ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

আগের রূপে ফিরছে মানিকপুর তিন গম্বুজ মসজিদ

02ae2আহমদ গিয়াস, কক্সবাজার::

কক্সবাজার জেলার এক অনন্য স্থাপত্যশৈলী সমৃদ্ধ শতাব্দী প্রাচীন মসজিদ মানিকপুর তিন গম্ভুজ মসজিদের সৌন্দর্য বর্ধন করা হচ্ছে। এলিট পেইন্ট গ্রুপ এ কাজে সহায়তা করছে। জানা যায়, তিনটি গম্বুজ ও বারটি খিলান নিয়ে গড়া চকরিয়ার মানিকপুর মসজিদটি এক অনন্য স্থাপত্যশৈলী ও ঐতিহাসিক শিল্পমূল্য সমৃদ্ধ। মানিকপুর বাজার সংলগ্ন মাতামুহুরী নদীর পূর্বতীরে অবস্থিত এ মসজিদটি শতাব্দি পার করে এখনও সগর্বে টিকে আছে। নদী ও পাহাড়ের নৈসর্গিক পরিবেশে অবস্থিত এ মসজিদটি কক্সবাজার জেলার পর্যটনেরও সম্পদ। মসজিদটি দেখতে প্রতিবছর কয়েক হাজার পর্যটক এখানে বেড়াতে আসে। প্রাচীনত্ব ও বিশেষ স্থাপত্যসমৃদ্ধ হওয়ায় এ মসজিদটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ঐতিহ্যেরও অংশ হতে পারে বলে মনে করেন ইতিহাস গবেষকরা। তাদের মতে, কক্সবাজার জেলায় এই ধরনের স্থাপত্যমূল্য সমৃদ্ধ মসজিদ দ্বিতীয়টি নেই।

সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে এ মসজিদকে ‘জাতীয় ঐতিহ্য’ ঘোষণা করে সংরক্ষণ ও সংস্কারের দাবিও ওঠেছে। এরই প্রেক্ষিতে এলিট পেইন্ট গ্রুপ সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে মসজিদটির সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় রঙ বিনামূল্যে প্রদান করেছে। চলতি বছরের মে মাসে মসজিদটির সৌন্দর্য বর্ধন কার্যক্রম উদ্বোধন করা হলেও এখনও রঙ করার কাজ শেষ করা হয়নি। উপরন্তু গত ২ মাস ধরে রঙ করার কাজ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেনমাহবুবুর রহমান চৌধুরী নামের স্থানীয় এক শিল্পীকে মসজিদ রঙ করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কিন্তু অনুকূল আবহাওয়া সত্ত্বেও অজ্ঞাত কারণে কাজ বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় চারুশিল্পী মাহবুবুর রহমান চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন– ‘বৃষ্টির কারণে’ কাজে বিলম্ব ঘটছে।

গত এক মাসে মানিকপুরে বৃষ্টি হয়েছে কীনা প্রশ্ন করলে তিনি সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেনখুব শীঘ্রই কাজ শুরু করা হবে।

স্থানীয় ইতিহাসবিদদের সূত্রে জানা গেছে, এলাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও আধ্যাত্মিক সাধক পুরুষ ফজল কিউক চৌধুরী উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে এ মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। মসজিদ সংলগ্ন গোরস্থানে তার কবরও রয়েছে। তিন গম্বুজ ও বারটি মিনার বা খিলান সম্বলিত এ মসজিদটি মাতামুহুরী নদীর তীরের নৈসর্গিক সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ১৩২১ হিজরী সালে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। মসজিদ নির্মাণকালে ছাদ থেকে পড়ে নির্মাণ শ্রমিক এক যুবক মারা যান। মসজিদ সংলগ্ন গোরস্থানে অবস্থিত তার কবরে মৃত্যুর সাল ১৩২১ উলেহ্মখ করা হয়েছে। যা ইংরেজি ১৮৯০ সালের দিকে হবে বলে মনে করেন এলাকার বয়সোর্ধরা। তবে কেউ কেউ ১৩২১ সালকে বাংলা সন বলেও মনে করেন। মসজিদের কোন অংশে প্রতিষ্ঠার সন তারিখ উল্লেখ নেই। সংস্কারের কারণে তা মুছে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মাহবুবুল হক বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশে গম্বুজ, মিনার, খিলানসহ বিভিন্ন ধরনের কারুকার্য খচিত করে মসজিদ নির্মাণ করার প্রচলন শুরু হয় মোঘল আমলে। এরই ধারাবাহিকতায় মোঘল পরবর্তী সময়েও একই স্থাপত্য অনুসরণ করে মসজিদ নির্মাণ অব্যাহত ছিল। যেগুলো ছিল স্থাপত্যের দিক দিয়ে খুবই আকর্ষণীয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সংস্কার ও পূননির্মাণকালে এ মসজিদগুলোর আদল পরিবর্তন করা হয়। ফলে এ ধরনের স্থাপত্যে গড়া মসজিদ এখন আর বেশি নেই।

পাঠকের মতামত: