ঢাকা,রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

দূর্নীতি প্রতিরোধে চকরিয়া উপজেলা কমিটির সাফল্য! মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার প্রকাশ্যে ঘুষ দাবী! দুদকের টনক নড়বে কি?

::: এম.আর মাহমুদ :::

প্রকাশ্যে ঘুষ দাবী করে চকরিয়ার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে। বর্তমান সময়ের জন্য সে একজন সিংহপুরুষ। ঘুষ দাবী প্রমাণ্য চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লেও জেলা উপজেলাসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোন মাথা ব্যথা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। কারণ ‘কার গোয়ালে কে দেবে ধুঁয়া।’ কক্সবাজার জেলার আলোচিত একটি উপজেলা চকরিয়া। দেশের সম্পদ ভান্ডার হিসেবে এ উপজেলার যথেষ্ট খ্যাতি আছে। এ উপজেলায় কর্মরত সমালোচিত, নিন্দিত একজন কর্মকর্তা ছাড়া বেশিরভাগ কর্মকর্তাই দক্ষ ও বিনয়ি। কিন্তু একজন আত্মস্বীকৃত ঘুষখোর কর্মকর্তার কারণে উপজেলা পরিষদের মানসম্মান অনেকটা ভুলন্টিত হয়েছে। কারণ একটি ফুল বাগানের সৌন্দর্য নষ্ট করতে একটি হুতুম পেঁচাই যথেষ্ট। হিন্দু সম্প্রদায়ের মতে পেঁচা অমঙ্গলের প্রতীক। কোন কারণে কোন হিন্দু পরিবারে পেঁচা ঢুকলে ‘গোঁসাই পূজা করতে হয়’। অনুরূপভাবে চকরিয়া উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে এ ধরণের একজন অসৎ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরী হয়ে পড়েছে বলে সচেতন মহলের অভিমত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া দৃশ্যটি দেখলে যে কেউ বলবে একজন সরকারী কর্মকর্তা কতটুকু ভ্রষ্ট হলে প্রকাশ্যে দাপঠের সাথে ঘুষ দাবী করতে পারে। শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় অবশ্য সহনীয় মাত্রায় ঘুষ খাওয়ার জন্য অছিয়ত করলেও উনার দপ্তরে অধঃস্তন এই কর্মকর্তা তা আমলে নিচ্ছে না। মূলতঃ চকরিয়া উপজেলার পূর্ব হারবাং উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে চকরিয়ার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আসলাম খাঁন প্রধান শিক্ষক ও স্কুলের প্রতিষ্ঠাতার কাছ থেকে ঘুষ দাবী করেন। এ সময় ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাকে এক হাজার টাকা দিতে চাইলে, এ পরিমাণ টাকা নিতে রাজি হয়নি অভিযুক্ত শিক্ষা কর্মকর্তা। পরে ওই কর্মকর্তা অতিরিক্ত টাকা দাবী করলে দু’জনের মধ্যে শিক্ষার্থী, অন্যান্য শিক্ষক ও অভিভাবকদের সামনে শুরু হয় বাঘযুদ্ধ। “যেন কেহ কারে নাহি ছাড়ে!” সমানে সমান। শিক্ষক মহোদয় বার বার বলতে শোনা গেছে, ঘুষ দেব না। শিক্ষা কর্মকর্তা দাপটের সাথে বলতে শোনা গেছে, ঘুষ দিতে হবে দিতে হবে দিতে হবে, এটা আমার পাওনা, এটা আমার সম্মানী, এটা সুদ। সারা দেশে দূর্নীতি প্রতিরোধ সপ্তাহ চলছে, এমন সময় এ ধরণের ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ করে ঘুষ দাবী করার পরও ওই কর্মকর্তা এখনও বহাল তবিয়তে ধাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এ যেন মদন নগর। আসলাম খাঁন নামের মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অত্যাচারে চকরিয়ার মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার প্রধানসহ শিক্ষকরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বিষয়টি প্রধান শিক্ষকরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নজরে আনলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কথায় আছে বিবস্ত্র ব্যক্তির লজ্জা থাকার কথা নয়। ইতিপূর্বেও চকরিয়া থেকে এসব কর্মকান্ডের কারণে একবার সাময়িক বরখাস্ত হয়ে অনেকদিন রাস্তায় রাস্তায় ঘুর ঘুর করেছে। ভাগ্যচক্রে ওই সাময়িক বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার হওয়ার পর নানা অপকর্মের জনক ওই শিক্ষা কর্মকর্তা পুনরায় চকরিয়ার মত একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলায় পুনঃ বহাল হয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে না বললে হয়না ‘কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয় না।’ যা চিরন্তন সত্য।

১৯৭১ সালের বাংলার দামাল ছেলেরা পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী “খান’দের তাড়িয়ে দেশ স্বাধীন করলেও পাকিস্তানি খান’দের প্রেতাত্তা আসলাম খাঁন এখনও চকরিয়ায় দাপিয়ে বেড়ানোর রহস্যটা খুঁজে বের করা দরকার। অনেকে মন্তব্য করতে শোনা গেছে, ‘রাজ দরবারে তার কোন মামা আছে, না হলে তার খুঁটির জোর কোথায়?’ কেউ তাকে সাইজ করতে পারছে না কেন? দূর্নীতি দমন কমিশনের দুই দুই বার গণশুনানী চকরিয়াতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনেক সুবচন শুনেছি, ইতিমধ্যে চকরিয়া উপজেলা দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি দূর্নীতি প্রতিরোধে বলিষ্ট ভূমিকা রাখায় চট্টগ্রাম বিভাগে ২য় স্থান অধিকার করে পুরস্কার পেয়েছেন। বিজ্ঞজনদের অভিমত, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার ঘুষ দাবীর ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হলেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না কেন? এতে মনে হচ্ছে দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)’ও কী তার কাছে অসহায়। সব কথার শেষ কথা স্কুল মাদ্রাসা চলাকালীন সময় শিক্ষকদের কাছে গিয়ে ওই কর্মকর্তা যেভাবে চিল্লাচিল্লি করে ঘুষ দাবী করছে, তা কি কোমলমতি শিক্ষার্থীরা শুনছে না? এতে ওইসব কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ঘুষ শব্দটির সাথে পরিচিত হচ্ছে স্কুল জীবনে। অতএব, এ ধরণের একজন ঘুষখোর কর্মকর্তাকে চকরিয়া থেকে তাড়ানোর ব্যবস্থা না করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিপদগামী হবে।

লেখক :  মাহমুদুর রহমান মাহমুদ, সাংবাদিক ও কলামিষ্ট।

পাঠকের মতামত: