ঢাকা,রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

তদবিরে বদলি প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য দু:সংবাদ

অনলাইন ডেস্ক :: ‘তদবির’ করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষক বদলি হয়েছেন, তারা পদোন্নতিতে পিছিয়ে পড়বেন। ২০১৯ সালের নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী উপজেলা বা থানার মেধাতালিকা অনুসারে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে পদোন্নতি দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে বদলি হওয়া শিক্ষকদের যোগদানের তারিখ থেকে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করা হবে, চাকরির শুরু থেকে নয়।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা বা থানার শূন্যপদের ২০ শতাংশ বদলির কথা থাকলেও তদবিরের মাধ্যমে নিয়ম না মেনে ইচ্ছামতো বদলি করা হয়েছে শিক্ষকদের। শতভাগই বদলি হয়েছেন কোনও না কোনও জেলা সদরে।

শুধু তাই নয়, বদলির পর ওই শিক্ষকদের পদোন্নতিও দেওয়া হয়েছে অনিয়মের মাধ্যমে। এতে স্থানীয় কোটায় নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।

শিক্ষকরা তদবির করে জেলা শহরে বদলি হওয়ায় গ্রামের স্কুলগুলোয় শিক্ষক সংকট লেগেই থাকে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে পদোন্নতির জন্য এবার ২০১৯ সালের নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতার তালিকা করা হচ্ছে। বিধিমালার ৩(৩) ধারায় বলা হয়েছে, নিয়োগ কার্যক্রম শূন্যপদের ভিত্তিতে উপজেলা বা থানাভিত্তিক হবে।

২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর জারি করা আদেশে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের নিয়োগ বিধিমালাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিধিমালা অনুসরণ করতে হবে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সময় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপজেলা বা থানার কোটায় মেধাতালিকা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা পরিষদও নিয়োগ দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় মেধাতালিকা নেই প্রাথমিক শিক্ষকদের। নন-ক্যাডার থেকে প্রধান শিক্ষক পদেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে আলাদা মেধাক্রমের ভিত্তিতে। এসব কারণে উপজেলা বা থানাভিত্তিক জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে পদোন্নতি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে বদলি হওয়া শিক্ষকরা মেধাক্রমে পিছিয়ে পড়ছেন। তবে যে উপজেলা বা থানার কোটায় নিয়োগ সেই জায়গায় ফেরত গেলে তারা পিছিয়ে পড়বেন না।

বিষয়টি নিয়ে রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত শিক্ষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

রাজধানীর লালবাগের হাজী ইব্রাহিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘৩২ থেকে ৩৫ বছর রাজধানীতে চাকরি করেও পদোন্নতি পাচ্ছেন না স্থানীয় কোটায় নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা। পদোন্নতি ছাড়াই সহকারী শিক্ষক হিসেবে অবসরে গেছেন অনেকে। এ পরিস্থিতি ঠেকাতে মামলা করারও প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু জটিলতা হতে পারে ভেবে মামলা করিনি।’

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার কাঁঠালতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. তাসরিফ আহমেদ বলেন, ‘২০ বছর চাকরি করে পদোন্নতি বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষকরা। বদলি শিক্ষকরা পদোন্নতি পেয়েছেন। শূন্যপদের ২০ শতাংশ বদলি করার কথা থাকলেও সব পদ পূরণ করে বদলি করা হয়। এতে স্থানীয় কোটায় নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা বঞ্চিত হন। নিয়োগ বিধিমালা মেনে পদোন্নতি হলে এ সমস্যা থাকবে না।’

অন্যদিকে, বদলি হয়ে আসা শিক্ষকরা বলছেন, চাকরির শুরু থেকে জ্যেষ্ঠতা গণনা না করলে তারা পদোন্নতি বঞ্চিত হবেন। কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিগার সুলতানা বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত অমানবিক। ২০১১ সালের পদোন্নতি বিধিমালায় বলা ছিল না যে, বদলি হয়ে আসলে পদোন্নতি দেওয়া হবে না। এমন হবে জানলে সিরাজদিখান থেকে এখানে বদলি হয়ে আসতাম না।’

এ বিষয়ে আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন,‘নিয়োগবিধি অনুযায়ী পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। বদলি নীতিমালা অনুযায়ী নয়। এতে বদলি শিক্ষকরা বঞ্চিত হবেন সত্য, কিন্তু বদলির কারণে উপজেলা ও থানার কোটায় নিয়োগ পাওয়া রাজধানী ও জেলা সদরের শিক্ষকরাও বঞ্চিত হবেন। এই জটিলতার কারণে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় একটি বৈঠকও করেছে। মতামত পাওয়া গেলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন,‘প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে তদবির করে বদলি হয়ে জেলা শহরে এসেছেন অনেক শিক্ষক। এ কারণে প্রতিবারই ওই সব এলাকায় বেশি শিক্ষক নিয়োগ দিতে হচ্ছে। এতে অনেক সময় কম যোগ্য শিক্ষকও নিতে হচ্ছে। অথচ জেলা শহরে যোগ্য প্রার্থীকেও নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’ বাংলাট্রিবিউন

পাঠকের মতামত: