স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের ধারণা বর্জন করলে তার ‘পরিণতি বিপজ্জনক’ হতে পারে বলে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সাবধান করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব।
আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, “ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি সঙ্কট সমাধানে দুই-রাষ্ট্র নীতির অর্থাৎ স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের কোনো বিকল্প নেই।”
এর আগে ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বিনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক বৈঠকের পর বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি সংঘাতের সমাধান চান। কিন্তু সেটা দুই রাষ্ট্র নীতির ভিত্তিতেই হতে হবে এমন কোনো কথা নেই।”
তিনি বলেছেন- শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ‘যেকোনো ফর্মূলাকে’ তিনি সমর্থন করবেন।
ট্রাম্পের ওই বক্তব্যের পর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে যে, আমেরিকা স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের সমর্থনে তাদের দীর্ঘদিনের নীতি বর্জন করছে।
আমেরিকা পৃথক ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতি তাদের সমর্থন তুলে নিতে পারে- এমন আশঙ্কায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ফিলিস্তিন।
ইসরোয়েলি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ওয়াশিংটনে গতকালের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প একটা ‘দারুণ’ শান্তি চুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে তিনি বলেছেন, দুপক্ষকেই তার জন্য আপোষ করতে হবে।
“আমি দুই রাষ্ট্র এবং এক রাষ্ট্র দুটি সমাধানের কথাই বিবেচনা করছি। দুপক্ষ যেটা পছন্দ করবে আমি সেটাই পছন্দ করব,”- বলেন ট্রাম্প।
ইসরায়েল- ফিলিস্তিনের মধ্যে শেষ দফা শান্তি আলোচনা ভেঙে গিয়েছিল ২০১৪ সালে।
কয়েক দশক ধরে মধ্য প্রাচ্য শান্তি নীতির কেন্দ্রে রয়েছে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের ভাবনা।
ওয়াশিংটনে সংবাদ সম্মেলনের পর জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানান দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমধানের বিষয়টি যেভাবেই হোক ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে তারা যেন কাজ করে।
তিনি বলেন, “এই সঙ্কট সমাধানের অন্য কোনো বিকল্প নেই।”
নেতানিয়াহুকে সংবাদ সম্মেলনে দুই রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, মূল বিষয়টার ওপর তিনি নজর দিতে চান- কোনোভাবে সেটা বর্ণনা করা হচ্ছে তার ওপর নয়।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, সংঘাত দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানে তিনি অনড় থাকবেন।
তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মন্তব্যের সূত্র ধরে নেতানিয়াহুকে বসতি নির্মাণ আপাতত বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
গত মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতাগ্রহণের পর ইসরায়েল ওয়েস্ট ব্যাংক এবং পূর্ব জেরুসালেমে কয়েক হাজার নতুন বসতি নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক আইনে বসতি নির্মাণ বেআইনি। যদিও ইসরায়েল এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করে আসছে।
ওবামার সাবেক প্রশাসনের সঙ্গে গত আট বছর নানা টানাপোড়েনের পর ইসরোয়েলি সরকার এখন হোয়াইট হাউসে নতুন প্রশাসনের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের আশা করছে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়লাভের পর এটাই ছিল দুই নেতার প্রথম সামনা-সামনি বৈঠক।
দুই রাষ্ট্র গঠনের ভিত্তিতে সঙ্কট সমাধানের পক্ষে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায়ের জন্য ফ্রান্স জানুয়ারি মাসে একটি বহু দেশ-ভিত্তিক সম্মেলন আয়োজন করেছিল এবং আমেরিকার এখন কার্যত উল্টোসুরে কথা বলায় তারা অখুশি।
জাতিসংঘে ফ্রান্সের দূত ফ্রসোঁয়া দেলাতেয়ার বলেছেন, “দুই রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধানের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি এখন আগের থেকে অনেক জোরালো।”
এদিকে ইসরায়েলে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত হিসেবে ট্রাম্পের মনোনীত ব্যক্তি ডেভিড ফ্রিডম্যানকে নিয়ে আমেরিকার মধ্যে নানা বিতর্ক চলছে। ইসরায়েলে আমেরিকার সাবেক পাঁচজন রাষ্ট্রদূত তার ‘কট্টর ডানপন্থী অবস্থান’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
ফিলিস্তিনিরা চায় তাদের প্রতিশ্রুত আলাদা রাষ্ট্রের রাজধানী হবে পূর্ব জেরুসালেম। কিন্তু ইসরায়েলের দাবি হল, পুরো শহরটি তাদের অবিভক্ত রাজধানী হিসেবে থাকবে। -বিবিসি।
পাঠকের মতামত: