অনলাইন ডেস্ক :: প্রতিষেধক তৈরি এবং শিক্ষার্থীদের গবেষণার সুবিধার্থে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে দেশের একমাত্র সাপের অত্যাধুনিক গবেষণাগার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী এই গবেষণাগারে নানা প্রজাতির সাপ পালনের পাশাপাশি বিষ সংগ্রহ করা হবে। পরবর্তীতে বিষ থেকে তৈরি হবে সাপের বিষের প্রতিষেধক। বিদেশ থেকে আনা সাপের বিষের প্রতিষেধক তেমন কার্যকর না হওয়ায় এই গবেষনাগারের উদ্ভাবিত প্রতিষেধকই আগামীতে কাজে লাগানো হবে।
রুমের ভেতর থরে থরে সাজানো প্লাস্টিকের বক্স। সে বক্সের ভেতরে পেপার দিয়ে সাজানো কিছুটা আড়ালও করা হয়েছে। তার পাশে দেয়াল ঘিরে আয়না দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বড় বড় ছয়টি বিশেষ ধরণের খাচা। পুরো কক্ষ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। পাশাপাশি ভেন্টিলেটরের সহায়তায় পুরো কক্ষে নিয়ে আসা হয়েছে একদম প্রাকৃতিক পরিস্থিতি। অত্যাধুনিক এ কক্ষের বাসিন্দা পঞ্চাশ থেকে ষাটটি নানা প্রজাতির বিষধর সাপ। মূলত প্রতিষেধক তৈরি ও গবেষণার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে গড়ে তোলা হয়েছে ভেনম রিসার্চ সেন্টার নামক সাপ বিষয়ক এ গবেষণাগার।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. সেলিম জাহাঙ্গীর বলেন, সাপ কামড় দিলে যেসব ওষুধ দিতে হয় সেগুলো অ্যান্টি স্নেক ভেনম।
চলতি বছরের মার্চ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পথচলা শুরু করেছে এ গবেষণাগার। এখানে রয়েছে নানা প্রজাতির বিষধর সাপ। প্রাপ্তবয়স্ক আঠারোটি সাপ থেকে ইতোমধ্যে বিষের সংগ্রহ শুরু হয়েছে।
সচরাচর প্রাকৃতিক পরিবেশে সাপগুলো এমনিতে বেড়ে উঠলেও গবেষণাগারে সাপগুলোর ক্ষেত্রে পালন করতে হয় নানা নিয়ম শৃঙ্খলা। খাবারের সহজ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে পাশেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে আরেকটি গবেষণাগার। যেখানে উৎপাদন করা হয় সাপের খাবার হিসেবে ব্যবহৃত বিশেষ জাতের ইঁদুর।
গবেষণা ব্যবহারের জন্য যেমন প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে বিষধর সাপ সংগ্রহ করা হয়, তেমনি সংগৃহীত সাপ থেকে বাচ্চাও উৎপাদন করা হয়। এরই অংশ হিসেবে গত দু মাসে বিষধর গোখরা, কালকেউটের ডিম ফুটে বাচ্চা হয়েছে এ গবেষণাগারেই।
সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে প্রতিবছর বাংলাদেশের এক লাখেরও বেশি মানুষ সাপের কামড়ে দংশিত হয়। এর মাঝে অন্তত ছয় হাজার মানুষ মারা যায়। এই মৃত্যুহার কমিয়ে আনার জন্য অঞ্চলভিত্তিক সাপের গবেষণাগার গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের প্রথম সাপের খামার গড়ে তোলা হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে।
পাঠকের মতামত: