ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতাদের বাসায় ছাত্রলীগের তাণ্ডব

sl-hamচট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি :::

শনিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে ক্যাম্পাসের আবদুর রব হলের সামনে মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে জখম করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি তাইফুল হককে। এর চার ঘণ্টা পর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুই সহসভাপতি মো. মামুন ও মো. নাজিম, পাঠাগার সম্পাদক আবু বকর, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর বাসায় তাণ্ডব চালানো হয়েছে। তাঁদের সবার বাসা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকায়। অভিযোগ উঠেছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতির অনুসারী শতাধিক নেতা-কর্মী এসব ঘটনায় জড়িত।
চার ছাত্রনেতার বাড়িতে রড, লাঠি ও দেশি অস্ত্র নিয়ে যারা হামলা চালিয়েছে, তারা ওই এলাকার আরও চারটি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া গতকাল রোববার বিকেল সোয়া পাঁচটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের সামনে এক দোকানদারকে কুপিয়ে আহত করা হয়। খেলার মাঠের পাশেই দোকানটি। দোকানির নাম মোহাম্মদ নাছির। এ ঘটনাতেও ছাত্রলীগের সভাপতিপক্ষের নেতা-কর্মীরা জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।
নাছিরকে চট্টগ্রাম বিশ্বিবদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে। কর্তব্যরত চিকিৎসক আইরিন পারভিন প্রথম আলোকে বলেন, নাছিরের মাথায় দুটি কোপের দাগ রয়েছে। মাথার দুপাশে সেলাই করা হয়েছে।
নাছির প্রথম আলোকে বলেন, ‘সভাপতিপক্ষের নেতারা আমার দোকানে এসে ছাত্রলীগের সহসভাপতি মামুন কোথায় আছে জানতে চায়। আমি জানি না বললে তারা আমাকে রামদা দিয়ে কোপায় ও রড দিয়ে মারতে থাকে।’
এর আগে শনিবার দিবাগত রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকায় দিয়াজের বাসায় হামলা চালানো হয়। তাঁর মা জাহেদ আমীন চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়ের জননেত্রী শেখ হাসিনা হল প্রশাসনের কর্মকর্তা। তিনি অভিযোগ করেন, ‘ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপুর নেতৃত্বে প্রায় এক শ যুবক আমার বাসায় ডাকাতি করে। তারা আমার ১০ ভরি স্বর্ণ, আমার ছেলের ল্যাপটপ ও মোবাইল নিয়ে গেছে। ঘরের টিভি, ফ্রিজ, আলমারি, শোকেস থেকে শুরু করে সবকিছু ভেঙে ফেলেছে। আমার সাত থেকে আট লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’
গতকাল বিকেলে ওই বাসায় গিয়ে দেখা যায়, ঘরের টেলিভিশন ভাঙা, ফ্রিজ উল্টে পড়ে আছে। হামলাকারীরা বাসার শৌচাগারের কমোডও ভেঙে ফেলেছে।
খেলার মাঠের পাশে স্টাফ কোয়ার্টারে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আরেক সহসভাপতি মো. মামুনের বাসা। তাঁর বাসায়ও রাতে হামলা হয়। তাঁর বোন ফারজানা আক্তার বলেন, ‘ছাত্রলীগের সভাপতিপক্ষের ছেলেরা এসে মামুন কোথায় জানতে চায়। আর বলতে থাকে মামুনকে মেরে ফেলব। এরপর ঘরের জিনিসপত্র তছনছ করে। তারা মায়ের ৮ ভরি স্বর্ণ, ঘরের ল্যাপটপ নিয়ে গেছে।’
ছাত্রলীগের সহসভাপতি মো. মামুন বলেন, ‘ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপু শিবিরের এজেন্ট। তার নেতৃত্বে আমার বাসায় ডাকাতি হয়েছে।’
আরেক সহসভাপতি মো. নাজিম উদ্দিনের বাসায় হামলা চালানো হয় শনিবার দিবাগত রাত পৌনে তিনটায়। তাঁর বাসা ২ নম্বর গেট এলাকার কাছে শোভা কলোনিতে। তাঁর বাবা মজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। তিনি বলেন, রাত পৌনে তিনটার দিকে দেড় শ থেকে দুই শ ছাত্র বাসায় এসে নাজিম কোথায়, নাজিম কোথায় বলে চিৎকার করতে থাকে। একপর্যায়ে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে জিনিসপত্র ভাঙতে থাকে। আতঙ্কে তাঁরা একটি কক্ষে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে লুকিয়ে থাকেন। আধা ঘণ্টা তাণ্ড চালিয়ে তারা চলে যায়।
পাঠাগার সম্পাদক আবু বকর তোহার বাসায় রাত দেড়টার দিকে হামলা চালানো হয়। তাঁর বাসা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকা-সংলগ্ন শাহি কলোনিতে। গতকাল বিকেল পৌনে চারটায় তাঁর বাসায় গিয়ে দরজা, জানালা ভাঙা দেখা গেছে। বাসায় কেউ ছিল না। তবে বাসার দরজা খোলা ছিল। মুঠোফোনেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপু বলেন, ‘আমি শনিবার রাত আটটায় ক্যাম্পাস থেকে চলে আসি। কেউ যদি ব্যক্তিগত শত্রুতার জন্য কারও বাসায় হামলা চালিয়ে থাকে, এটা একান্ত তাদের ব্যাপার। এ ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের কেউ জড়িত নয়।’
হামলার বিষয়ে হাটহাজারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মজিবুর রহমানের চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘কয়েকজনের বাসায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি।’
এদিকে শনিবার রাতে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত ছাত্রলীগ নেতা তায়ফুল হকের অবস্থা এখনো শঙ্কামুক্ত নয় বলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক নাজমুল মনির। তিনি সভাপতিপক্ষের নেতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, হামলার বিষয়ে কেউ প্রশাসনকে কিছু জানায়নি।

পাঠকের মতামত: