ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশ সব রোহিঙ্গাকে ঠাঁই দিতে পারবে না- সজীব ওয়াজেদ জয়

বিদেশ ডেস্ক :
মিয়ানমারের রাখাইনে দেশটির সামরিক বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গার ঢল নামে কক্সবাজার-বান্দরবান সীমান্তে। গত বছরের ২৫ আগস্টের পর ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে আসেন বাংলাদেশে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে এখন আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। তাদের আশ্রয় ও খাবারের সংস্থান করেছে বাংলাদেশ। তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। তবে সেই প্রত্যাবাসন কতটা সফলভাবে সম্পন্ন হবে, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে অনেকের। তবে বাংলাদেশের পক্ষে এই বিপুল পরিমাণ রোহিঙ্গা নাগরিককে স্থায়ীভাবে আশ্রয় দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সন্তান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সংবাদভিত্তিক জাপানি সাময়িকি দ্য ডিপ্লোম্যাটে এক নিবন্ধে তিনি লিখেছেন এ বিষয়ে।
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর চলা নির্যাতনকে জাতিসংঘ ‘জাতিগত নিধনের প্রামাণ্য উদাহরণ’ হিসেবে অভিহিত করেছে উল্লেখ করে জয় লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে এবং তাদের সহায়তা করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। একইসঙ্গে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর জন্যও মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি আগামী দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ায় সম্মত হয়েছে দুই দেশ।’
সজীব ওয়াজেদ জানান, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে শরণার্থী শিবিরগুলোকে সম্প্রসারিত করা হয়েছে, সেগুলোতে বিভিন্ন ধরনের সেবার মান উন্নত করা হয়েছে। নতুন আশ্রয়কেন্দ্রও গড়ে তোলা হচ্ছে। সরকার রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে, রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন করছে। রোহিঙ্গাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে বাংলাদেশের এসব উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন বাংলাদেশ সফরে আসা পোপ ফ্রান্সিসসহ বিশ্বনেতারা।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প (ফাইল ছবি)তবে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবিরের মধ্যেই সীমিত রাখা ও তাদের স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ না দেওয়ার সমালোচনা করেছেন অনেকেই। এর জবাবে জয় বলেন, ‘এর মানে এই নয় যে রোহিঙ্গাদের প্রতি সরকারের আন্তরিকতার কোনও ঘাটতি আছে। বরং বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা বিবেচনায় নিয়েই এই নীতি নেওয়া হয়েছে।’
গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে সহিংসতার পর রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নিধনযজ্ঞের খবর গণমাধ্যমে উঠে এসেছে উল্লেখ করে জয় লিখেছেন, রাখাইনে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে। আইএস ও আল কায়েদার সঙ্গে আরসার যোগসূত্র থাকলেও তারা তা অস্বীকার করে এবং রোহিঙ্গাদের অধিকারের জন্য লড়াই করছে বলে দাবি করে থাকে। জয় লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের স্রোতের সঙ্গে সশস্ত্র আরসা সদস্যরাও ঢুকে পড়েছে। এতে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবিরগুলো উগ্রবাদের চারণভূমি হয়ে উঠতে পারে। এটাই বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য শঙ্কার বিষয়।’
সজীব ওয়াজেদ জয় এরপর বিশ্লেষক রিচার্ড হরসির বক্তব্য তুলে ধরেন। ফিন্যানশিয়াল টাইমসে হরসি লিখেছিলেন, যেকোনও দীর্ঘমেয়াদী অবিচার এমন সন্ত্রাসের জন্ম দেয়। আর এ ধরনের পরিস্থিতি উগ্রবাদীদের জন্য নতুন নতুন সদস্য সংগ্রহের জন্য সহায়ক। হরসি আরও লিখেছিলেন, রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে নতুন নতুন সদস্য খুঁজে পেতে আরসা সদস্যদের তেমন কোনও কষ্টই করতে হবে না।
রোহিঙ্গাদের ডিজিটাল নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে সারিবদ্ধ রোহিঙ্গারা (ফাইল ছবি)হরসির এই আশঙ্কার সঙ্গে সহমত পোষণ করে জয় লিখেছেন, ‘আর এ কারণেই রোহিঙ্গাদের স্বাধীনভাবে সারাদেশে চলাচল করতে দিতে পারে না বাংলাদেশ। মিয়ানমার সীমান্তে কিংবা বাংলাদেশের ভেতরেই সন্ত্রাসী হামলার জন্য উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলো নতুন সদস্য সংগ্রহের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়বে না— সেই নিশ্চয়তা তো সরকার দিতে পারে না।’
প্রধানমন্ত্রী এই উপদেষ্টা লিখেছেন, ‘এর আগে বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে শরণার্থীর মর্যাদা দিয়েছিল। কিন্তু ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে স্থায়ীভাবে আশ্রয় দিলে তা এক ধাক্কায় দেশের জনসংখ্যা এক শতাংশ বাড়িয়ে দেবে। এই সংখ্যাকে খুব বড় মনে না হলেও একই ধরনের জনসংখ্যার স্রোত অনেক দেশেই অস্থিতিশীলতার জন্ম দিয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা অর্থনৈতিক কাঠামোর সবচেয়ে নিচের স্তরে বসবাস করছেন, যেটা বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।’
২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এমন দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের অর্জনে বাংলাদেশ গর্ব করতে পারে উল্লেখ করে জয় লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের জিডিপি ৭ শতাংশ হলেও আমরা ধনী দেশ নই। এই দেশের পক্ষে রোহিঙ্গাদের স্বল্পমেয়াদে সহায়তা করা সম্ভব। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ করে দিলে তা দেশের অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলবে এবং দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে যে অগ্রগতি দেখিয়েছে, তা বাধাগ্রস্ত হবে।’
উখিয়ার বালুখালী এলাকায় রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী বসতি (ফাইল ছবি)ডিপ্লোম্যাটের নিবন্ধে সজীব ওয়াজেদ লিখেছেন, ‘রোহিঙ্গা ছাড়া বাংলাদেশে আর কেউই অভিবাসী হিসেবে আসতে চায় না। ফলে উন্নত দেশগুলোতে অভিবাসনের জন্য যে ব্যবস্থা রয়েছে, তা বাংলাদেশের নেই। তাছাড়া বাবা-মা বাংলাদেশি না হলে কিংবা বাংলাদেশি কাউকে বিয়ে না করলে এখানে নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ নেই। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে জন্ম নিলেও নাগরিকত্ব পাওয়ার কোনও নিশ্চয়তা নেই। এ কারণে, অভিবাসী কিংবা শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কোনও আইনি সুযোগ নেই।’
রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ কাজ করে যাবে উল্লেখ করে জয় লিখেছেন, ‘রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মতো দুইটি সাংঘর্ষিক বিষয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য সম্ভাব্য সবকিছুই করবে এবং তাদের প্রত্যাবাসনের সময়ও মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ করবে। কিন্তু একইসঙ্গে, বাংলাদেশি নাগরিকদের সুরক্ষাও দিতে হবে সরকারকেই।’

পাঠকের মতামত: