ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট রেনিটিডিনে ক্যান্সারের উপাদান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ::
গ্যাস্ট্রিকের চিকিৎসায় বহুল সেবনকৃত রেনিটিডিন ট্যাবলেটে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদানের উপস্থিতির জেরে বিশ্ববাজার থেকে ওষুধটি তুলে নেয়ার ঘোষণা এসেছে। বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা রেনিটিডিন ট্যাবলেটে ক্যান্সারের উপাদানের উপস্থিতির বিষয়ে তদন্ত শুরুর পর বিশ্বের শীর্ষ ওষুধ প্রস্তুতকারী ব্রিটিশ সংস্থা গ্ল্যাক্সো স্মিথ ক্লাইন (জিএসকে) এ ঘোষণা দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার ভারতের ইংরেজি দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এক প্রতিবেদনে বলছে, ওষুধ প্রস্তুতকারী ব্রিটিশ সংস্থা গ্ল্যাক্সো স্মিথ ক্লাইন (জিএসকে) পূর্ব সতর্কতা হিসেবে গ্যাস্ট্রিকের জনপ্রিয় ট্যাবলেট রেনিটিডিন বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ভারতের বাজার থেকেও রেনিটিডিন গ্রুপের জ্যানটেক নামের এই ট্যাবলেট প্রত্যাহারের বিষয়ে নিশ্চিত করেছে জিএসকে।

পাকস্থলীয় এসিড উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে রাখতে রেনিটিডিন ওষুধ সেবন করা হয়। একেক দেশে একেক নামে এ ওষুধ বিক্রি হয়। গ্যাসের চিকিৎসায় বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় রেনিটিডিন।

ভারতের ফার্মাসিউটিক্যাল বাজার গবেষণা সংস্থা এআইওসিডি আওয়াকস ফার্মা ট্রাক বলছে, শুধু ভারতেই প্রায় ৬৮৮ কোটি রুপির ব্যবসা করছে রেনিটিডিন। রেনিটিডিন ছাড়াও একই ব্র্যান্ডের রেনট্যাক, রেনট্যাক-ওডি, আর-লক, রেনিটিনও গ্যাসের ট্যাবলেট হিসেবে বেশ জনপ্রিয়।

বিশ্বের বাজার থেকে ব্রিটিশ ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা গ্ল্যাক্সো স্মিথ ক্লাইন রেনিটিডিন তুলে নিলেও অন্যান্য সংস্থা গ্যাসের চিকিৎসার এই ওষুধ তুলে নিচ্ছে কি-না সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত পরিষ্কার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

ভারতের শীর্ষ ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই) কয়েক দিন আগে দেশটির সব রাজ্যের ওষুধ বিভাগের কাছে একটি চিঠি ইস্যু করে। ওই চিঠিতে রাজ্যের কোথাও এখনো রেনিটিডিন উৎপাদন হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহের পর ডিসিজিআইকে জানানোর নির্দেশ দেয়া হয়। ভারতের শীর্ষ এই ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থার চিঠি ইস্যুর পরপরই গ্ল্যাক্সো স্মিথ ক্লাইন বাজার থেকে রেনিটিডিন তুলে নেয়ার ঘোষণা দিলো।

চলতি মাসের শুরুর দিকে মার্কিন ফুড ও ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট রেনিটিডিন সেবনের ব্যাপারে সতর্কতা জারি করে। গত ১৩ সেপ্টেম্বরের ওই সতর্ক বার্তায় মার্কিন এফডিএ কর্তৃপক্ষ জানায়, রেনিটিডিনে পরিবেশ দূষণকারী হিসেবে পরিচিত এনডিএমএ’র স্বল্পমাত্রার উপস্থিতি রয়েছে। পরিবেশ দূষণকারী এ উপাদান অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য এবং পানিতেও পাওয়া যায়।

গত বছর মার্কিন ফুড ও ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কর্তৃপক্ষ ব্লাড প্রেসারের ওষুধ ভালসার্তান এবং লোসার্তানের ব্যাপারে তদন্ত করে। ব্লাড প্রেসারের এ দুই ওষুধে উচ্চ মাত্রায় এনডিএমএ’র উপস্থিতি পায় মার্কিন ফুড ও ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। পরে এই ওষুধ বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।

রেনিটিডিনে স্বল্পমাত্রায় এনডিএমএ পাওয়া যাওয়ায় এখনও উচ্চ সতর্কতা জারি করেনি মার্কিন ফুড ও ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন; তবে তদন্ত চলছে। এর মাঝেই গ্ল্যাক্সো স্মিথ ক্লাইন স্বেচ্ছায় তাদের এই ওষুধ বাজার থেকে প্রত্যাহার শুরু করেছে। রেনিটিডিনে যে দূষণকারী উপাদান পাওয়া গেছে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কিনা; সে বিষয়ে জানতে পরীক্ষার জন্য পূর্ব সতর্কতা হিসেবে বাজার থেকে ওষুধটি প্রত্যাহার করে নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে গ্ল্যাক্সো স্মিথ ক্লাইন।

চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে রেনিটিডিন ও রেনিটিডিন গ্রুপের অন্যান্য সব ট্যাবলেট স্বেচ্ছায় প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা স্যানডোজ। গ্ল্যাক্সো স্মিথ ক্লাইনের এক মুখপাত্র বলেছেন, নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্ববাজারে রেনিটিডিন উৎপাদন, বাজারজাত ও সরবরাহ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ইকোনমিকস টাইমস।

পাঠকের মতামত: