ঢাকা,শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

চাচির পরকীয়া দেখে ফেলায় কিশোরীকে পুড়িয়ে হত্যা

অনলাইন ডেস্ক ::

মোবাইল চুরি নয়, প্রেমিকের সঙ্গে চাচির অপ্রীতিকর পরকীয়ার ঘটনা দেখে ফেলার কারণেই পঞ্চম শ্রেণির স্কুলছাত্রী আজিজাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বিষয়টি স্বীকার করেছেন আটক তমুজা বেগম।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট থানার ওসি মো. সৈয়দুজ্জামান। ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে আজিজার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করে চাচি ও তার লোকজন।

গতকাল সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের দগ্ধ স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়। নিহতের স্বজন ও পরিবারের অভিযোগ, মোবাইল চুরির অভিযোগে আজিজাকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে প্রথমে নির্যাতন এবং পরে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা খৈনকুট গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত স্কুলছাত্রী আজিজা খাতুন (১৩) খৈনকুট গ্রামের আবদুস সাত্তারের মেয়ে। সে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। তার বাবা সাত্তার স্থানীয় একটি মুরগির খামারে চাকরি করেন। এদিকে সন্তানকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় আজিজার চাচি বিউটি বেগমসহ সাতজনের বিরুদ্ধে শিবপুর থানায় মামলা করেছেন সাত্তার মিয়া।
মামলার অন্য আসামিরা হলো বিউটি বেগমের মা সানোয়ারা বেগম, তার ভাই রুবেল মিয়া ও তার ফুফুশাশুড়ি তমুজা বেগম। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। নিহতের ভাই সুজন ও মা রেহেনা বেগম জানান, শুক্রবার দুপুরে বাড়ির পার্শ্ববর্তী স্থানে গাছের পাতা কুড়ানোর সময় চাচি বিউটি বেগম ও তার ভাই রুবেল মিয়া একটি সিএনজিতে আজিজাকে তুলে নিয়ে যায়। পরে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাড়ির অদূরে একটি উঁচু টিলায় নিয়ে আজিজার শরীরে কেরোসিন ঢেলে দেয় তারা। পরে পাষণ্ডরা তার শরীরে দিয়াশলাই দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তার আর্তচিত্কারে এলাকার লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে আগুনে পুড়তে দেখে। পরে স্থানীয়রা পানি ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালায়। ততক্ষণে তার শরীরের অনেকখানি পুড়ে ঝলসে যায়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে রাত দেড়টার দিকে আজিজাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আনা হয়। নিহতের ভাই সুজন জানান, আট-দশ দিন আগে চাচি বিউটি বেগম তার একটি মোবাইল সেট চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন। চাচির মা ও অন্য স্বজনরা এর জন্য আজিজাকে সন্দেহ করেন। তারা হুমকি দেন, এক সপ্তাহের মধ্যে মোবাইল ফোন ফেরত না দিলে আজিজাকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হবে। গতকাল সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালের দগ্ধ স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে নরসিংদীতে শোকের ছায়া নেমে আসে। তোলপাড় শুরু হয় প্রশাসনে। ঘটনার রহস্য উন্মোচনে মাঠে নামে পুলিশ। এরই জের ধরে সন্দেহজনকভাবে বিউটি বেগমের ফুফুশাশুড়ি তমুজা বেগমকে আটক করে পুলিশ। তমুজা পুলিশের কাছে নেপথ্যের ঘটনা তুলে ধরেন। আটক তমুজা বেগম বলেন, তিন মাস আগে বিউটি বেগমের স্বামী মালোয়েশিয়া যান। স্বামী বিদেশে যাওয়ার পর বিউটি পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। প্রেমিকের সঙ্গে অবাধে মেলামেশা শুরু করেন তিনি। এরই মধ্যে বিউটির সঙ্গে তার প্রেমিকের অবৈধ মেলামেশার দৃশ্য দেখে ফেলে নিহত স্কুলছাত্রী আজিজা। এর পর থেকেই আজিজাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনা শুরু করেন বিউটি। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মোবাইল চুরির নাটক সাজানো হয়। ঘটনা পরিপূর্ণ করেতে পরিকল্পিতভাবে মোবাইল চুরির অপবাদ দেওয়া হয় আজিজার ওপর। সন্তান হারিয়ে পাগলপ্রায় আজিজার মা রেহেনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার মেয়ে চোর না। কুকীর্তি দেখে ফেলায় আজিজার পিছু নেয় বিউটি। কিন্তু সে যে আমার মেয়েকে পুড়িয়ে মারবে তা বুঝতে পারিনি। ’

পাঠকের মতামত: