ঢাকা,শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

অপহরণকারীদের আস্তানা থেকে নারীসহ ৫ জন উদ্ধার

কক্সবাজারে পুলিশের সাবেক এসআই ২ সহযোগীসহ আটক

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::  ২০২১ সালের ১৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) হিসেবে কর্মরত অবস্থায় বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েছিলেন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ মাইতুল সরকারবাড়ি এলাকার মৃত এরশাদ আলমের ছেলে এসএম ইকবাল পারভেজ (৪০)।

এরপর দীর্ঘদিন তিনি কারাভোগের পাশাপাশি চাকরিও খোয়ান কিন্তু গত কয়েক মাস আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার পর সেই ইকবাল তার শ্যালক মুন্নাসহ আরো ৭/৮ জন সহযোগী মিলে কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোনে গড়ে তোলেন ভয়ংকর এক অপহরণকারী সিন্ডিকেট।

সেই চক্রের সদস্যরা দেশের নানা প্রান্ত থেকে কক্সবাজার আসা মানুষদের টার্গেট করে অপহরণ করতো। এমনকি স্বামী ও স্ত্রীকে একসঙ্গে অপহরণের পর স্বামীকে বেঁধে রেখে তার সামনেই স্ত্রীকে ধর্ষণ করত।

অবশেষে সেই ভয়ংকর অপরাধী চক্রের মূল হোতা বরখাস্তকৃত এসআই ইকবাল পারভেজকে দুই সহযোগীসহ আটক করেছে কক্সবাজারস্থ র‌্যাব-১৫।

এসময় কক্সবাজার শহরের কলাতলী ও সুগন্ধা পয়েন্টে অবস্থিত তার গোপন আস্তানা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১ নারীসহ ৫ অপহৃত ভিকটিমকে।

গ্রেফতার তার দুই সহযোগী হলো কক্সবাজার শহরের নতুন বাহারছড়া এলাকার (বিমান বন্দর সড়ক) মো. ইউনুসের ছেলে এমটি মুন্না (৩০) ও মৃত আব্দুল করিমের ছেলে মো. ইউসুফ। বরখাস্তকৃত এসআই ইকবাল পারভেজের শ্বশুরবাড়ি শহরের নতুন বাহারছড়া এলাকায়।

আজ শনিবার (২০ মে) দুপুর ২টা ৪৯ মিনিটে বিষয়টি নিশ্চিত করেন র‌্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী।

র‌্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. আবু সালাম চৌধুরী জানান, কক্সবাজার কেন্দ্রিক ভয়ঙ্কর এক অপহরণকারী সিন্ডিকেটের অবস্থান শনাক্তের পর শহরের কলাতলী ও সুগন্ধা এলাকায় তাদের একের পর এক সুরক্ষিত গোপন আস্তানায় রাতভর অভিযান চালায় র‌্যাবের একটি দল। এরপর সেখানে বন্দী অবস্থায় ১ নারীসহ ৫ জন অপহৃত ভিকটিমকে উদ্ধার এবং অপহরণকারী চক্রের মূল হোতা, পুলিশের বহিষ্কৃত উপ-পরিদর্শক (এসআই) এসএম ইকবাল পারভেজসহ ওই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।

তিনি জানান, অপহরণকারী চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে স্বামী-স্ত্রীকে একসঙ্গে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়ের পাশাপাশি স্বামীর হাত মুখ বেঁধে অপহৃত নারীকে ধর্ষণের অভিযোগও উঠেছে। আটক অবস্থায় অপহৃত নারীদেরকে যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করতো তারা।

র‌্যাব জানায়, গত ১৬ মে কক্সবাজার বেড়াতে এসে নিখোঁজ হন ঢাকার উত্তরার বাসিন্দা মো. শাহজাহান কবির ও মঞ্জুর আলম।

পরবর্তীতে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা একটি মোবাইল ফোন নম্বর হতে কল করে অপহৃতদের পরিবারের সদস্যদের কাছে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে কিন্তৃ তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে আংশিক মুক্তিপণ পরিশোধ করা হলেও শাহজাহান ও মঞ্জুরের মুক্তি মেলেনি।

র‌্যাব-১৫ কর্মকর্তা মো. আবু সালাম চৌধুরী বলেন, “উখিয়া থানাধীন কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা অপহৃত দম্পতির গল্প আরো করুণ। দাবিকৃত মোটা অংকের মুক্তিপণ না পেয়ে স্বামীর হাত-মুখ বেঁধে স্ত্রীকে ধর্ষণ করতে থাকেন চক্রের সদস্যরা। স্বামীর উপর চলতে তাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় অমানবিক ও বর্বর নির্যাতন।”

তিনি জানান, অপহৃত ব্যক্তিদের স্বজনের বিকাশে ২ লক্ষাধিক টাকা মুক্তিপণ দিলেও তাদেরকে ছাড়া হয়নি। বেদম মারধরের পাশাপাশি চাহিদামতো মুক্তিপণ না দিলে অপহৃতদের মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়।

স্বজনরা বিষয়টি র‌্যাবকে অবহিত করলে গোয়েন্দা উপাত্ত ব্যবহার করে তাদের আইনের আওতায় আনতে কাজ শুরু করে র‌্যাব।

এসময় সেখান থেকে জিম্মি হিসেবে বন্দী ৫ নারী-পুরুষ ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর র‌্যাব ও স্থানীয় জনতার সম্মুখে স্বামী-স্ত্রী অভিযোগ করেন যে, তাদেরকে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়ের পাশাপাশি স্বামীর হাত-মুখ বেধে স্ত্রীকে ধর্ষণও করা হয়।

আটক আসামী ও উদ্ধারকৃত ব্যক্তিদের পরবর্তী আইনগত প্রক্রিয়ার জন্য কক্সবাজার সদর থানায় হস্তান্তরর করা হয়েছে বলে জানান র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।

পাঠকের মতামত: