ঢাকা,বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

কেন এত দুর্ঘটনা? চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে

নিজস্ব প্রতিবেদক :: চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা, ঝরছে অহরহ প্রাণ। সর্বশেষ গত সোমবার ভোরে সড়কের লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর বাজার এলাকায় ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাইভেট কার আরোহী ৫ বন্ধু নিহত হয়েছেন। একইদিন সকাল ৯টার দিকে চুনতি ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া এলাকায় ট্রাকের সঙ্গে মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় ২ জন গুরুতর আহত হন। চকরিযার মালুমঘাটে একই পরিবারের ছয়জন নিহত। গত কয়-দিন আগেও একই জায়গায় আরো দু-জন নিহতসহ এসড়কে প্রতিদিন কোন না কোন জায়গায় গাড়ি চাপায় মরছে পথচারী।
প্রতিনিয়ত এত দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপ্রশস্থ সড়ক, লবণ পানিতে মহাসড়ক পিচ্ছিল, অপ্রশিক্ষিত চালক, বেপরোয়া গতি, বিপজ্জনক বাঁক, ওভারটেকিং, মহাসড়কে নিষিদ্ধ ছোট যানবাহন চলাচল, ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চলাচলসহ কয়েকটি কারণে এই সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে বেশি।
লবণ পানিতে সড়ক পিচ্ছিল : দেশের মোট চাহিদার একটি বড় অংশ লবণ উৎপাদন হয় টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, মহেশখালী, উখিয়া, কুতুবদিয়া, চকরিয়াসহ কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকায়। নৌপথ ও স্থল পথে এসব লবণ দেশের বিভিন্নস্থানে প্রেরণ করা হয়। নৌপথে পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় বেশিরভাগ লবণ পরিবহন করা হয়ে থাকে মূলত সড়ক পথেই। নিয়মানুযায়ী লবণবাহী ট্রাকে মোটা তেরপাল ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও তা যথাযথভাবে না মানায় পুরো রাস্তায় পানি চুয়ে পড়ে। এছাড়া মহাসড়ক হয়ে বিভিন্ন স্থানে পরিবহনের সময় কাঁচা মাটি পড়ে আস্তরণ সৃষ্টি হয়। রাতে কুয়াশার স্পর্শে লবণ নিঃসৃত পানি ও কাঁচা মাটি রাস্তায় পিচ্ছিল আস্তরণ সৃষ্টি করে। ফলে চলমান গাড়ি ব্রেক কষলেই পিচ্ছিল আস্তরণের স্পর্শে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এতে মহাসড়কের কোথাও না কোথাও প্রতিদিন ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা।
ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক : চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে রয়েছে বহু ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক। এর মধ্যে শুধু লোহাগাড়ায় রয়েছে ১৪টি বাঁক। একদিকে অপ্রশস্থ সড়ক, অন্যদিকে মহাসড়কে ঘন ঘন বাঁকের কারণেও প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। এছাড়া সড়কের দুপাশে রয়েছে অনেকগুলো হাট-বাজার। এসব হাট-বাজারে যানজটের কারণে অপচয় হয় অনেক সময়ের। এ সময় পুষিয়ে দিতে চালকরা পরবর্তীতে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে ঘটছে দুর্ঘটনা, হচ্ছে প্রাণহানি।
হট স্পট জাঙ্গালিয়া : চট্টগ্রাম-কঙবাজার মহাসড়কে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া এলাকায়। এটি সড়ক দুর্ঘটনার হট স্পট হিসেবে পরিচিত। ওইস্থানে সড়কের দুই পাশে ঘন বনাঞ্চল, বাঁক ও ঢালু রাস্তার কারণে প্রায় সময় দুর্ঘটনা ঘটে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটন নগরী কক্সবাজার আসেন পর্যটকরা। দূর-দূরান্ত থেকে আসা চালকদের এই সড়কের ব্যাপারে অভিজ্ঞতা না থাকাও দুর্ঘটনার অন্যতম একটি কারণ।
নিরাপদ সড়ক চাই লোহাগাড়া উপজেলা শাখার সভাপতি মোজাহিদ হোসাইন সাগর চকরিয়া নিউজকে জানান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চার লেন বা ছয় লেনে এখনো উন্নীত হয়নি। এছাড়া অপ্রশস্থ সড়কে অসংখ্য বিপজ্জনক বাঁক, বেপরোয়া গতি ও চালকের অদক্ষতার কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে সচেতনতা বৃদ্ধিতে আমরা নিয়মিত সেমিনার, র‌্যালি, লিফলেট বিতরণ করে আসছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে প্রশাসন যথাযথভাবে উদ্যোগী না হলে দুর্ঘটনা রোধ করা এক প্রকার অসম্ভব।

দোহাজারী হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সিরাজুল ইসলাম জানান, হাইওয়ে থানার উদ্যোগে প্রতি মাসে চালক ও সহকারীদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভার আয়োজন চলমান আছে। এছাড়া দুর্ঘটনারোধে বিভিন্ন সময় চালকদের মাঝে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়। মহাসড়কে ধীরগতির নিষিদ্ধ গাড়ির বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

দোহাজারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ জানান, চট্টগ্রাম-কঙবাজার মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীত করার জন্য বর্তমানে ফিজিবিলিটি স্টাডি চলছে। এছাড়া লবণবাহী গাড়ি থেকে নিঃসৃত পানির কারণে সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। পাশাপাশি দুর্ঘটনাও ঘটছে।

পাঠকের মতামত: