ঢাকা,সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

আলীকদম উপজেলার পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন

‘বিদেশী সিগারেট ও মদ চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগ’

আলীকদম (বান্দরবান) প্রতিনিধি :: বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ৫৫ ও ৫৬ নাম্বার সীমান্ত পিলার এলাকা দিয়ে বিদেশী সিগারেট ও মদ চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে আলীকদম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যন মোহাম্মদ আবুল কালাম বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিলুপ্ত ম্রো ন্যাশনাল পার্টির (এমএনপি) সাবেক কমান্ডার মেনরুং ম্রো। বুধবার (৩০ আগস্ট) আলীকদম উপজেলা সদরের একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ দাবী করেন মেনরুং ম্রো।

উল্লেখ্য, গত ২৮ আগস্ট দিবাগত গভীর রাতে আলীকদম-পোয়ামুহুরী সড়কের ঠান্ডার ঝিরি নামক স্থান স্থান আলীকদমে ৫৭ বিজিবি ও পুলিশের যৌথ টহল দল ১১ হাজার প্যাকেট বিদেশী উরিস সিগারেট উদ্ধার করেন। উদ্ধার হওয়া এইসব বিদেশী সিগারেট উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল কালামের মালিকানাধীন ছিল বলে দাবী করেন সাবেক এমএনপি কমাণ্ডার মেনরুং ম্রো।

৩ পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্যে বিলুপ্ত গেরিলা সংগঠন এমএনপির সাবেক কমান্ডার মেনরুং দাবী করেন, উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল কালাম দীর্ঘদিন ধরে ম্রো ও মার্মা শ্রমিক ব্যবহার করে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে বিদেশী সিগারেট, মদ ও গরু চোরাচালানে জড়িত রয়েছেন। এসবের প্রতিবাদ করে আসছিলেন মেনরুং। এ কারণে উপজেলা চেয়ারম্যান কালাম মেনরুংকে হুমকী দিয়ে আসছেন অভিযোগ এনে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেন তিনি।

মেনরুংয়ের দাবী, তিনি ২০১৫ সালের ৫ নভেম্বর সরকারের কাছে ৩৬টি গাদা বন্দুক ৮৯টি কার্তুজ গুলি, ৬২টি পোশাক ও ১২টি কার্তুজ বন্দুক জমা দিয়ে নিজ দলের ৬৪ জন সদস্য নিয়ে আত্মসমর্পন করেন। সেই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্যমন্ত্রী বীর বাহাদুর।

মেনরুং ম্রো অভিযোগ করেন, ২০১৫ সালের পর থেকে আত্মসমর্পিত এমএনপি সদস্যরা শান্তিপুর্ণভাবে সহাবস্থান করলেও আলীকদম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল কালাম বিগত কয়েক বছর ধরে এমনপির সাবেক সদস্যদের আর্থিক প্রলোভনে প্রলুব্ধ করে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমন্ত পিলার ৫৫ ও ৫৬ নাম্বার এলাকা দিয়া গরু ও মাদক চোরাচালান করে আসছে। বাধ্য হয়ে ২০২২-২০২৩ সালের বিভিন্ন সময় মেনরুং ম্রো দলবলসহ উপজেলা চেয়ারম্যান কালাম কর্তৃক নিয়োজিত হয়ে গরু ব্যবসায়ীদের গরুগুলো মসল্লা পাড়া ও তৈন খালের দু’টি পয়েন্টে আটকানো শুরু করেন। বিনিময়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার সহযোগি মোস্তফা প্রতি গরু থেকে ১৫০০-২০০০ টাকা চাঁদা আদায় করতেন। এই চাঁদা থেকে গরুপ্রতি ৫০০ টাকা হারে মেনরুংয়ের মাধ্যমে নিয়োজিত ম্রো শ্রমিকরা পাওনা ছিলেন ২৭ লাখ টাকা। উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল কালাম চাঁদার ভাগা থেকে ৬ লাখ টাকা দিলেও মেনরুংয়ের শ্রমিকদের পাওনা ২১ টাকা দেয়নি।

মেনরুং বলেন, বর্তমানে মিয়ানমার সীমান্ত পাড়ি দিয়ে গরু আসা প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ায় উপজেলা চেয়ারম্যান বিদেশী উরিস সিগারেট ও মদ আনার অবৈধ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। এই কাজে শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করছে মুরুংদের। তিনি নিজের পদ-পদবী ব্যবহার করো আলীকদম-কুরুকপাতা-পোয়ামুহুরী সড়ক দিয়ে মিয়ানমার সীমান্ত হতে চোরাচালানী পণ্য বাংলাদেশে এনে দেশের নানান স্থানে পাচারের সাথে জড়িত রয়েছেন। চোরাইপথে আনা এইসব চোরাচালানী পণ্যের মধ্যে রয়েছে মিয়ানমারের উরিস সিগারেট, মদের মধ্যে রয়েছে ঈগল, ব্যান্ড রয়েল, হুইস্কি ও মারডালাই রাম।

লিখিত বক্তব্যে আরো উল্লেখ করেন, উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল কালাম রাত-বিরাতে আলীকদম-পোয়ামুহুরী সড়কে সবসময় যাতায়াত করেন। একজন পদস্থ জনপ্রতিনিধি হয়েও গভীর রাতে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় তার অবাধ যাতায়াত প্রশ্নবিদ্ধ। মিয়ানমার থেকে আনা চোরাচালানের মাদকগুলি তিনি আলীকদম-পোয়ামুহুরী সড়ক পথ ব্যবহার করে রাতের বেলায় পাচার করেন। মাঝেমধ্যে সড়কপথ ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলে মাতামুহুরী নদীর ঠান্ডারঝিরি নামক স্থানের নদী ঘাট হতে নৌপথে এনে তৈনখালের আমতলী লংঘাটে নামিয়ে আশ্রায়ণ প্রকল্প রাস্তা ব্যবহার করে মাদকদ্রব্যগুলি চোরাচালান করে থাকে।

মেনরুং বলেন, ‘গত ২৮ আগস্ট দিনগত দিবাগত রাতে উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালামের নেতৃত্বে মিয়ানমার হতে চোরাচালানীর মাধ্যমে আসা প্রচুর পরিমাণ উরিস সিগেরেট আনা হচ্ছে। তখন আমিসহ আমার সঙ্গীর আরো ৬ জন পাড়াবাসীকে নিয়া আলীকদম-পোয়ামুহুরী সড়কের মেরিংচর পাড়া যাওয়ার রাস্তার মাথায় যাত্রী ছাউনীতে বসে অপেক্ষা করতে থাকি। এই সময় আনুমানিক রাত সাড়ে নয়টার সময় দেখতে পাই যে, তিনটি গাড়ি কুরুকপাতার দিক হইতে আলীকদমগামী আসছে। তখন আমরা গাড়ির সামনে গিয়া দাড়াই। এরপর উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম নিজের মালিকানাধীন গাড়ি লেক্সাস ভি-এইট মডেলের (ঢাকা মেট্টো-ঘ-১১-৩৭০৩) নং হতে নেমে আমাদেরকে সরে যেতে বলেন এবং তর্জন-গজন করে আমার টি-শার্টের কলার ধরো টানাহেছড়া করতে থাকে। আমি মুরুং সম্প্রদায়ের লোকজন ব্যবহারে অবৈধ মাদক ব্যবসা কেন করছেন জিজ্ঞাসা করলে তিনি আমাকে হুমকী দিতে থাকে এবং আমাকে টেনে গাড়িতে তুলতে চায়।

এই সময় আমার সঙ্গীদের প্রতিরোধের মুখে উপজেলা চেয়ারম্যান আমাকে গাড়িতে তুলতে পারে নাই। এই সময় আমার সাথে থাকা সাক্ষী মাংলে ম্রো (২৫), পিতা- পুংছেন ম্রো, সাং- মেরিনচর, ৯নং ওয়ার্ড, নয়াপাড়া ইউপি, থানা- আলীকদম, বান্দরবানকে উপজেলা চেয়ারম্যানের গাড়ি থেকে নেমে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি সজোরে আঘাত করলে গুরুতর ফুলা জখম হয়। এই সময় উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম বিবাদী উচ্চস্বরে হুমকী দিয়া বলে যে, ‘এই মাল দিয়া তোমাদেরকে ফাঁসাবো। আমি উপজেলা চেয়ারম্যান, আমি তোদেরকে দেখিয়ে ছাড়বো।’

এই সময়ে আমি স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তিসহ প্রশাসনকে ঘটনা অভিহিত করলে ২৮ আগস্ট দিবাগত গভীর রাত আনুমানিক ২টায় আলীকদম ব্যাটালিয়ান (৫৭ বিজিবি) হইতে ১৮ জন বিজিবি সদস্য সুবেদার মোঃ ওয়ালিদ হোসেন এর নেতৃত্বে আরো ৩ জন পুলিশ সদস্যসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তখন আমার প্রতিবেশী শ্রমিক বুবশে মার্মা (৩০), পিতা- মংবিং মার্মা টহলরত বিজিবি ও পুরিশ সদস্যদেরকে ঠান্ডারঝিরি নামক স্থানে উপজেলা চেয়ারম্যানের লোকজন দ্বারা লুকিয় রাখা অবৈধ উরিস সিগারেটগুলি দেখিয়ে দিলে রাত আনুমানিক ২.২০ ঘটিকার সময় বিজিবি এবং পুলিশ সদসদের যৌথ অভিযানে নয়াপাড়া ইউনিয়নের ঠান্ডারঝিরি নামক স্থান হইতে ১১,০০০ প্যাকেট বিদেশী উরিস সিগারেট উদ্ধার করিতে সক্ষম হয়। যার আনুমানিক মূল্য ৩৩ লাখ টাকা।

মেনরুংয়ের দাবী, উদ্ধার হওয়া সিগারেটগুলি বিজিবির পক্ষ থেকে মালিকানাবিহীন দেখানো হলেও এইসব অবৈধ সিগারেট উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল কালামের মালিকানাধীন। যার সাক্ষী হিসেবে আছেন স্থানীয় ম্রো ও মার্মা শ্রমিকরা।

এ সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে পার্বত্যমন্ত্রী, ৬৯, পদাতিক ব্রিগেডের ব্রিগেড কমাণ্ডার, জেলা প্রশাসকহ সরকারের ১০টি দপ্তরে।

এদিকে, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মেনরুং ম্রোর সহচর মাংলে ম্রো বাদী হয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কালামকে প্রধান আসামী করে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে মারধর ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে আলীকদম থানায় বুধবার (৩০ জুন) একটি মামলা দায়ের হয়েছে বলে থানাসূত্রে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, গত ২৮ আগস্ট রাত সাড়ে নয়টার দিকে আমি খবর পাই যে, সাবেক এমএনপি কমান্ডার মেনরুং ম্রোর নেতৃত্বে আলীকদম-পোয়ামুহুরী সড়কের মেরিনচর এলাকায় ডাকাতি হচ্ছে। তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে আমি যাই। পুলিশকেও ঘটনাটি জানাই। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ যান। আমি সেখান থেকে চলে আসি। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলি সত্য নয়।

 

পাঠকের মতামত: