ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

পার্বত্য লামা’র ফাইতং এর ইটভাটায় শিশুশ্রম অব্যাহত: প্রশাসনে জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা

মনির আহমদ ::EIT

বিদ্যালয়ে যাবার সময় হলেও ইটভাটায় দুর্বিসহ জীবন পার করছে এরা। লামা উপজেলার ফাইতংয়ের ইটভাটায় শিশুশ্রমের এ চিত্র ফুটে ওঠেছে। যাদের প্রত্যেকের বয়স ৮ বা ১০ বছরের নিচে। যদিও এ সকল শিশুদের বিদ্যালয়ে যাওয়ার উপযুক্ত সময়। এ সময়ে ইটভাটায় স্বল্প মজুরীতে কাক করছে ওরা।এরই মাধ্যমে এদের জীবনে নেমে এসেছে দুঃসহনীয় কালো অধ্যায়।
সূর্যের আলো তখনো উঠেনি। লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নে ৩২ টি ইটভাটায় কাজ শুরু করে ৮ থেকে ১০ বছর বয়সী ৪০% শিশুদের নিয়ে। প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ইট বহনের কাজ করতে বাধ্য করা হয় তাদের। মজুরি পায় মাত্র ১০০ টাকা। পেটের তাড়নায় প্রতিদিন  অন্তত আড়াইশত থেকে তিনশত   শিশু শ্রমিক  ইটভাটায় কাজ করছে।
অথচ আইন অনুযায়ী ১২ বছরের নিচের কোনো শিশু শ্রমিককে এ রকমের কাজে নেয়ার কথা নয়।
স্থানীয় সূত্র মতে, ফাইতং, আজিজ নগর ও পার্শ্ববর্তী চকরিয়া উপজেলা ও বিভিন্ন উপজেলা,  জেলা থেকে এ শিশুদের নিয়ে এসে এ ইট ভাটায় কাজ করাচ্ছে ১২ বছরের নিচের ২৫০ থেকে ৩০০শ’ত মেয়ে ও ছেলে শিশু শ্রমিক দিয়ে। তবে কয়েকজন ভাটা মালিকের দাবি বাবা-মায়ের সাথেই তারা ভাটায় আসে। তবে ভাটা গুলোর শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা মজুরি নিয়েই সেখানে কাজ করছে।
৩২ টি ইটভাটার একটি ইট ভাটায় কাজ করেন ৬ বছর শিশু মিরাজ। পেটের দায়ে বরিশাল থেকে মায়ের সাথে এসেছেন ইটের ভাটায় কাজ করতে। কথা হয় মিরাজের সাথে। সে বলে, ‘এই ভাটার মালিক আমাগো বাড়িতে গিয়ে মায়রে ২০ হাজার টাকা দাদন দিছে। দাদনের টাকা শুধানের জন্যই মায়ের সাথে আমিও চইল্যা আইছি, ভাটায় কাম করতে। কাম না করলে খামু কি?’
কি কাজ করো জানতে চাইলে মিরাজ বলে, ‘মাথায় কইরে রোইদের শুকনা ইট খোলায় তুলি। পুড়া অইলে ও গুলা আবার নিয়া সাজাইয়্যা রাখি। বড় কষ্টের কাম। অনেক সময়ে ইট মাথায় থাইক্যা পায়ে পইড়া ব্যথা পাই। কিন্তু সরদার তখন আর আমাগো দেহে না!’
এভাবেই বলছিলেন  নবাবগঞ্জ উপজেলার নয়নশ্রী ইউনিয়নের সাহেবগঞ্জ এলাকায় ইট ভাটার শ্রমিক এগার বছরের শিশু শান্ত। সে জানায়, কিশোরগঞ্জ জেলায় আমাগো বাড়ি। মায়ের সাথে ইট ভাটায় কাম করতে আইছি।
এ দৃশ্য ফাইতংয়ের প্রায় ইটভাটার। এসব ইটভাটায় গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি ইটভাটায় ১২ বছরের কম বয়সী এমন শিশুরা কাজ করছে। ইট তৈরি ও ইট টানার কাজ করে থাকে এসব শিশুরা। প্রত্যেক শিশু ২০ কেজি ওজনের সমান ছয়টা কাঁচা ইট মাথায় করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে।
সরজমিনে জানা যায়, যে শিশুরা ইটের ভাটায় কাজ করে, তাদের অধিকাংশই এসেছে চকরিয়া লোহাগাড়া, বাঁশখালী কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, বরিশাল, সাতক্ষীরা, সিলেট, হবিগঞ্জ, চাঁদপুর ও শরীয়তপুর থেকে। এই শিশু শ্রমিকদের অভিভাবকদের অনেককে ভাটার মালিকেরা দাদন দিয়েছেন। শিশুদের বাবা-মা ইটভাটার মালিকদের কাছ থেকে ছয় থেকে আট হাজার টাকা নিয়েছেন। এই টাকা নেওয়ার কারণে ইটের কারখানায় কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে এসব শিশুরা। কাজ শেষে এসব শিশুরা ভাটাতেই ঘুমায়। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেই শুরু হয় কাজ।

পাঠকের মতামত: