ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

১২০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত জামায়াতের!

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণার মাস খানেক আগে থেকেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে জামায়াতে ইসলামী। এর অংশ হিসেবে প্রায় ১২০টির বেশি আসনে নিজেদের প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকাও করেছে দলটি। দলটির সর্বোচ্চ ফোরাম নির্বাহী পরিষদের একজন সদস্য জানান, আগামী নির্বাচনে জামায়াত একা নির্বাচন করার প্রস্তুতি হিসেবেই প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। জামায়াত নির্বাচনমুখী দল তাই আগে থেকেই প্রার্থীদের মাঠে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছে। তিনি বলেন, আগামীতে আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির মতো কোনো দলের ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হবে না তারা। একক নির্বাচন করলেও আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচনে জামায়াত অংশ নেবে না। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে সক্রিয় থাকবে।

প্রশ্ন উঠেছে, যে দলটির নিবন্ধন নেই, তারা ভোটে লড়বে কোনও দলের ছায়ার তলে? জামায়াতের এক দায়িত্বশীল নেতার কথায়- এখনও আগামী নির্বাচনের দেড় বছর সময় আছে। তারা আইনী লড়াই করেই নিবন্ধন আদায় করবেন। যে কারণে দলটির নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছিল, তা ছিল জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রকে কেন্দ্র করে। এ বিষয়ে দলের গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন প্রয়োজন হলে সময়ই বলে দিবে কী করা প্রয়োজন। তবে, নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর জানিয়েছেন, জামায়াতের নিবন্ধন আদালতের আদেশে বাতিল হয়েছে। তাই এ দলের ব্যক্তিরা ভিন্ন নামে আবেদন করলেও নিবন্ধন পাওয়ার সুযোগ নেই। গতকাল নির্বাচন কার্যালয়ে নিজ দপ্তরে জামায়াত ইসলাম অন্য নামে আবেদন করলে নিবন্ধন পাবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। এক প্রশ্নের জবাবে ইসি আলমগীর জানান, কোনো দলের গঠনতন্ত্র যদি আমাদের সংবিধানের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ হয়, তাহলে তো নিবন্ধনের কোনো সুযোগ নেই। আদালতের আদেশ পরিবর্তন হলে অন্য বিষয়।

বলা বাহূল্য, ২০০৯ সালে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব মাওলানা সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ ব্যক্তি জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে এক রিট পিটিশন দায়ের করেন। কয়েক দফা শুনানির পর ২০১৩ সালের ১ আগস্ট এক রায়ে জামায়াতকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন প্রদান আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও আইনগত অকার্যকর ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।

নির্বাচনের প্রস্তুতি জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন আসনে জরিপ পরিচালনা করছে জামায়াত ইসলামী। জরিপের রিপোর্ট অনুযায়ী দলটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটি দেশের বিভিন্ন আসনে প্রার্থী নির্বাচন করতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি জেলায় আসন এবং প্রার্থীর নাম নির্বাচন করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মাঠে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাঁচ সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান হিসেবে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মুহাম্মাদ ইজ্জত উল্লাহ। আরো রয়েছেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরোয়ার, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আজাদ ও সাবেক শিবির সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের একজন থানা আমীর জানান, কেন্দ্র থেকে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছেন। ধারাবাহিকভাবে প্রতিটি জেলাকে চিঠি দিয়ে আসন এবং প্রার্থীদের নাম জানিয়ে দিচ্ছেন। যেসব আসন সিলেক্ট করা হচ্ছে এসব আসনের উপজেলায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। বিষয়টি জামায়াতের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শেয়ার করছেন। প্রার্থীদের বিষয়ে জনমত তৈরিরও চেষ্টা করছেন।

দলটির সূত্র জানায়, আগামীতে ১২০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বেশ কিছু আসনের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে যশোর-১ (শার্শা) কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা আজীজুর রহমান। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় জোট প্রার্থী ছিলেন তিনি। যশোর-২ (চৌগাছা-ঝিকরগাছা)-কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা আরশাদুল আলম। সাবেক এমপি মরহুম মুহাদ্দিস আবু সাঈদের স্থলাভিষিক্ত। যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর) অধ্যাপক গোলাম রসুল। যশোর-৫ (মনিরামপুর)-এডভোকেট গাজী এনামুল হক। যশোর-৬ (কেশবপুর)-অধ্যাপক মোক্তার আলী।

বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দীন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য। বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) শাহাদাতুজ্জামান সাবেক এমপি। বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মাওলানা তায়েব আলী। বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান দবিবুর রহমান। বগুড়া -৬ (সদর) বগুড়া শহর আমির ও সাবেক উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান আবিদুর রহমান সোহেল।

এছাড়া বগুড়া ৩ ও ৭ আসনে প্রার্থীর তালিকা অপেক্ষমান রাখা হয়েছে। এখানেও যোগ্য প্রার্থীর সন্ধান করা হচ্ছে বলে দলীয় সূত্র জানায়। ঢাকা-১৫ আসনে দলটির আমীর ডা. শফিকুর রহমান নির্বাচন করেছিলেন। আগামী নির্বাচনে দুটি আসনে ভোট করতে চান তিনি। তাই তার বাড়ি সুনামগঞ্জ হওয়ায় সেখানকার একটি আসনের পাশাপাশি ঢাকা-১৫ আসনে নির্বাচন করবেন। এছাড়া ঠাকুরগাঁও- ২ মো. আব্দুল হাকিম, দিনাজপুর-৪ (খানসামা-চিরিরবন্দর) : মাওলানা আফতাব উদ্দিন মোল্লা, দিনাজপুর-৬ (নবাবগঞ্জ, বিরামপুর, হাকিমপুর এবং ঘোড়াঘাট) মো. আনোয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী- ২ মো. মনিরুজ্জামান মন্টু, নীলফামারী- ৩, লালমনিরহাট-১ (পাটগ্রাম-হাতিবান্ধা), রংপুর- ৫ মো. গোলাম রব্বানী (রংপুরে আরো আসন নির্দিষ্ট করবে), কুড়িগ্রাম-১ (ভুরঙ্গমারি-নাগেশ্বরী) : আজিজুর রহমান স্বপন, কুড়িগ্রাম-৪ (রৌমারী-রাজীবপুর): নুর আলম মুকুল, গাইবান্ধা- ১ (সুন্দরগঞ্জ) মাজেদুর রহমান, গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্যাপুর-পলাশবাড়ী): মাওলানা নজরুল ইসলাম, গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্ধগঞ্জ): ডা. আবদুর রহীম, জয়পুরহাট-১ (সদর-পাঁচবিবি) : ডা. ফজলুর রহমান সাঈদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) ড. কেরামত আলী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ড. মিজানুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ নুরুল ইসলাম বুলবুল, রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী -তানোর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, রাজশাহী-৩ অধ্যাপক মাজেদুর রহমান, সিরাজগঞ্জ-৪ মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালি) : অধ্যক্ষ আলী আলম, পাবনা-১ ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন, পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আবু তালেব মন্ডল, পাবনা-৫ মো. ইকবাল হোসেন, কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) মুহাম্মদ আবদুল গফুর, চুয়াডাঙ্গা-২ (দামুড়হুদা-জীবন নগর): মোহাম্মদ রুহুল আমিন, মেহেরপুর- ১, ঝিনাইদহ-৩ অধ্যাপক মতিয়ার রহমান, বাগেরহাট-৩ মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ শেখ, বাগেরহাট-৪ মো. আব্দুল আলীম, খুলনা-৫ মিয়া গোলাম পরোয়ার, খুলনা-৬ মো. আবুল কালাম আজাদ, সাতক্ষীরা-১ (কলারোয়া-তালা): অধ্যক্ষ ইজ্জতুল্লাহ; সাতক্ষীরা-২ (সদর), সাতক্ষীরা-৩ (আশাশুনি-দেবহাটা): মুফতি রবিউল বাশার; সাতক্ষীরা-৪ (কালিগঞ্জ-শ্যামনগর): গাজী নজরুল ইসলাম, পটুয়াখালী-২ ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, বরিশালে একটি, পিরোজপুর-১ শামীম সাঈদী, শেরপুর-১, ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া): অধ্যাপক জসিম উদ্দিন, ঢাকা-১৫ ডা. শফিকুর রহমান, সুনামগঞ্জের একটি আসন, সিলেট- ৫, সিলেট-৬, মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ি), মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া), কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ), কুমিল্লা-১০ নাঙ্গলকোট-সদর দক্ষিণ-লালমাই) : মোহাম্মদ ইয়াছিন আরাফাত, কুমিল্লা-১১ সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, ফেনী-৩ (সোনাগাজী-দাগনভুঞা): ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, লক্ষীপুর-২ (রায়পুর-সদর আংশিক) : মাস্টার রুহুল আমীন, চট্টগ্রাম-১০ : শাহজাহান চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া): মাওলানা শামসুল ইসলাম, চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী): মাওলানা জহিরুল ইসলাম, কক্সবাজার-২ (কুতুবদিয়া-মহেশখালী): হামিদুর রহমান আজাদ, কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ)।

পাঠকের মতামত: