ঢাকা,সোমবার, ৬ মে ২০২৪

লামা সরকারী মাতামুহুরী ডিগ্রী কলেজটি নানা সমস্যায় জর্জরিত

নিজস্ব প্রতিবেদক,  লামা-আলীকদম থেকে ::
বান্দরবান পার্বত্য জেলার লামা-আলীকদম এ দু-উপজেলার গরীব ও অসচ্ছল বাঙ্গালী ও নৃতাত্তিক জনগোষ্ঠির পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা দানের লক্ষে সর্ব প্রথম প্রতিষ্ঠিত লামা সরকারী মাতামুহুরী ডিগ্রী কলেজটি। এ কলেজটির শুরুতে সবদিক থেকে ভালো অবস্থানে থাকলেও সম্প্রতি নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে।

সমস্যা গুলোর মধ্যে শিক্ষক সঙ্কট, শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসন সমস্যা, পানীয় জলের সঙ্কট, অনার্স কোর্স চালু না হওয়া, অধ্যক্ষের অফিস ও শিক্ষকগণের কমনরুম সংকট, প্রশাসনিক ভবন থেকে একাডেমিক ভবনে যাতায়াত সঙ্কট ও অডিটরিয়ামের অভাবে জাতীয় ও বিভিন্ন দিবসের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের অচলাবস্থা এবং সরকারি গেজেট ভুক্তির ৫ বছরেও শিক্ষক-কর্মচারিগনের সরকারি বেতন ভাতা বঞ্চিত হওয়া প্রধান।

মঙ্গলবার (০৩ অক্টোবর) সকালে কলেজ ছাত্রলীগের উদ্যোগে আয়োজিত নতুন ছাত্র-ছাত্রীদের ‘ভর্তি সহায়তা কেন্দ্রে’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে সরজমিন খবর নিয়ে এসব সমস্যার কথা জানা গেছে।
এসময় কলেজের প্রতিষ্ঠাকালিন অধ্যাপক ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ রুহুল আমিন জানান, ১৯৮৬ সালে ২৮ জন শিক্ষকসহ অন্যান্য কর্মচারি মিলে ৪৮ জন লোকবল নিয়ে কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হয়েছিল।

বর্তমানে চাকুরির বয়স চলে যাওয়ার কারনে ১৪ জন শিক্ষক অবসরে চলে গেছেন। এখন মাত্র ২১ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। বর্তমানে একাদশ, দ্বাদশ ও ডিগ্রীতে ২ হাজার ৬ শত ছাত্র-ছাত্রী অধ্যায়নরত আছেন। বতমানে ৯জন শিক্ষক সংকট রয়েছে। তার মধ্যে রাষ্ট্র বিজ্ঞান ২ জন,ইসলামী ইতিহাস ১জন, ইতিহাস ১ জন, বাংলা ১জন, জীব বিজ্ঞান ১ জন ও গনিত বিষয়ক ১জন।

এছাড়াও অধ্যক্ষ ১জন, উপাধ্যক্ষ বিগত ২০১৮ সালে কলেজটি সরকারি করনের গেজেট ভুক্ত করা হওয়ার পর থেকে নতুন করে আর শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ না থাকার ফলে শিক্ষক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে।

কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি নাহিদ আদনান ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুল হক জানান, আবাসন সঙ্কটের কারনে শিক্ষক শিক্ষিকা, কর্মচারীসহ দুরদুরান্ত থেকে অধ্যায়নরত ছাত্র-ছাত্রীগণ সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। সে সাথে নিরাপদ পানীয় জলের সঙ্কটে ভোগছেন কলেজের সকলে। কলেজে অনার্স কোর্স চালুর এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরন না হওয়ায় স্থানীয় গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

জেলার সর্বপ্রথম কলেজ হওয়া সত্তেও এই কলেজের অধ্যক্ষের মানসম্মত কোন অফিস ও আবাসিক সুবিধা নেই। অন্যান্য বিভাগীয় অধ্যাপক ও শিক্ষকের মিলনায়তন নেই, নেই ছাত্র-শিক্ষক সম্মেলন কেন্দ্র। অডিটরিয়ামের অভাবে শিক্ষার্থীদের শিল্প সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিভা বিকাশের সুযোগ নেই। তারা আরো বলেন, কলেজ ক্যান্টিন ভবন নির্মানের টেন্ডার আহ্বান করা হলেও এখনো কোন কার্যক্রম শুরুই হয়নি। ক্যান্টিন না থাকায় কলেজের বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী বাইরের পঁচা-বাসি খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

উল্লেখ্য যে,এ যাবত অবসরে গিয়ে কলেজের প্রতিষ্ঠাকালিন অধ্যক্ষ আশরাফুল ইসলাম,সহকারি অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম, প্রভাষক গিয়াস উদ্দিন ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারি মো, খুরশীদ আলম সরকারি বেতন ভাতা পাওয়ার আগেই মারা গেছেন। অবসরে গিয়ে আর্থিক সঙ্কটের কারনে নানা জটিলতার মধ্যে দিয়ে দিন গুনছেন অবঃ সহকারি অধ্যাপক অংথিন রাখাইন, অবঃ সহঃ অধ্যাপক মোঃ আমজাদ হোসেন, অবঃ সহঃ অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, অবঃ সহঃ অধ্যাপক আবুল বাশার, অবঃ সহঃ অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ও প্রভাষক সাবের আহামদ।
এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামালের মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, কলেজটি বর্তমানের বহুমুখী সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে। তাই জরুরী ভিত্তিত্বে তা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু-হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

পাঠকের মতামত: