ঢাকা,রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

রোহিঙ্গা মুসলিম নিধনের জন্যই কি অংসান সুচি শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছে!

এম.আর মাহমুদ ::roh

মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলমান শিশুসহ নর-নারীদের মৃত্যুর মিছিলকি বন্ধ হবেনা। সে দেশের শাসক গোষ্ঠি সংখ্যালঘু মুসলমানদের বারবার নির্যাতন চালিয়ে আরকান রাজ্যকে মুসলমান শূণ্য করার জন্য এই নির্মম হত্যাকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে বলে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলমানদের অভিমত। বারবার হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ ও বাড়িঘর জালিয়ে দেয়ার কারণে সহায়-সম্পদ ফেলে রোহিঙ্গারা প্রতিবেশি রাষ্ট্র বাংলাদেশের ভুখন্ডে অবৈধ ভাবে বসবাস করছে। ফলে বাংলাদেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। যা অস্বিকার করার কোন সুযোগ নেই। মিয়ানমারের মুসলমানেরা সারা দেশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করছে। শুধুমাত্র মানবিক কারণে এদেশের সরকার ও জনগণ তাদের প্রতি সদয় হয়ে আশ্রয় দিলেও দিনদিন তারা এদেশের ভোটার তালিকাভুক্ত হয়ে বনভুমিসহ খাস জমি দখল করে বসবাস করায় প্রতিনিয়ত দেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। রোহিঙ্গা নাগরিকদের ভোটার তালিকাভুক্ত না করতে এদেশের প্রকৃত নাগরিকরাও প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। ক’দিন আগে মিয়ানমারের মুসলমান নির্যাতনের যেসব প্রামাণ্য চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে উঠছে তা দেখলে যে কোন ধর্মাবলম্বীর বিবেক নাড়া দেবে। অথচ মিয়ানমারের জান্তাদের বিবেক বলতে কিছুই নেই বলে তারা এসব নির্মম অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। অত্যাচারের নিমর্মতা দেখে মনে হয় মিয়ানমার যেন এখনো মগের মুল্লুক রয়ে গেছে। মিয়ানমার সরকারের লেলিয়ে দেয়া সেনাবাহিনী, পুলিশ, সিমান্ত রক্ষীরা রোহিঙ্গা নর-নারীসহ শিশুদের হত্যা করছে, আর যুবতী মেয়েদের গণহারে ধর্ষণের পর প্রাণে মারছে। গ্রামের পর গ্রাম জালিয়ে দিচ্ছে। আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমান জনগোষ্ঠি। বাচার তাগিদে কিছু কিছু রোহিঙ্গা এদেশে আশ্রয় নিলেও বেশিরভাগ রোহিঙ্গা মুসলমান সেদেশের সিমান্তবর্তী এলাকায় বসতবাড়ী হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। গেল বছর ভারত থেকে নেমে আসা বানের পানিতে একটি হাতি ভেসে এসে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। হাতিটির নাম দেয়া হয়েছিল “বঙ্গ বাহাদুর”। যাকে বাছানোর জন্য দু’ দেশের বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা অনেক পরিশ্রম করেও সফলতা অর্জন করতে পারেনি। শুধুমাত্র ভারত ও বাংলাদেশ একটি বন্যপ্রাণী বাচানোর জন্য কতইযে কষ্ট করেছে তা বর্ণনা করারমত নয়। অথচ লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান নির্মম নির্যাতনের শিকার হওয়ার পরও বিশ্ব বিবেক আজ নিরব? বার্মার (মিয়ানমারের) সামরিক জান্তার হাত থেকে গণতন্ত্র পুণঃ উদ্ধারের জন্য মিয়ানমারের মানসকন্যা হিসেবে খ্যাত অংসান সুচি দীর্ঘ সময় গৃহবন্দি ছিল। অথচ সেই অংসান সুচি দেশের কর্ণদ্বার হয়েও রোহিঙ্গা নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। ইদানিং মিয়ানমার সরকার রোহঙ্গাদের বাঙ্গালী হিসেবে অবহিত করতেও ভুল করছেনা। গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করতে গিয়ে অংসান সুচি শান্তিতে নোবেল পুরষ্কারও পেয়েছে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস অংসান সুচির কপালে নোবেল পুরষ্কার জুটলেও হতভাগা রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্যাতন বন্ধ হয়নি। বিষয়টি যেন “যেই লাউ সেই কদু”র মত রয়ে গেছে। জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এদেশের আপামর জনগণ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে ৯ মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পার্শ্ববর্তী বন্ধু প্রতিম রাষ্ট্র ভারতের ভুখন্ডে বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষকে আশ্রয় দিতে কোন কৃপণতা করেনি। ফলে আজ আমরা স্বাধীন একটি রাষ্ট্র পেয়েছি। অনুরূপভাবে শুধুমাত্র মুসলিম নাগরিক হওয়ায় নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া দেশের জন্য কষ্ট ও ক্ষতিকর হলেও মানবিক কারণে উপেক্ষা করা যাচ্ছেনা। ওই দেশ থেকে পালিয়ে আসা লোকজনকে নির্ধারিত এলাকায় রেখে মানবিক সহায়তা দেয়া মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে সরকারের কর্তব্য রয়েছে। মজলুম নাগরিকদের আর্তনাদ ও রক্ত বৃথা যায়না, হয়তো একদিন এমন সময় আসবে মিয়ানমারের অঙ্গরাজ্য আরকান একদিন স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবেনা এমন কথাও কারো পক্ষে বলা সম্ভব নয়। কারণ, মিয়ানমারের বিতাড়িত মুসলমানেরা সংঘঠিত হতে বাধ্য হচ্ছে। তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। মরা মায়ের বুক আকড়িয়ে শিশুর আর্তনাদ যা আল্লাহর আর্শ কাপছে। ওই দেশের বৌদ্ধ ভান্তেরা লাঠি হাতে নিয়ে ছোট শিশুকে সেজদা দিতে বাধ্য করছে। এসবকি কোন ধর্মে আছে? জাতিসংঘের কর্তারা রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে দেশের প্রধানমন্ত্রী নিজেও নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের প্রতি সদয় হওয়ার সীমান্তরক্ষীদের নির্দেশনা দিয়েছে। কথা হচ্ছে জাতিসংঘ এ পর্যন্ত বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে কি পদক্ষেপ নিয়েছে তা আজ সকলেরই প্রশ্ন। এছাড়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মানবতা বিরুধী অপরাদের জন্য কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছেনা। এসব কিসের আলামত! মনে হয় আরকানের রোহিঙ্গারা মুসলমি হিসেবে জন্ম নেয়ায় তাদের অপরাধ। নাহয় নিজ দেশে তারা শাসক গোষ্ঠির হাতে এভাবে নির্যাতিত হচ্ছে কিভাবে। একবারওকি বিশ্ব বিবেক তার প্রতিবাদ করবেনা?

পাঠকের মতামত: