ঢাকা,শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

জঙ্গী দমনে সফল হলেও ইয়াবা পাঁচার রোধে ব্যর্থতার রহস্য কি?

::: এম.আর মাহমুদ :::

গ্রামের সহজ-সরল এক কৃষক জানতে চাইলেন ভাই ইয়াবা কি? ইয়াবা সেবন করলে লাভ কি? না করলে ক্ষতি কি? অতঃপর অনিচ্ছা স্বত্বেও জবাব দিতে হয়েছে। বললাম, ইয়াবা খেলে মানুষ নেশাগ্রস্থ হয়, অভ্যস্থ হলে তিলে তিলে জীবন ধ্বংস হয়ে যায়। জবাবে ওই কৃষক অনেকটা সন্তুষ্ট হলেও বিরক্ত হয়ে বললেন, ইয়াবা রোধ করা যাচ্ছে না কেন? যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর, তা রোধ করার দায়িত্ব কার? গ্রামের সহজ-সরল এই কৃষকের জবাব শুনে আমি অনেকটা কিংকর্তব্য বিমূঢ়। এমন কিছু প্রশ্ন অনেকে করে যার জবাব দেয়া বড় কষ্টকর। যেমন, হঠাৎ এক ভদ্র লোক বলে বসলেন, দুধ কেন মা সাদা, মরিচ কেন ঝাল? আম কেন মা পাকলে পড়ে কিসে হয় লাল? এমন প্রশ্নের জবাব কিভাবে দেওয়া যায়? দেশে ইয়াবার মহাপ্লাবনে ভাসছে। বন্যার পানির মত সহজলভ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে ইয়াবা। বিজিবি, কোস্ট গার্ড, র‌্যাব, পুলিশসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা প্রতিদিনই কম বেশী ইয়াবার চালান জব্ধ করছে। তারপরও শহর থেকে অজপাড়া গ্রামেও হাত বাড়ালে ইয়াবা মিলছে। ফলে যুব সমাজ মাদকাসক্ত হয়ে তিলে তিলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। মিয়ানমার (বার্মা) সীমান্ত হয়ে ইযাবার চালান নানা কৌশলে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কোন কোন ক্ষেত্রে মালিকসহ আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে মালিকবিহীন ইয়াবার চালান জব্ধ করছে। তারপরও ইয়াবা পাচার রোধ করা যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না।

ইয়াবার কারণে যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আবার ইয়াবার বধন্যতায় কেউ কেউ রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছে। এক সময় যারা ছেড়া কাঁথায় ঘুমিয়েছে, তারা এখন আলিশান বাড়ি ও গাড়ির মালিক। এরই নাম কপাল। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে ইয়াবা পাঁচারের অভিযোগে প্রতিনিয়ত অনেকেই ধরা পড়ছে। কালে ভাদ্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তা থেকে সদস্যরাও ধরা পড়ছে। রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার একমাত্র অবলম্বন ইয়াবা। অনেক ভাল মানুষ সরবে নিরবে এ কাজে লিপ্ত হচ্ছে। আবার কিছু সংখ্যক ব্যক্তি ইয়াবা ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতেও ভুল করছে না। এভাবেও অনেক নিরীহ মানুষ কারাগারের চার দেয়ালে বন্ধী হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। বিচিত্র এ দেশ। সকালে পাহাড়ের পাশে দাঁড়ালে কোন না কোন বন্যপ্রাণীর ডাক শোনা যায়। আবার সমুদ্রের চরে দাঁড়ালে ঢেউয়ের গর্জন শোনে অনেকে অভিভূত হয়। ইয়াবা নিয়ে তেমন কোন মন্তব্যও করা যাচ্ছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অভিমত রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ না হলে পুরোপুরি ইয়াবা পাঁচার রোধ করা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে কষ্টকর হয়ে পড়বে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হয়ে অন্তত ১০ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজার জেলার উখিয়া, টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। প্রতিনিয়ত মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার আশ্বাস দিলেও এ পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও স্বদেশে ফিরিয়ে নেয়নি। রোহিঙ্গাদের বসতভিটা গুঁটিয়ে দিয়ে সেখানে আদর্শ বৌদ্ধ পল্লী করা হচ্ছে। বর্তমানে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের কারণে উখিয়া, টেকনাফের মানুষ সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। ক্যাম্পে আবদ্ধ রোহিঙ্গারা নানা কৌশলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। রোহিঙ্গা ও ইয়াবা পাঁচারের কারণে এখানকার শান্তিপ্রিয় মানুষগুলো সড়ক পথে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত অপমানজনক ভাবে দেহ তল্লাশীর শিকার হচ্ছে। যা বলাও যায় না, হজম করাও যায় না। স্বল্প সংখ্যক ইয়াবা পাঁচারকারীর কারণে আমজনতা ভোগান্তির শিকার হওয়া বড়ই বেদনাদায়ক। একজন মানুষের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপের শামিল। ইয়াবা কি ধ্র“পদী শাড়ী। যতই টানুক না কেন লম্বা হতে থাকবে? ইয়াবা পাঁচারকারীর হাত কি এতই লম্বা?

মিয়ানমার সীমান্তবর্তী উপজেলা টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন পয়েন্ট ও নৌপথে ইয়াবার চালান দেশে ঢুকছে তা পাগলও জানে। কারা ইয়াবা পাঁচারে জড়িত এবং আশ্রয় দাতা তাদের তালিকা কি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে নেই? আর থাকলে তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে কেন? আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তৎপরতায় জঙ্গী দমন সম্ভব হলে ইয়াবা পাঁচার রোধ না হওয়ার পেছনে যুক্তিটা কি? বিজ্ঞজনদের অভিমত আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক উদ্ধারকৃত ইয়াবার একটি অংশ সোর্সের মাধ্যমে বাজারজাত হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বলতে হয় “মাতবরের পায়ে কাঁদা, মাছ চুরির বিচার দিব কারে?”

পাঠকের মতামত: