তুষার তুহিন, কক্সবাজার :: কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আইন অনুষদের সেই শিক্ষার্থী রাহী খুশি। বৃহস্পতিবার রাত ৯ টায় শহরের রুমালিয়ারছড়ার এডভোকেট মোস্তফা আহমদের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি তারাবানিয়ার ছড়ার চকরিয়া স্টিলের সামনে পৌঁছালে পেছন থেকে তাঁর মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে এক ছিনতাইকারী। চেষ্টা করে তার সাথে হাতব্যাগ ও মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার । তবে রাহীর সাহিসকতায় ও জনগনের সহযোগীতায় ছিনতাইকারী ব্যর্থ হয়। গনধোলাই খেয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারী ।
তবে সবার ভাগ্য রাহীর মত সুপ্রসন্ন নয়। বেশিরভাগ লোকজন দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারীর হামলায় আহত হওয়ার পাশাপাশি হারাচ্ছেন সর্বস্ব। ভয়ংকররূপের এসব ছিনতাইকারীদের নিয়ে আতংক বিরাজ করছে শহরবাসীর মনে। কিন্তু সদর থানা পুলিশ বলছে দু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও শহরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
রাহীর ঘটনার আগের দিন বুধবার ভোর সাড়ে ৫ টায় হোটেল সায়মন বীচের প্রোডাকশন বিভাগের দুই কর্মচারী কাদের ও সাত্তারকে ছিনতাইকারী ছুরিকাঘাত করে তাদের সর্বস্ব লুটে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে আহত সাত্তার বলেন, আমাদের বাড়ি বগুড়া। হোটেল সায়মনে চাকুরি করি। ঐচ্ছিক ছুটি নিয়ে দুজনেই বাড়ি যাচ্ছিলাম। বুধবার ভোরে দূরপাল্লার বাসে উঠার জন্য কলাতলী থেকে টমটম যোগে বাসটার্মিনাল যাচ্ছিলাম। কিন্তু আমাদের বহনকারী টমটম পুলিশ লাইনের কাছাকাছি পৌঁছালে একদল যুবক আমাদের টমটমের গতিরোধ করে। পরে কাদেরকে মারধর ও আমাকে ছুরিকাঘাত করে আমাদের কাছে থাকা ৩০ হাজার টাকা ও দুটি মোবাইল সেট ও কাপড় চোপড় নিয়ে পাহাড়ের দিকে চলে যায়। সেখান থেকে লোকজন আমাদের উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। বর্তমানে উন্নত চিকিৎসার জন্য আমরা চট্টগ্রামে আছি। এর আগের দিন রাতে ফুলবাগ সড়ক ও টেকপাড়ার মধ্যবর্তী হিন্দু পাড়ায় এক সিএনজি চালককে মারধর করে তার সর্বস্ব লুটে নেয় ছিনতাইকারীরা। তার কয়েকদিন আগে দিন দুপুরে সমিতি পাড়ার আওয়ামীলীগের অফিসের সামনে থেকে নিউমার্কেটের খোকন স্টোরের মালিক ভাই নেছারের হাতে ছুরিকাঘাত করে প্রায় সোয়া ৮ লাখ টাকা লুট করে ছিনতাইকারীরা।
প্রায়ই সময় শহরের বাসটার্মিনাল, বিডিআর ক্যাম্প, সাবমেরিন ক্যাবল গেইট, গরুর হালদা রাস্তার মাথা, রুমলিয়ারছড়া, তারাবনিয়ার ছড়া কবরস্থান রোড়, চকরিয়া ষ্টিল সংলগ্ন রোড়, বড় পুকুর রোড়, ম্যালেরিয়া অফিস রোড়, টেকপাড়া নূর ম্যানশনের সামনের গলি, বড় বাজার রাখাইন পাড়ার গলির মুখ, ভোলা বাবুর পেট্রোল পা¤্প, হাসপাতাল সড়ক, জলিলের দোকানের মোড়, জাম্বুর মোড়, কবিতা চত্বর, হোটেল প্রবালের মোড়, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র সংলগ্ন গলি, পুলিশ লাইন, চন্দ্রিমা উদ্যানের মুখ সহ কয়েকটি স্পটে ছিনতাইকারীদের কাছে সর্বস্ব হারাচ্ছে জনগন।
সরকারের একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়, শহরের বেশিরভাগ ছিনতাইকারীর ১৪ থেকে ২৪/২৫ বছর বয়সী। এদের অনেকেই মাদকাসক্ত। এরা দেশিয় ছুরি চাকু সহ নানা ধারালো অস্ত্র বহন করে। এদের একাংশ মোটর সাইকেলে চড়ে, একাংশ সিএনজি কিংবা টমটম ভাড়া নিয়ে বাকিরা বিভিন্ন গলির মুখে অবস্থান করে ছিনতাই করে। তবে ছিনতাইয়ের আগে এরা টার্গেট নির্ধারণ করে। এজন্য রয়েছে এদের রেকি টিম। ওই টিমের নির্দেশনা অনুযায়ী টার্গেটের উপর হামলা পড়ে ছিনতাইকারীরা। সর্ব্বোচ্চ ২/৩ মিনিটের মধ্যেই ছিনতাইকারীরা তাদের কাজ সেরে সটকে পড়ে ঘটনাস্থল থেকে। পরে আশেপাশের লোকজন ছিনতাইকারীদের চিনতে পারলেও পুলিশের কাছে তাদের পরিচয় দেয় না। এই কারণে ছিনতাইকারীরা বেশিরভাগ সময় আইনের হাত থেকে বেঁচে যায়।
এবিষয়ে ‘ হোটেল মোটেল মালিক সমিতির মুথপাত্র কলিম উল্লাহ বলেন, শহরের আইনশঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। পর্যটকরা ছিনতাইকারীদের হাতে ইদানিং সর্বস্ব হারাচ্ছে ।
আর ‘ আমরা কক্সবাজারবাসীর ’ সমন্বয়ক নাজিম উদ্দিন বলেন, পুলিশ ব্যস্ত সালিশি বৈঠক ও অভিযোগ নিয়ে। এই সুযোগে উঠতি তরুনরা বিপদগামী হচ্ছে। তাদের হাতে নিঃস্ব হচ্ছে স্থানীয়রা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগম মেহমানগন। এথেকে পরিত্রান না পেলে পর্যটন শহরের সম্মান ক্ষুন্ন হবে।
কক্সবাজার সদর থানার ইনস্পেক্টর (অপারেশন) মো. ইয়াছিন বলেন, সদর থানা পুলিশ চব্বিশ ঘন্টায় কক্সবাজারবাসীর জানমালের নিরাপত্তার জন্য কাজ করছে। গত জুন মাসে সদর থানা পুলিশ ৭ টি ডাকাতি প্রস্তুতি মামলায় ৫৫ জন ছিনতাইকারী ও ১৫ টি অস্ত্র মামলায় ৩৭ জনকে গ্রেফতার করেছে। একই সময়ে ৭ টি দেশীয় তৈরি এলজি, ২৩ রাউন্ড কার্র্তুজ, ৭ টি কিরিচ, ২৩টি ছোরা, ২৩ টি লোহার রড, ৪ টি ধামা দা, ২ টি হকিষ্টিক, ২৮ টি মুখোশ ও ৭ টি লাঠি উদ্ধার করেছে।
কক্সবাজার সদর থানার ওসি (তদন্ত) খায়রুরুজ্জামান বলেন, রাহীর ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যানে আমরা জানতে পারলেও অন্য ঘটনাগুলো আমাদের জানা নেই। আমরা চেষ্টা করছি সেই ছিনতাইকারীকে আটকের। অন্যান্য ঘটনাগুলো ক্ষেত্রে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, বর্ষা মৌসুমে দোকানপাঠ একটু তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়। লোকজনও বাড়ি ফিরে যায়। এই নীরবতার সুযোগ নিয়ে ছিনতাইকারীরা উপদ্রব তৈরির চেষ্টা করছে। তবে তেমনটি হওয়ার আর সম্ভাবনা নেই। আমাদের হাতে কিছু সিসিটিভি ফুটেজ এসেছে। সেখান থেকে আমরা ছিনতাইকারীদের চিহ্নিত করছি।
তিনি আরো বলেন, ছিনতাইকারীদের দমনে বিশেষ টিম অতি শ্রীঘই মাঠে নামবে। এর সুফলও জনগন পাবে।
প্রকাশ:
২০১৯-০৭-০৬ ১০:১৭:৫১
আপডেট:২০১৯-০৭-০৬ ১০:১৭:৫১
- চকরিয়া-পেকুয়া ও ঈদগাঁওতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা
- চকরিয়ায় ডাম্পার ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে ইজিবাইক চালক নিহত
- চকরিয়ায় স্কুল হোস্টেলের পাশে চলছে ১৭ দিন ধরে অবৈধ মেলা
- কুতুবদিয়ায় এলপি গ্যাস বিক্রেতাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা
- চকরিয়ায় রাতে মৎস্য ঘেরে বিষ ঢেলে ৩৫ লাখ টাকার মাছ নিধন
- জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে -ইউএনও রামু
- নাইক্ষংছড়িতে দিনব্যাপী নির্বাচনীয় প্রশিক্ষণ শুরু
- জলাশয়ে বহুতল মার্কেট নির্মাণের পায়তারা
- চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সাঈদীর গাড়িতে গুলিবর্ষণের অভিযোগ
- রামুতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ভেজাল বিরোধী অভিযান
- চকরিয়ায চিংড়ি ঘের জবরদখল ও জিজিয়া কর বন্ধ করতে হলে দোয়াত কলম মার্কায় ভোট দিন
- আ.লীগের সিনিয়র নেতারা মাঠে নামায় পাল্টে যাচ্ছে ভোটের হিসাব
- চকরিয়ায় রাতে মৎস্য ঘেরে বিষ ঢেলে ৩৫ লাখ টাকার মাছ নিধন
- চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড এর নতুন চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেজাউল করিম
- চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী সাঈদীর গাড়ী লক্ষ্য করে গুলি, প্রাণে রক্ষা
- জলাশয়ে বহুতল মার্কেট নির্মাণের পায়তারা
- চকরিয়ায় আচরণ বিধি লঙ্ঘনের দায়ে সাত প্রার্থীকে ৩২ হাজার টাকা জরিমানা
- নাইক্ষ্যংছড়িতে মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা
- চকরিয়ায় ডাম্পার ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে ইজিবাইক চালক নিহত
- চকরিয়ায় স্কুল হোস্টেলের পাশে চলছে ১৭ দিন ধরে অবৈধ মেলা
- ২১ বছর পর মায়ের মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ অনাথ শিশুকে বুঝিয়ে দিলেন ইঞ্জিনিয়ার সহিদুজ্জামান!
- চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সাঈদীর গাড়িতে গুলিবর্ষণের অভিযোগ
পাঠকের মতামত: