ঢাকা,বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪

টেকনাফ নয়াবাজারে রোহিঙ্গা ডাকাত নুর হাফেজ বাহিনীর অত্যাচারে ১২ পরিবার এলাকা ছাড়া

শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার ॥

টেকনাফের আরেক ত্রাস রোহিঙ্গা নুর হাফেজ। যিনি ইতোমধ্যে বড়ো ধরনের ড্কাাত হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। যিনি ডাকাত আবদুল হাকিমের সেকেন্ড ইন কমান্ড।এদেশীয় বাসিন্দাদের হুমকি, অত্যাচার আর অস্ত্রের মহড়ার কারণেই অন্তত ১০/১২ টি পরিবার হোয়াইক্যং নয়াবাজার এলাকা হতে ঘরছাড়া। অস্ত্রের ঝনঝনানি, গুলির শব্দে ঘুম ভাঙ্গছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। প্রতি রাতে কিংবা দিনে মুহুর্তের মধ্যে ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গা এনে অবৈধ অস্ত্রের মহড়া চালান। ক্যাম্প থেকে আনা রোহিঙ্গাদের দিয়েই সংগঠিত করা হচ্ছে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, ডাকাতি, দখলবাজি ও ইয়াবা ব্যবসা সহ বিভিন্ন অপরাধ।

এলাকাবাসি ও বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, গত ৮/১০ বছর পূর্বে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে এই নুর হাফেজ টেকনাফ হোয়াইক্যং ইউনিয়নের নয়াবাজার এলাকার সাবেক মেম্বার রমজান আলীর ছেলে গিয়াস উদ্দিনের কাছে আশ্রয় নেয়।

বর্তমানে গিয়াস উদ্দিন ও হোসেন আলীর ছেলে আবদুল মজিদের আশ্রয়ে রয়েছ। এই দুই ব্যক্তি ডাকাত নুর হাফেজকে দিয়ে দিয়ে বিভিন্ন অপরাধ করাচ্ছে এবং তাদের বিভিন্ন ভাবে স্বার্থমুলক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।

তার দাপটে স্থানীয় মানুষ অসহায়। গত কয়েক বছর ধরে এ ধারা অব্যাহত আছে। এই নয়াবাজার গ্রামে মানুষের ঘুম ভাঙ্গে গুলির শব্দে। প্রতিরাতেই মুহু মুহু গুলি বর্ষণ হয়।

সুশিল সমাজের অভিমত, নয়াবাজার সহ বিভিন্ন গ্রামে অস্ত্রধারীদের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে গেছে। প্রকাশ্য অস্ত্র দিয়ে গুলি বর্ষন করলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও ডাকাতদের গ্রেফতার করতে না পারায় সাধারণ জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এদিকে, ওই এলাকায় দফায় দফায় গুলি বর্ষন ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এলাকায় আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশংকায় গত সপ্তাহে হোয়াইক্যং ফাড়ির পুলিশ সারা রাত নয়াবাজার এলাকায় পাহারা বসিয়েছিল।

রোহিঙ্গাদের উচকে দিয়ে ক্যাম্পের পরিবেশ অস্থিতিশীল করা গভীর পায়তারার অংশ হিসেব অবৈধ ভারী অস্ত্রর মজুদও করেছে বলে স্থানীয়দের মাঝে সুস্পষ্ট তথ্য রেয়েছে।

সুত্রে আরো জানা গেছে, নুর হাফেজ রোহিঙ্গা হওয়ায় সে দেশের অনেক সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারী রোহিঙ্গা যুবকদেও সাথে তার পরিচয় ছিলো। তাদেও মধ্যে অনেকে নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্প সহ আশপাশ এলাকায় বসবাস করছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে সন্ত্রাসীদের ভাড়া করে এনে নয়াবাজার এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে যাচ্ছে এবং ক্যাম্প থেকে আনা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করা হচ্ছে নানা অপরাধে।

সুত্রে আরো জানা গেছে, রোহিঙ্গা নুর হাফেজ এমন কোন কাজ নেই সে এবং তার গ্রুপের রোহিঙ্গা সদস্যদের দিয়ে করাচ্ছে না। ইয়াবা ব্যবসা, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় , ডাকাতি, এলাকার ঊঠতি যুবকদেরকে দিয়ে বিভিন্ন স্থানে ইয়াবার চালান ও সরবরাহ দেয়া হচ্ছে।

একটি সুত্র জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা নুর হাফেজের ইয়াবা চালান নিয়ে বহনকারি যুবকেরা ইয়াবা সহ অনেকে আটক হয়েছে। তবে আটক হলেও সেখানে এই গডফাদার নুর হাফেজের নাম না বলেই গিয়াস উদ্দিন ও আবদুল মজিদের বিরোধীয় লোকজনকে ফাঁসাতে তাদের নাম ভাঙ্গানো হয়। এই সিন্ডিকেটে এ পর্যন্ত অন্তত ৫০ জন সদস্য দেশের বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা সহ আটক হয়ে জেলে রয়েছে। ওই গিয়াস উদ্দিনও ইতোপূর্বে ইয়াবা সহ আটক হন। তার বিুদ্ধে রয়েছে ইয়াবা আটক মামলা। কারাভোগ করেন এই গিয়াস উদ্দিন।

এলাকাবাসি সুত্রে জানা যায়, গিয়াস উদ্দিন ও আবদুল মজিদের বিরোধী লোকজন বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহী হয়ে পড়েছে। তারা স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারছে না।

নুর হাফেজ অন্যের জমিতে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছে। ইয়াবা ব্যবসা ও বিভিন্ন লোকজনের বিরোধীয় জমি দখল করে দেয়ার জন্য অস্ত্রের মজুদ বাড়িয়েছে। গিয়াস উদ্দিন আধিপত্য বিস্তার করে নয়াবাজার স্টেশনের পূর্ব পাশে প্রায় ৫০ একর লবণ ও চিংড়ি চাষীকে জিম্মি করে রেখেছে। তার ট্রাক্টর ও ট্রলি দিয়ে পরিবহণ ও চাষ করতে হয়। না করলে চলে নির্যাতরেন খড়গ। এধরনের অসংখ্য কৃষক নাজেহাল হয়েছে। রোহিঙ্গা নুর হাফেজের অস্ত্র মজুদ ও ইয়াবা চালানের জন্য রয়েছে বিস্তৃত নেটওয়ার্ক। বর্তমানে নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র মজুদ করেছে বলে একাধিক সুত্রে প্রকাশ। তার দাপটে স্থানীয় মানুষ অসহায়। গত কয়েক বছর ধরে এ ধারা অব্যাহত আছে। রোহিঙ্গাদের উচকে দিয়ে ক্যাম্পের পরিবেশ অস্থিতিশীল করা গভীর পায়তারার অংশ হিসেব অবৈধ ভারী অস্ত্রর মজুদও করেছে বলে স্থানীয়দের মাঝে সুস্পষ্ট তথ্য রেয়েছে।

বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, টেকনাফের আবদুল হাকিম ডাকাতের সেকেন্ড ইন কমান্ড হচ্ছে নুর হাফেজ। তাই আগ্নেয়াস্ত্রের জোগানে কোন প্রভাব পড়ে না। নুর হাফিজ গত বছর চকরিয়া এলাকা হতে এক শিশুকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করা কালে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হন। এব্যাপারে চকরিয়া থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করা হয়। চকরিয়া থানায় শিশু অপহরণ মামলা নং- ২৪১/১৫। এছাড়াও চকরিয়া থানায় মাদক আইনে মামলা নং-৩৮/১৮, চকরিয়া থানার পাসপোর্ট আইনে মামলা নং- ৪২২/১৫, কক্সবাজার সদর মডেল থানার মাদক আইনে মামলা নং-১৬/১৭, টেকনাফ থানায় পাসপোর্ট আইনে মামলা নং-৩৪/১৫, জিআর-২২২/১৫, টেকনাফ থানায় ডাকাতির প্রস্তুতি কালে আটক মামলা নং-৩৫/১৫,জিআর নং-৪২৩/১৫, টেকনাফ থানার মামলা নং-৩৬/১৫, জিআর নং-৪২৪/১৫, এছাড়াও বার্মাইয়া নুর হাফিজের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানা, চকরিয়া থানায় ও টেকনাফ সহ বিভিন্ন থানায় অস্ত্র, অপহরণ, মাদক (ইয়াবা), ডাকাতি ও পাসপোর্ট আইনে আরো অনেক মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তাকে দ্রুত গ্রেফতার করে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসি।

এদিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ কড়া সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন টেকনাফ থানার ওসি রনজিত কুমার বড়–য়া।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা নুর হাফেজ সহ তার অনুসারীদের গ্রেফতারে পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

পাঠকের মতামত: