ঢাকা,বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

খরস্রোতা মাতামুহুরী মৎস্যশূন্য হয়ে পড়ছে

নাব্যতা হ্রাস ও নদী তীরবর্তী জমিতে তামাক চাষ

আলীকদম (বান্দরবান) প্রতিনিধি :
এককালের খরস্রোতা মাতামুহুরী ক্রমশঃ মৎস্য শূন্য হয়ে পড়ছে। নাব্যতা হ্রাস, তীরবর্তী জমিতে বেপরোয়া তামাক চাষের বিরূপ প্রভাব পড়েছে মাতামুহুরী নদীতে। এখন আর আগের মতো মাছ ধরা পড়ে না জলের জালে। নদীর তীরে তামাক চাষে অনিয়ন্ত্রিত মাত্রায় ইউরিয়া ও কীটনাশক প্রয়োগের কারণেও প্রতিবছর এ নদীর মাছ নির্বংশ হতে চলেছে।
বাংলাদেশ-আরকান সীমান্তের আলীকদম উপজেলার দক্ষিণ-পূর্ব কোণ থেকে নির্গত খর¯্রােতা মাতামুহুরীকে ঘিরেই গড়ে উঠেছিল পাহাড়ি উপজেলা লামা ও আলীকদমের সমাজ-সভ্যতা। এককালে এই মাতামুহুরী নদীতে ভেসে চলতো বড় আকারের নৌকা ও সাপ্পান। কিন্তু সে চিত্র আর নেই। নদীর উজানে অব্যাহত বৃক্ষ নিধন, অবাধে পাথর আহরণ ও নদীর তীরে তামাক চাষের কারণে মাটি ক্ষয়ে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। মাতামুহুরী নদীর ভূমি ঢাল উত্তর-পশ্চিমমুখি। তাই এ জনপদের সভ্যতা সৃষ্টিকারীনি মাতামুহুরী নদী সর্পিল গতিতে ক্রমশ বয়ে মিশে গেছে বঙ্গোপসাগরে।
স্থানীয়রা জানান, এ অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকার সাথে মাতামুহুরী নদীর রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। এ নদীর পানি যেমন কৃষকের ফসলে শক্তি যোগায় তেমনি নানা প্রজাতির মাছ ধরে জেলেদের জীবন জীবিকার সহায়ক হতো। এক সময় জেলেরা সকালে মাছ ধরে বিকেলে বাজারে বিক্রি করে পরিবারের অন্ন যোগাতেন। এখন সে নদী জেলেশূন্য। সবই যেন এখন স্মৃতি।
মৎস্য কর্মকর্তাদের মতে, মাতামুহুরী নদীর দু’তীরে দীর্ঘ দু’দশকের ক্ষতিকর তামাক চাষের বিরূপ প্রভাব পড়ছে মাছের ওপর। তামাক ক্ষেতে অনিয়ন্ত্রিত মাত্রায় ইউরিয়া সার ও নানা ধরণের কীটনাশক ছিটানো হয়। এসব কীটনাশক পানির সাথে মিশে নদীতে পড়ে। এতে নদীর বিভিন্ন প্রজাতির মাছের প্রজনন ক্ষমতা লোপ পাচ্ছে এবং ছোট ছোট মাছগুলি মরে যাচ্ছে।
স্থানীয়দের মতে, তামাক চাষের ক্ষতিকর প্রভাব ছাড়াও মাতামুহুরীতে মৎস্য সম্পদের বিলুপ্তি ঘটছে একশ্রেণীর লোভী মৎস্য শিকারী ও উপজেলা মৎস্য অফিসের দায়িত্বহীনতার কারণে। মৎস্য বিভাগের দায়িত্ব অবহেলার কারণে জেলেরা নদীতে বিষ দিয়ে মাছ আহরণ করে। এতে নদীতে মাছ মরে ভেসে উঠে। বিশেষ করে বিষের কারণে চিংড়ি মাছ মারা পড়ে বেশী।
এছাড়াও নদীর যেখানে একটু গভীরতা আছে সেখানেই জেলেরা জঙ্গল কেটে ঘের তৈরি করে। কিছুদিন পর ঘেরের চারপাশে বিষ দিয়ে এক শ্রেণির পাহাড়ি গাছের ফলের রস ছিটিয়ে মাছ আহরণ করা হয়। প্রকাশ্যে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল দিয়েও এ নদীতে মাছ শিকার করা হয়।
জানতে চাইলে আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, মাতামুহুরী নদী তীরবর্তী এলাকায় তামাক চাষ বন্ধে এ বছর উদ্যোগ নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকার তিনটি ইউনিয়ন পরিষদকে মাইকিং করে নদীর তীরে তামাক চাষ বন্ধের পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। নদীর তীরে তামাক চাষের কারণে মৎস্য ভা-ারের ক্ষতির কথাও জানান তিনি। মাইকিং এর পরও নদীর তীরে তামাক চাষ বন্ধ না হলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তা কেটে ফেলার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: