণার্থী আইন অনুসারে লোকালয়ে শরণার্থীদের কোন ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ হলেও পুরনো রোহিঙ্গা নেতাদের (জঙ্গী) ইশারায় রোহিঙ্গা ক্যাডাররা মিছিল মিটিং সভা-সমাবেশ করেই চলছে। ওইসব আরএসও জঙ্গীদের আগেই গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা দরকার। উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে কয়েকজন আরএসও রোহিঙ্গা জঙ্গীকে আটক করা হয়েছিল। পুলিশের দুর্বল রিপোর্ট এবং রাজনৈতিক নেতার বিশেষ তদ্বিরে বেশি দিন কারাগারে থাকতে হয়নি। কারাগার থেকে সহসা বেরিয়ে পড়ে ওই রোহিঙ্গা জঙ্গীরা ইয়াবা থেকে শুরু করে নানাবিধ অপরাধ করে বেড়াচ্ছে।

পাঠকের মতামত: