ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

অনিয়ম দূর্নীতির ভাগাড়, কক্সবাজার জেলা কারাগার

coxsbazar-jail-karagarবিশেষ প্রতিবেদক :::

কক্সবাজার জেলা কারাগারে চলছে লাগামহীন অনিয়ম ও দূর্নীতির মহোৎসব। সরকারী এ প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা যাবতীয় দূর্নীতি নিয়ন্ত্রন করে আসছেন হিসাব রক্ষক ফরহাদ খন্দকার। সদ্য জেলফেরৎ বিভিন্ন ব্যক্তি ও আদালতে হাজিরা দিতে আসা বন্দীরা জানান, কারাগারের বন্দীদের জন্য সরকারীভাবে বরাদ্ধকৃত খাদ্য থেকে এক তৃতীয়াংশ হারে চুরি করা হচ্ছে প্রতিদিন। চাল, ডাল, তেল, পিঁয়াজ-মসল্লা ও আটাসহ বন্দীদের খাদ্যের একটা অংশ কম দিয়ে বাইরে বিক্রি করে দিচ্ছে হিসাব রক্ষকের নেতৃত্বাধীন একটি চক্র। সশ্রম কারাদন্ডপ্রাপ্ত কয়েদীদের কাজপাশ বন্টনের সময় (পছন্দের কাজের পাশ দিতে) প্রতিমাসে নির্দিষ্ট হারে টাকা আদায় করে ওই চক্র। এ ছাড়াও কারাগারের সাক্ষাৎকক্ষ, কারা হাসপাতাল, রান্নাঘর (চৌকা), দর্জিদফা, বাগানদফা, ও কারাক্যান্টিনসহ সুবিধাজনক বিভিন্ন দফায় কাজ দিতে হাজতী-কয়েদীদের কাছ থেকে প্রতিমাসে মোটা অংকের টাকা আদায় করে কর্মকর্তারা। এসবের মধ্যে সবচেয়ে লোভনীয় পদ হল বন্দী ওয়ার্ডের “মেট”। সশ্রম সাজাপ্রাপ্ত কয়েদীরা বিভিন্ন ওয়ার্ডের মেট হওয়ার জন্য কর্মকর্তাদের সাথে মোটা অংকের চুক্তি করে। উপরোক্ত সব দফা ও পদ প্রতিমাসে নবায়ন করতে হয়। আর নবায়নের সময় কতিপয়  হাজতী-কয়েদীদের গুনতে হয় মোটা অংকের টাকা। এসব পদ কিনে নিয়ে বিনিয়োগকৃত টাকা লাভসহ উঠিয়ে নিতে এরা সাধারন হাজতী-কয়েদীদের উপর চরম নির্যাতন চালায়। সিট বিক্রি, খাবার বিক্রি এমনকি গোসলের পানি পর্যন্ত বিক্রি করে এরা। এভাবে জেলা কারাগারের প্রতিটি সেক্টরেই চলছে লাগামহীন দূর্নীতি। আর দূর্নীতিবাজদের এ সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রন করছেন হিসাবরক্ষক ফরহাদ খন্দকার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র জানায়, কারাগারের বন্দীদের জন্য সরকারী খাদ্য গুদাম থেকে সরবরাহকৃত ৫০ কেজি চালের বস্তা কারাগারের গুদামে পৌঁছার পর প্রতি বস্তা থেকে চার কেজি চাল বের করে আবারো বস্তার মুখ সেলাই করে দেয়া হয়। চুরিকৃত এসব চাল রাতের অাঁধারে বাইরে বিক্রি করে দেয়া হয়। এ ছাড়াও কারাগারের তালিকাভূক্ত  সরবরাহকারক ও ঠিকাদারদের বিলের চেক দেয়ার সময় ৬% হারে কমিশন নেন ফরহাদ খন্দকার। এরকম কমিশন নেয়ার জন্য গত ১৭ মে অফিস কামাই করে কক্সবাজার সোনালী ব্যাংকে এসে ঠিকাদারদের সাথে তর্কাতর্কি করেন। সূত্রে প্রকাশ, জেলা কারাগারে দীর্ঘদিন কর্মরত থাকার পর ২০০১ সালে বদলী হন ফরহাদ খন্দকার। কিন্তু অবাধ দূর্নীতি ও টাকার হাতছানিতে চেষ্টা তদবীর করে বিগত ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে আবারো ফিরে আসেন কক্সবাজার জেলা কারাগারে। তার বিভিন্ন দূর্নীতি ও অনিয়মের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি কারা হেডকোয়ার্টার্সে বদলী করা হলে চেষ্টা তদবীর করে বদলী ঠেকিয়ে বহাল তবিয়তে রয়ে গেছেন তিনি। এছাড়া বন্দীদের সাথে সাক্ষাৎপ্রার্থী আত্নীয়স্বজনদের “অফিস কল”র মাধ্যমে দেখা করার জন্য এক দেড় হাজার টাকার চুক্তি করে তার অফিসের জানালা দিয়ে দেখা করার সুযোগ করে দেন তিনি। প্রতিদিন এভাবে ৩/৪ টি “অফিস কল” বানিজ্য করে যাচ্ছেন তিনি।  উপরোক্ত সব ব্যাপারে জেলা কারাগারের হিসাবরক্ষক ফরহাদ খন্দকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি অফিসে চা খেতে যাওয়ার আমন্ত্রন জানান।

পাঠকের মতামত: