ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

চাল দিচ্ছে নগদ টাকায়, রোহিঙ্গা দিচ্ছে ফ্রি “মেরেছ কলসিকানা, তাই বলি কি প্রেম দেব না?”

mr mahrohikএম.আর মাহমুদ :::

মিয়ানমারের সেনা, পুলিশ ও সীমান্তরক্ষীদের নির্মম নির্যাতন থেকে প্রাণের বাঁচার তাগিদে আরাকানের লাখ লাখ রোহিঙ্গা নর-নারী, শিশু-কিশোর, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী উখিয়া, টেকনাফে আশ্রয় নিচ্ছে। তাদের দুঃখ, দুর্দশা, আপনজন হারানোর ব্যথা, ধর্ষিতা নারীদের আর্তনাদ, বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়ার নিষ্ঠুর বর্ণনা শুনলে হৃদয়বান মানুষের চোখর পানি ধরে রাখা কষ্টকর। মিয়ানমার সরকারের লেলিয়ে দেয়া হানাদারদের বর্বরতা বিশ্বমানবতাকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় গ্রহণকারীদের মধ্যে ৮০ ভাগই নারী, শিশু-কিশোর ও অতি বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। শক্তি সমার্থবান যুবক ও মধ্যবয়সী লোকজন তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে তাদের বেশিরভাগই হত্যার শিকার হয়েছে অথবা গুম হয়েছে। প্রতিদিন নাফ নদীতে লাশের ভেলা ভাসছে। কাঁদা মাটিতেও গলিত ও অর্ধগলিত লাশের সন্ধান মিলছে। ক’দিন আগেও ওপারের রোহিঙ্গাদের সহায়-সম্পদ সবই ছিল। কিন্তু এপারে এসে তারা অনেকটা নিঃস্ব সহায়-সম্বলহীন ফকির। এক সময় এ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী চাষাবাদসহ নানা কাজকর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করত; পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে ছিল। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, তারা এখন ভিন দেশের উদ্বাস্তু ত্রাণ নির্ভর। পেলে খাচ্ছে, না পেলে ক্ষুধার তাড়নায় কাতরাচ্ছে। বিশ্বের বেশিরভাগ রাষ্ট্র মিয়ানমারের জঘন্য গণহত্যা বন্ধের ব্যাপারে সোচ্চার। জাতিসংঘের বৈঠকও চলছে। ৪০টি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতরা রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় নেয়া উদ্বাস্তুদের করুণ অবস্থা দেখার জন্য বুধবার উখিয়া ক্যাম্পে এসেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণও পাঠাচ্ছে। দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, শক্তিধর রাষ্ট্র চীন মিয়ানমারের গণহত্যার পক্ষে ভূমিকা ও সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। বিষয়টি যেন, বিশ্বমানবতার কফিনে শেষ পেরেকটি ঢুকিয়ে দেখার মত। ক’দিন আগে জাতীয় দৈনিক সমকালের প্রথম পাতায় সংবাদ শিরোনাম ছিল ‘কিল অল বার্ন অল’ তার অর্থ দাঁড়ায় সকল রোহিঙ্গাকে হত্যা ও তাদের সহায়-সম্পদ পুড়িয়ে দেয়া। মূলতঃ সংবাদটির সূত্র ছিল চীনের একটি প্রভাবশালী দৈনিকের সংবাদ থেকে। মিয়ানমারের সামরিক জান্তাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র পুণঃ উদ্ধারে জন্য সংগ্রামী নেত্রী অংসান সূচি আন্দোলন করতে গিয়ে দীর্ঘকাল গৃহবন্ধী অবস্থায় দিনাতিপাত করেছে। পরে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়ে গণরায়ে সে দেশের কর্ণধার হয়েছে। অথচ আজ রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্যাতন বন্ধের ব্যাপারে মুখ খুলছে না। কিন্তু মিয়ানমারে হানাদার বাহিনীর গণহত্যার পক্ষে কথা বলে যাচ্ছে। সূচি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেলেও ‘মগের মুল্লুক’ হিসেবে খ্যাত বার্মাইয়াদের আসল চরিত্র পাল্টায়নি। ফলে বর্বরতার মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলছে। বিশ্বের বেশিরভাগ রাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের নির্যাতন, হত্যা বন্ধের ব্যাপারে সোচ্চার হলেও মিয়ানমারের শাসকগোষ্ঠী যেন বধির ও অন্ধ। তারা কারো কথা শুনছে না এবং দেখছে না। তার কারণ শক্তিধর রাষ্ট্র চীনের সমর্থন। ১৯৭৮ সাল থেকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার (বার্মা)। তাদের এ ধারা কম বেশি অব্যাহতই ছিল। তবে প্রকট আকার ধারণ করেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে অদ্যাবধি। শুধুমাত্র ১৯ দিনে জাতিসংঘের পরিসংখ্যান মোতাবেক ৩ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা (মুসলমান) এদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ইতিপূর্বে বসতবাড়ি হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছে অন্ততঃ ১০ লাখেরও বেশি। সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক ছড়িয়ে ছিড়িয়ে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে বসবাস করে যাচ্ছে। শুধুমাত্র মুসলমান হওয়ার কারণে এ বিশাল বোঝা সরকার ও দেশের আম জনতা বহন করে যাচ্ছে। তুরষ্কের প্রেসিডেন্টের স্ত্রী ও সেদেশের ফার্স্ট লেডি রোহিঙ্গাদের করুণ চিত্র দেখতে এসে কেঁদেই গেলেন। পরে দেশের প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের করুণ অবস্থা দেখতে উখিয়া ক্যাম্পে গিয়েছে। তাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণে করেছে। রোহিঙ্গা নর-নারীদের নির্যাতনের করুণ কাহিনী শোনে কেঁদেছেন এবং ঘোষণা দিয়েছেন যতদিন প্রয়োজন পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা পরিবারগুলোকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় অন্ন সংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। ১৬ কোটি মানুষের দেশে ভিনদেশী ১৫ লাখ মানুষের অন্ন সংস্থানের ব্যবস্থা চাট্টিখানি কথা নয়। দেশের প্রধানমন্ত্রী সাহসিকতার প্রমাণ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের ভূমিকা আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য রোহিঙ্গাদের রক্তে যখন আরাকান রঞ্জিত নাফ নদীতে লাশের ভেলা ভাসছে, বাড়িছাড়া মানুষগুলো বানের পানিরমত করে উখিয়া টেকনাফ সিমান্ত হয়ে বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিচ্ছে, এমনি সময় আমাদের দেশের খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম সাহেব স্ব-স্ত্রীক রেঙ্গুনে চাল আমদানির চুক্তি সম্পাদন করতে গেছে। তিনি দাবী করেছেন চুক্তি হয়েছে। ৩ লাখ টন চাল আমদানির চুক্তি হয়েছে। তবে চাল দেবে ডিসেম্বর নাগাদ। এরই আগে সে দেশে থেকে নিঃস্ব অবস্থায় তাড়িয়ে দিয়েছে প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান। এদের অন্ন সংস্থানের ব্যবস্থা করতে গিয়ে দেশের অবস্থা হবে ত্রাহি মধুসূদন। এ প্রসঙ্গে বেরসিক এক ব্যক্তি শ্রী চৈতন্য দেবের একটি উক্তি বলেছেন, ‘মেরেছ কলসিকানা, তাই বলে কি প্রেম দেব না’। আরাকানের রোহিঙ্গাদের রক্তে ভেজা চাল না খেলে এদেশের মানুষ মরে যাবে তা নয়। তবে ভারতও ইতিমধ্যে চাল রপ্তানি করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। সব কথার শেষ কথা হচ্ছে, মিয়ানমার থেকে চাল আমদানি করতে গিয়ে যে টাকা সেদেশের কোষাগারে জমা হবে, ওই টাকা দিয়ে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিধন করবে। সুতরাং মিয়ানমার থেকে চাল আমদানির প্রয়োজন নাই বলে বেশিরভাগ মানুষের অভিমত।

পাঠকের মতামত: