:: শহিদ রাসেল ::
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এর মাধ্যমে ‘অনলাইন বন্ধুত্বের’ হিড়িক পড়েছে। যেনো জাতি-ধর্ম-বর্ণ সবকিছুর মিশেল আবেদন। আর এই ধরনের বন্ধুত্বের নেই কোনো বিশ্বস্ততা কিংবা জবাবদিহিতা। ইচ্ছেমতো বার্তা প্রচার ও নিজস্ব মতামত প্রদানের সুযোগ থাকায় জীবনপ্রবাহ হয়ে পড়ছে ফেসবুকভিত্তিক। কর্মের বিভিন্ন ফরমেটগুলো ফেসবুকেই দিচ্ছে ডুব-সাঁতার। এর থেকে রেহাই মিলছেনা রাজনীতি, শিক্ষা ব্যবস্থা ও বিনোদন।
রাজপথে সাধারণের পক্ষে অধিকার আদায়ের আন্দোলন, জীবনমান উন্নয়নের জন্য শ্রমজীবী মানুষের পক্ষে মানববন্ধন-অনশন কিংবা জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালনে পবিত্রতম কর্মব্যস্ত ছুটে চলা ইত্যাদির ক্ষেত্রে ব্যক্তি তথা রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা নিজেদের জীবনের সবটুকু দিয়ে সংগ্রামরত থাকেন। এমন নির্লোভ ও আলোকিত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন রাজনীতিবিদের এখন বড়ই অভাব। তখনকার দিনে একজন রাজনীতিবিদ মানে একজন মহান সাধক, যিনি অপরের সুযোগ-সুবিধার জন্য, অপরের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য নিজের সবটুকু বিলিয়ে দিতেন। আমজনতা ও খেটে খাওয়া মানুষের জন্য তিনি কল্যাণমূলক কাজে ন্যস্ত থাকতেন। তাঁর ঘরের দরোজা কখনোই বন্ধ থাকতো না, রাত তিনটা-চারটাতেও ডাকার সাথে সাথে তিনি সাড়া দিতেন। এক একজন জনগণ মানে এক একটি মহামূল্যবান ভোট। জনগণ ও তাদের নেতাদের কথার দাম ছিল। অন্যদিকে, বর্তমান রাজনীতিতে নৈতিকতার কোনো চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়না। এখন রাজনীতিবিদরা ব্যক্তিগত কাজে কিংবা ব্যবসায়িক ফায়দা লুটতে জনগণের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ ও মালামালের কারচুপি করে, নিজের পেটে চালান করে কিংবা দেশ-বিদেশের ব্যাংকে রিজার্ভড রাখে। এখানে কর্মীদেরকে কেবল স্বপ্ন দেখানো হয়। নেতৃবৃন্দরা মুখস্ত বিদ্যায় কিংবা অন্যের বক্তব্য চুরি করে শ্রোতা-কর্মীদের হাততালি লুটেন। বক্তৃতা দানকালে কান্না করে, আবেগী হয়ে ক্ষণিক জনপ্রিয়তার কৌশল আয়ত্ত করেন। কেবল ফেসবুকে ফলোয়ার বাড়ানো, লাইক পাওয়া কিংবা লৌকিকতায় প্রচলিত ঢং’য়ের ¯্রােতে গা ভাসাতে নামমাত্র ভালো কাজ যেমন – দুর্গতদের জন্য খাবার, রাস্তা নির্মাণে শ্রমিক(!)এর দায়িত্বপালন, দান-খয়রাত করা প্রভৃতিতে নিজের দায়িত্ব সারেন। তাদেরকে প্রতিটি অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণপত্র না পাঠালে বা অতিথির আসনে না রাখলে তারা ক্যাডারবাহিনী দিয়ে সবকিছু প- করে দেন। একটা ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে এখনকার তথাকথিত রাজনীতিবিদরা নিজেদের দূর্বলতা ও অপারগতাকে ঢাকার চেষ্টা করেন। লোক-লজ্জ্বা কিংবা আইনের প্রতি কোনো ধরনের শ্রদ্ধাবোধ এদের অন্তরে নেই। স্বঘোষিত বিজয়ীর আসনে বসিয়ে এসব নেতৃবৃন্দ নিজেদেরকে নিজেরাই ‘বাহ্বা’ দিয়ে ‘শের’ উপাধিতে ভূষিত করেন। জনগণের প্রতি কোনো দায়িত্ববোধই তাদেরকে নাড়া দেয়না। সভ্য সমাজে এসব অচ্যুত রাজনীতিবিদদের কর্মকা- দেখে শিক্ষিত ও সচেতনমহলে তাদের জন্য করুণা ও অনুশোচনার বৃষ্টি বর্ষিত হয়। তবুও এসব ট্রেডিশনাল নেতাদের শিক্ষা হয়না।
তারুণ্য ও প্রজন্মশক্তিই আমাদের সম্পদ। আর এই সম্পদের সুরক্ষায় রাষ্ট্রব্যবস্থাকেই অভিভাবকের ভূমিকা নিতে হবে। তরুণসমাজকে তথ্য-প্রযুক্তিকে সমৃদ্ধ করতে হবে। পড়াশুনা শেষে তাদের জন্য চাকরির সুব্যবস্থাও করতে হবে। ধুমপান ও মাদকমুক্ত পরিবেশে তরুণপ্রজন্মকে তাদের মেধা ও সৃজনশীলতার চর্চা করার প্লাটফর্ম সৃষ্টি করতে হবে। কোনো ধরনের কোটা ব্যবস্থার জাঁতাকলে যেন পিষ্ট হতে না হয়, প্রত্যেকে যেনো স্বীয় যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ পায় সে দিকে রাষ্ট্রের সতর্কদৃষ্টি রাখতে হবে। তদবির ও ভুয়া সদনে যেনো চাকরি বাগিয়ে নিতে না পারে, ঘুষ দিয়ে চাকরি পাওয়ার সবপথ কঠোর হাতে দমন করতে হবে। উপজাতীয়, মহিলাকোটা, মুক্তিযোদ্ধা কোটা, প্রতিবন্ধী’সহ বিভিন্ন কোটার পরীক্ষার্থীর সাথে সাধারণের কোনো প্রতিযোগিতা হতে পারেনা, এই সিস্টেমের কারণে সাধারণের মনে নিয়োগ কমিটি ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণার জন্ম নেয়। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে আলোচ্য সমস্যাগুলোকে সমাধানের জন্য প্রচেষ্টা ও জনমত গড়ে তুলা দরকার।
রাজনীতি হোক মানুষের মুক্তির হাতিয়ার, স্বাধীনতার স্বাদ ও অধিকার আদায়ের বৈপ্লবিক পথ। রাজনীতি হোক রাজপথে, সুন্দর ও সবিচার প্রতিষ্ঠার জন্য। রাজনীতির নৈতিকভিত্তি হোক পাকাপোক্ত ও দৃঢ়তার প্রতীক। আমরা কর্মময় ও সুন্দরতম জীবন চাই। তোষামুদে ও অসহায় রাজনীতির চিত্রটির আমূল পরিবর্তন আসুক। তরুণপ্রজন্মকেই রাজনীতির হাল ধরতে হবে। একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার প্রধান হাতিয়ার হলো রাজনীতি। আর এই রাজনীতির গঠন, আলোচ্যসূচি, প্রচার-প্রসার ও আন্দোলনের ইস্যুগুলোকে হতে হবে জনগণের জন্য, জনগণের প্রয়োজনে। তাই আসুন আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য একটি গ্রহণযোগ্য ও সম্ভাবনাময় ইতিবাচক রাজনীতির সূচনায় স্ব স্ব অবস্থান থেকে আওয়াজ তুলি। সবার মঙ্গল হোক। ধর্ষক ও দস্যুপনার নিপাক যাক। সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হোক। লেখক : কবি, সাংবাদিক।
ংযধযরফৎঁংংবষ১৯৭১@মসধরষ.পড়স
পাঠকের মতামত: