এম.আর, মাহমুদ, চকরিয়া ::
যেদেশে আটার চাইতে কুড়া (ভুষি)’র দাম বেশি সেদেশের মানুষ শান্তিতে থাকবে কি ভাবে। হাই স্কুলের ছাত্র থাকাকালে আমার এক প্রিয় শিক্ষক রসিকতার সুরে অনেক কথাই বলতেন। এসব কথা শুনে ক্লাসের বেশিরভাগ ছাত্র হাসাহাসি করত। তবে পরিপক্ষতা ছিলনা বলে এসব কথার মর্ম উপলব্ধি করতে পারতামনা। এখন এসব কথা মর্মার্থ বুঝতে পেরে মনে মনে বলি আসলে আমার সেই প্রিয় শিক্ষকের কথাগুলো অত্যন্ত বাস্তব। যা নবীণ মাধবের ভাষায় বললে বলতে হয় কাঙ্গালের কথা বাসি হলেও ফলে। হাট-বাজারে গেলে বুঝা যায় সাধারণ মানুষের কি যে অবস্থা। কোথাও শান্তি নেই। সবজি থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম উর্ধ্বমুখী। চালের মুল্যের কথা বলতে নেই। সবক্ষেত্রে দ্রব্যমুল্যের উর্ধ্বগতি হলেও লাগাম টানার কেউ নেই। বেরসিক এক ব্যক্তি মন্তব্য করতে শুনা গেছে “দেশের শান্তির মা মারা গেছে” সেদিন স্ত্রীর কথায় বাসায় পালিত মুরগির জন্য কুড়া কিনতে গিয়াছিলাম বাজারে। রাইচমিল মালিকের কাছে জানতে চাইলাম প্রতি কেজি কুড়ার দাম কত। তিনি জবাব দিলেন ৩৬ টাকা। মুদির দোকানে গিয়ে আটার মুল্য জানতে চাইলে দোকানদার বলেন (খোলা) আটা প্রতি কেজি ২৮ টাকা। আর প্যাকেট জাত হলে ৩৪ টাকা। দোকানদারের কথায় কোন মন্তব্য না করে কুড়া ও আটা কিনে বাড়ী ফিরতে গিয়ে সেই প্রিয় শিক্ষকের কথা ৪৩ বছর পরে হলেও পুণরায় স্মরণ হয়েছে। তিনি বলতেন- যে দেশে ঘি আর সয়াবিন তেলের মুল্য সমান হয় সেদেশে কখনো মঙ্গল হয়না। অমঙ্গলই লেগে থাকে। এখন দেখি তার উল্টো। ঘাসের চাইতে ধানের দাম কম, আটার চাইতে কুড়ার দাম বেশি, কাপড়ের চাইতে দর্জির মজুরি বেশি, এ ধরণের বেশুমার প্রমাণ রয়েছে। সবক্ষেত্রেই চলছে অনুরূপ কায়দায়। কিছুদিন আগে প্রবীণ এক রসিক ব্যক্তি বলতে শুনেছি- মদন নগরের কেচ্ছা। মদন নগরের বৈশিষ্ট হচ্ছে সেখানে স্বর্ণ ও রূপার দাম সমান, বাশমতি চাল আর মোটা চালের মুল্যও সমান সেখানে গাধা ও ঘোড়ার দাম একই। তবে সেদেশের আরেকটি বিপরিত বৈশিষ্ট হচ্ছে চুর চুরি করতে গেলে মালিকের যদি ঘুম ভেঙ্গে যায়, গৃহ মালিকের ফাঁসি হয়। ১৯৮১ সালের দিকে টেলিভিশনে “হিরক রাজার দেশে” আলোচিত নাটকের কয়েকটি ডায়ালগ বার বার মনে পড়ে যায় ”আমি যে দিকেতে চাই শুধু অবাক বনে যাই। কোথাও কুল কিনারা খুজে নাহি পাই”। হিরক রাজার কাছে যখন প্রজারা গিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আলাপ করতেন তখন রাজা বলতেন “জানার কোন শেষ নাই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই”। প্রজারা যেসব কথা বলত রাজা সেসব কথার জবাব দিতেন। এক সময় প্রজারা বিদ্রোহ করে রাজাকে কুপোকাত করে বলেছিলেন ‘রসি ধরে মার টান, রাজা হবে খানখান’। বর্তমানে দেশে ক্রান্তিকাল চলছে। বিশেষ করে প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধরা ওই দেশের আরকানের রোহিঙ্গাদের নির্মম ভাবে নির্যাতন করে বাংলাদেশে তাড়িয়ে দিয়েছে। যার পরিমাণ সাড়ে ৫ লাখেরও বেশি। এ পরিমাণ রোহিঙ্গা উখিয়া, টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকার বিভিন্ন ক্যাম্পে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের ত্রাণ সহায়তা এখনো পর্যন্ত হৃদয়বান ব্যক্তি, সংস্থা ও আন্তর্জাতিক ভাবে অব্যাহত রেখেছে। তবে কয়দিন এভাবে অব্যাহত থাকে তা বলা যায়না। যদি ত্রাণ সহায়তা বন্ধ হয়ে যায় এসব রোহিঙ্গারা কি খাবে, কোথায় যাবে। হয়তো তারা আমাদের দেশের উপর বোঝা হয়ে দাড়াবে। এতে কোন সন্দেহ নেই। যদিও প্রধানমন্ত্রী মানবিক কারণে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের জালেমদের কবল থেকে রক্ষা করতে রোহিঙ্গাদের এদেশে আশ্রয় দিয়েছে। তাদের জন্য আশ্রয় শিবির করতে গিয়ে দেশের বিশাল বনভুমি চিরতরে বনহীন হয়ে পড়েছে। এছাড়া এসব রোহিঙ্গা নানা কৌশলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বিপদ আরো বাড়বে। রোহিঙ্গা আসার পর থেকে উখিয়া টেকনাফের লোকজন প্রকৃতপক্ষে সংখ্যালঘু হয়ে দড়িয়েছে। রোহিঙ্গারা জীবিকার তাড়নায় বিভিন্ন কাজে কর্মে জড়িয়ে পড়লে সেখানকার শ্রমজীবি লোকজন বেকার হয়ে পড়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যাবেনা। সব কথার শেষ কথা হচ্ছে- রাষ্ট্রীয় ভাবে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করা না হলে সামনে আমাদের জন্য অমঙ্গল বয়ে আনবে। উত্তরাঞ্চলে বন্যার পর সিংহভাগ মানুষ চরম অভাব অনটনে দিন কাটাচ্ছে। বিভিন্ন জেলার রাস্তাঘাট হতশ্রী হয়ে পড়েছে। যাতায়াত করতে মানুষের বিষণ কষ্ট হচ্ছে। তারপরও বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি। এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘাঁয়ের মত। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার যে আশ্বাস দিচ্ছে তা বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছেনা। কারণ উপারে প্রতিদিন বাড়িঘর জ্বলছে আর রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে ঢুকছে। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় মিয়ানমার স্বাধীন হওয়ার পর থেকে রোহিঙ্গাদের বারবার নির্যাতন করে এদেশে তাড়িয়েছে। ফিরিয়ে যাওয়ার সংখ্যা নিতান্তই কম। এক্ষেত্রে মিয়ানমারের শাসক গোষ্ঠির কর্মকান্ড দেখে বিয়ে পাগল এক ব্যক্তির কথাই বার বার মনে পড়ে “বিয়ে পাগল এক ব্যক্তি ৯৯টি বিয়ে করেছে আর নানা অজুহাতে তালাক দিয়েছে। ওই ব্যক্তি পূণরায় একটি বিয়ে করে ১০০টি পুর্ণ করতে গিয়ে পড়েছে বেকায়দায়। পুরনো কৌশলে বিবাহের প্রস্তাব দেয়া মেয়েটিকে বলল তোমাকে বিয়ে করব এক শর্তে। প্রতিদিন পাঠায় মরিচ পিশতে হবে তবে নিতম্ব নড়া চড়া করা যাবেনা। তখন মেয়েটি বিয়ে পাগল ব্যক্তির কু-মতলব বুঝতে পেরে পাল্টা শর্ত দিয়ে বসল তুমি পান খেতে পারবে, তবে দাড়ী নাড়তে পারবেনা। এভাবেই দু’জনের শর্ত মেনে বিয়ে করার পর বিয়ে পাগল ব্যক্তির ১০০ নম্বরের সংসারটি টিকে যায়। অনুরূপভাবে মিয়ানমারের সাথে আমাদের সরকার যথাযথ চুক্তি বা জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব ‘কফি আনান’ এর রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করলে রোহিঙ্গারা সারা জীবনই আমাদের উপর বুঝা হয়ে থাকবে।
পাঠকের মতামত: