টেকনাফ উপজেলার দুইটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট। গতকাল ৩১ জানুয়ারী সকাল সাড়ে ১০ টায় হ্নীলা ইউনিয়নের অনিবন্ধিত লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও নয়াপাড়া রেজিষ্টার্ড শরণার্থী ক্যা¤প পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে মার্কিন রাষ্ট্রদুতকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা নির্যাতিত অবহেলিত রোহিঙ্গারা মিয়ানমার সরকারী বাহিনীর লাগাতার জুলুম-নির্যাতন ও লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরেন।
সরেজমিনে গিয়ে আরো জানা যায়, ৩১ জানুয়ারী মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া বার্নিকাটের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল টেকনাফের লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এসে এনজিও সংস্থা আইওএম (আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা) অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে মতবিনিময় করেন। এরপর তিনি ক্যাম্পের বস্তি গুলো ঘুরে-ফিরে দেখেন এবং নির্যাতনের শিকার হয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা নতুন রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলেন। এরপর আইওএম অফিসে মিয়ানমার সরকারী বাহিনীর লাগাতার জুলুম-নির্যাতনে স্বামী হারা, স্ত্রী হারা, শিশু হারা, সব কিছু হারিয়ে যে সমস্ত রোহিঙ্গারা এই ক্যাম্পে এসে অবস্থান করেছেন সেই সমস্ত নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের সাথেও তিনি দীর্ঘক্ষণ ধরে কথা বলেন। এবং তাদের সেই অমানবিক নির্যাতনের বর্ণনা শুনে দু:খ প্রকাশ করেন। এই বৈঠকে নির্যাতিত ১০ জন নারী ও ১০ জন পুরুষ উপস্থিত ছিলেন। মার্কিন রাষ্ট্রদুত এই সময় তাদেরকে মিয়ানমারে ফিরে যাবে কিনা জানতে চান, সেই প্রশ্নের উত্তরে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা বলেন, আমাদের বাপ-দাদার বিটে মাঠির বসত-বাড়ির ক্ষতি-পূরণ প্রদানসহ আমাদেরকে নিজের নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। তার পাশাপাশি তাদের জুলুম, নির্যাতন বন্ধ করে নিরাপদ পরিবেশে বাচাঁর মত বাচঁতে দিলে আমরা স্বদেশে ফিরে যাব। মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া বার্নিকাটের সাথে সফর সঙ্গী আরো উপস্থিত ছিলেন আইওএম বাংলাদেশ অফিস প্রধান পেপে কেবি ছিদ্দিকী, টেকনাফ ২বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল আবুজার আল জাহিদ,উপাধিনায়ক মেজর আবু রাসেল ছিদ্দিকী,টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শফিউল আলমসহ টেকনাফ উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা। পরিশেষে মার্কিন রাষ্ট্রদুত উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে এক প্রেস ব্রিফিং করে জানান, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে থাকবে। তবে রোহিঙ্গাদের সমস্যা গুলো স্থায়ী ভাবে নিরসন করতে হলে মিয়ানমার সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। কারন তাদের সমস্যা তাদেরকে নিরসন করতে হবে। এরপর তিনি দুপুর দেড় টায় নয়াপাড়া রেজিষ্টার্ড শরণার্থী ক্যা¤প পরিদর্শনে গিয়ে ক্যাম্পে থাকা বিভিন্ন স্তরের প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন। প্রায় ঘন্টাব্যাপী এই বৈঠকের পর উক্ত ক্যম্পের শরণার্থীদের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শনে যাওয়ার পথে প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানানো হয়। তার পাশাপাশি ক্ষুদ্ধ রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুরা বিভিন্ন প্রকার দাবি ও ব্যানার, ফেস্টুন মিয়ানমারের নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন। মিয়ানমারে চলমান মানবতা বিরোধী কর্মকান্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে এসব বন্ধ করা না হলে মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানান। পরিদর্শন শেষে বিকাল ৪টায় নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যা¤প থেকে প্রতিনিধি দল ত্যাগ করেন।
পাঠকের মতামত: