ঢাকা,রোববার, ১৯ মে ২০২৪

কক্সবাজার যেন ময়লা-আবর্জনার শহর, নিম্নচাপে বেসামাল

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার ::
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩নং সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। যার প্রভাবে গত রবিবার রাত থেকে গতকাল সোমবার পুরোদিন গেছে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে। এতে বেসামাল হয়ে পড়ে কক্সবাজার শহর। সামান্য বৃষ্টির পানিতে সয়লাব হয়ে যায় পুরো শহর। কাদা ছাড়া রাস্তার কোন অস্তিত্ব ছিল না। কী পরিমাণ কষ্টে দিন যাচ্ছে কক্সবাজার শহরবাসীর তা বলে শেষ করা যাবে না।

সরেজমিনে গেলে ভুক্তভোগীরা জানান, এমন কোন রাস্তা ছিল নেই সাধারণভাবে পায়ে হেঁটে চলাফেরা করার। শহরের বাস ট্রার্মিনাল থেকে হলিডে মোড় পর্যন্ত মোটামুটি ছোট গাড়ি নিয়ে চলাফেরা করার কোন সুযোগ নেই। এমনকি পায়ে হেঁটেও চলাফেরা করা যাচ্ছে না। বড় বড় গর্তে বৃষ্টিতে পানিতে একাকার। সবকটি গর্ত হাটু পরিমাণ পানি। দেখাই যাচ্ছে না কোন গর্তে কতটুকু পানি রয়েছে। ফলে অনেক টমটম ও ছোট গাড়ি পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতেও দেখা গেছে।
টেকপাড়ার মোস্তফিজুর রহমান নামের এক ব্যক্তি জানান, কী এক বিশ্রি অবস্থা কক্সবাজার শহরের। শুধু টেকপাড়ার কথায় বলি, এখানো এমন কোন অব্যন্তরিণ রাস্তা নেই হেঁটে চলাফেরা করার। কোন কোন রাস্তায় কাজ করা হচ্ছে আবার কোন কোন রাস্তা প্রধান সড়কে কাজ করার কারণে ভিতরের সড়কগুলোর মুখ বন্ধ। যার কারণে কাঁদা এবং ময়লার পানিতে বাসা-বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না সাধারণ মানুষ।
চাউল বাজার সড়কের রমজান আলী নামের এক বাসিন্দা জানান, টেকপাড়ার হাঙ্গর পাড়া, অলি-গলি সড়কগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। সামান্য বৃষ্টিতে ময়লা-আবর্জনা ও কাঁদা একাকার হয়ে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কোন কোন জায়গায় হাঁটু পরিমাণ কাঁদা। সব জায়গায় স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থা।

বার্মিজ মার্কেটের সাবু নামের এক ব্যবসায়ী জানান, কক্সবাজারের জন্য বৃষ্টি মানেই ‘মরার উপর খাড়ার ঘাঁ’। এই শহরে সামান্য বৃষ্টি হলেই সাধারণ মানুষের এবং ব্যবসায়ীদের ঘুম হারা হয়ে যায়। বৌদ্ধ মন্দির সড়কে মোড়েই প্রতিনিয়ত জমা হচ্ছে ময়লা। স্কুল, হাসপাতাল, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ঐতিহ্যবাহী ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান বার্মিজ মার্কেট অবস্থান এই সড়কে হলেও প্রতিনিয়ত অভিভাবকহীন আচরণ এই এলাকাগুলো। ময়লা এবং কাঁদায় কি পরিমাণ কষ্ট হচ্ছে তা ভুক্তভোগী না হলেও বুঝানো যাবে না।

বড় বাজার এলাকার ব্যবসায়ী সরওয়ার জানান, দুনিয়ার আজব শহর কক্সবাজার। বড় বাজার এলাকাটা কক্সবাজারের ঐতিহ্য। কিন্তু কে বলবে বড়বাজারে মানুষ বসবাস করে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এখানে বাণিজ্য করে যাচ্ছে। অথচ সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা একটুও সুখে নেই এখানে। গতকালের সামান্য বৃষ্টিতে পেশকার পাড়া এলাকা, বড় বাজার এলাকার সবকটি রাস্তা দূর্গন্ধ কাঁদায় দিশেহারা। আল্লাহ পরম করুণাময়। তিঁনি যদি চোখ তুলে তাকান তবেই এখানকার অবস্থান হয়তো পরিবর্তন হতে পারে।

সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও জানান, পুরো শহর জুড়ে কাঁদায় ও ময়লার পানির উপর ডুবে আছে কক্সবাজার শহর। এক প্রকার অস্বস্থিতে রয়েছে কক্সবাজার শহরবাসী। একদিকে প্রধান সড়ক সংস্কার। অন্যদিকে সমান তালে সড়ক-উপসড়কগুলোর সংস্কার। যার কারণে শহরবাসী রয়েছে চরম দুর্ভোগে। অন্যদিকে এসব মৌসুমী বৃষ্টির ফলে পর্যটন সংশ্লিষ্ট কক্সবাজারের পুরো শহরে ময়লা-আবর্জনা ও কাদায় ভরপুর। সবমিলিয়ে মোটেই ভাল নেই বলে ক্ষোভ করে করছে কক্সবাজার শহরবাসী।

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। গতকাল সকাল ৯টায় আবহাওয়ার এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অফিস আরও জানান, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত নি¤œচাপটি আরও উত্তর-উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকুলীয় এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর-উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে লঘুচাপে পরিণত হয়। যার প্রভাবে গত রবিবার ও গতকাল সোমবার কক্সবাজারে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হয়।

পাঠকের মতামত: