ঢাকা,শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪

ফটিকছড়িকে ছাড়িয়ে শীর্ষে সাতকানিয়া

অনলাইন ডেস্ক ::

চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলার মধ্যে জনশক্তি রপ্তানিতে শীর্ষে ওঠে এসেছে সাতকানিয়া। বিগত সাত বছর ধরে ফটিকছড়ি কর্মী রপ্তানিতে শীর্ষে থাকলেও এই প্রথম স্থানটি অর্জন করল সাতকানিয়া।
এর আগে কখনো শীর্ষ পাঁচের মধ্যেও ছিল না উপজেলাটি। ২০১০ সাল থেকে গত ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মী রপ্তানির পরিসংখ্যান থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

২০১৭ সালের চট্টগ্রাম জেলা থেকে মোট কর্মী রপ্তানির শীর্ষ তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ফটিকছড়ি আর তৃতীয় লোহাগাড়া। কর্মী রপ্তানিতে দীর্ঘ সময় ধরে চট্টগ্রামের মধ্যে ফটিকছড়ি উপজেলা শীর্ষে থাকার কথা বিভিন্ন সেমিনার ও আলোচনায় শোনা গেলেও সেটি তথ্যভিত্তিক ছিল না। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য থেকে এই প্রথম সেটি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর সহকারী পরিচালক জহিরুল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমি যোগদানের সময় থেকে দেখছি চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোর মধ্যে ফটিকছড়ি শীর্ষে। ২০১৭ সালে ফটিকছড়িকে ছাড়িয়ে সাতকানিয়া শীর্ষে ওঠে এল। ’

এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানিতে এখন শীর্ষে রয়েছে সৌদি আরব। সাতকানিয়া থেকে সৌদি আরবের কর্মী যাওয়ার হার সবচেয়ে বেশি হওয়াই শীর্ষে উঠার মূল কারণ।

এতদিন ফটিকছড়ি শীর্ষে থাকার কারণ হিসেবে জহিরুল আলম মজুমদার জানান, চট্টগ্রামের শ্রমিক রপ্তানিতে নিয়োজিত শীর্ষ রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর মালিকদের বেশির ভাগই ফটিকছড়ির বাসিন্দা। এতে স্বাভাবিকভাবেই সেই এলাকার লোকজন বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বেশি ছিল। সেই ধারাবাহিকতা এখনো রয়ে গেছে। এছাড়া ফটিকছড়িতে কৃষিজমির পরিমাণ কম এবং শিল্প এলাকাও নেই। ফলে লোকজনের বিদেশে যাওয়ার ঝোঁক চট্টগ্রামের অন্য এলাকার তুলনায় বেশি।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, এ বছরের ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলার ১৪ উপজেলার মধ্যে মোট ৬ হাজার ৯০০ কর্মী রপ্তানি করে শীর্ষে ওঠেছে সাতকানিয়া উপজেলা। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফটিকছড়ি থেকে গেছে প্রায় ৬ হাজার জন। তৃতীয় স্থানে থাকা লোহাগাড়া থেকে কর্মী গেছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার জন। লোহাগাড়া থেকেও কর্মী বেশি গেছেন সৌদি আরব।

মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ২০১৬ সালে শীর্ষে ছিল ফটিকছড়ি, দ্বিতীয় রাঙ্গুনিয়া, তৃতীয় সন্দ্বীপ। এর আগের বছর ফটিকছড়ি শীর্ষে, দ্বিতীয় রাঙ্গুনিয়া, তৃতীয় সন্দ্বীপ। ২০১৪ সালে শীর্ষে ফটিকছড়ি, এরপর রাঙ্গুনিয়া ও তৃতীয় হাটহাজারী। এর আগের বছর ফটিকছড়ি শীর্ষে, দ্বিতীয় রাঙ্গুনিয়া এবং তৃতীয় হাটহাজারী। ২০১২ সালে ফটিকছড়ি শীর্ষে, এরপর হাটহাজারী ও তৃতীয় রাঙ্গুনিয়া। ২০১১ সালেও ফটিকছড়ি শীর্ষে, দ্বিতীয় হাটহাজারী এবং তৃতীয় রাঙ্গুনিয়া। ২০১০ সালে অবশ্য হাটহাজারী শীর্ষে ছিল, এরপর ফটিকছড়ি ও রাউজান।

জনশক্তি রপ্তানিকারকরা বলছেন, চট্টগ্রাম থেকে সবচেয়ে বেশি কর্মী যায় সৌদি আরবে। এরপর সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যদেশগুলো। বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতে কর্মী রপ্তানি বন্ধ। ফলে এখন সৌদি আরবে যাওয়ার ঝোঁক বেশি চট্টগ্রামের লোকদের। এটি অব্যাহত থাকলে সাতকানিয়ার পরই দ্বিতীয় স্থানে ওঠে আসবে লোহাগাড়া।

জানতে চাইলে রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের সংগঠন বায়রা চট্টগ্রাম অঞ্চলের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান এমদাদ উল্লাহ বলেন, ‘ঐতিহ্যগতভাবে যে উপজেলার লোক আগে থেকে বিদেশ যেত তারাই তালিকার শীর্ষে থাকে। সেই ধারাবাহিকতায় ফটিকছড়ি এগিয়ে ছিল। সৌদি আরবের কারণে এবার সাতকানিয়া এগোলো। ’

তিনি জানান, চট্টগ্রামের সব উপজেলার লোক কিন্তু বিদেশ যায় না। আর্থিকভাবে সচ্ছল লোকেরা বিদেশ যেতে আগ্রহী নন। এজন্য অনেক উপজেলা কর্মী রপ্তানিতে পিছিয়ে আছে।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর হিসাবে, দেশের ৬৪ জেলাভিত্তিক কর্মী রপ্তানির হিসাবে ২০১০ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলা ছিল প্রথম, কর্মীর সংখ্যা ছিল সাড়ে ৪৮ হাজার জন। ২০১১ সালে তা বেড়ে সাড়ে ৭৩ হাজার জনে উন্নীত হয়। ২০১২ সালে তা একটু কমে সাড়ে ৭০ হাজার জনে নামে। মধ্যপ্রাচ্যে কর্মী রপ্তানিতে ধস নামলে ২০১৩ সালে জনশক্তি রপ্তানিতে হোঁচট খেয়ে দ্বিতীয়স্থানে নেমে আসে চট্টগ্রাম। সেই বছর চট্টগ্রাম থেকে কর্মী রপ্তানি প্রায় ৩৫ হাজার জনে নেমে আসে। যা এর আগের বছরের তুলনায় অর্ধেক। সেই সময় সাড়ে ৪৫ হাজার কর্মী রপ্তানি করে শীর্ষস্থান দখল করে কুমিল্লা জেলা। এরপর ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম দ্বিতীয়স্থানে অবস্থান করলেও কর্মী রপ্তানি আরো কমে ২৮ হাজার জনে নেমে আসে। সর্বশেষ ২০১৫ সালে রপ্তানি একটু বেড়ে সাড়ে ৩২ হাজার জনে উন্নীত হলেও আগের মতো দ্বিতীয় স্থানে ছিল। ২০১৬ সালে কর্মী রপ্তানি আরো বেড়ে ৪৫ হাজার ৭৮০ উন্নীত হয়। এ বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ৫৩ হাজার ২০০ কর্মী রপ্তানি হয়েছে চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলা থেকে।

পাঠকের মতামত: