:: এম.আর মাহামুদ ::
আমার এক বাল্য বন্ধু হঠাৎ আমাকে প্রশ্ন করে বসলেন পীরের স্ত্রী মুরিদ হয়না, হুজুরের বাড়ীতে মিলাদ হয়না, ডাক্তারের বউয়ের সীজার হয়না, ব্যাপারটি কি! বাল্যবন্ধুর প্রশ্ন শুনে আমি অনেকটা আকাশ থেকে পড়ার মত হয়েছি। সঠিক কোন জবাব দিতে পারিনি। তবে তার যুক্তি সংগত প্রশ্নটি শুনে অবাক হইনি। মনে মনে তার যথার্থতা খুজতে গিয়ে জবাব পেয়েছি।
বিষয়টি প্রসঙ্গক্রমে এসব কথার অবতারনা করা হলেও আসলে ব্যাপারটা বড়ই জটিল। আমি ধর্ম বিদ্বেষী নই। শ্রদ্ধাভাজন আলেম ও পীরদের প্রতি বড়ই দূর্বল, কারণ তারা ধর্মের অনেক আজানাদি সাধারণ মানুষদের জানিয়ে পথ প্রদর্শকের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। আমার জন্মের পর প্রথম আজানের ধ্বনিটি উচ্চারণ করেছেন একজন আলেম। এছাড়া চকরিয়া তথা কক্সবাজারের বেশ ক’জন শ্রদ্ধাভাজন পীরে কামেলের সান্নিধ্যে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। তারাও পরিপূর্ণ ধর্মীয় জ্ঞানে অজ্ঞদের ইসলাম ধর্মের নিয়ম কানুন শিখিয়ে দিয়ে ধর্মের পথে ধাবিত হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। একারণে হক্কানি আলেম ও পীর সাহেবদের অবজ্ঞা করার কোন সুযোগ নেই। দেশে দিন দিন বড় মাপের আলেমদের হারাচ্ছি। এই শূণ্যতা পূরণ হয়কিনা একমাত্র আল্লাহই ভাল জানে। তবে এ শূণ্যতা পুরণে অনেক তরুণ প্রজন্ম সৃষ্টি হচ্ছে।
আমাদের গ্রাম গঞ্জের অজস্র গর্ভবতী মহিলা প্রসব বেদনায় কষ্ট পেয়ে থাকে। গ্রাম্য ধাত্রী ছাড়া এখনো অধিকাংশ দরিদ্র পরিবারের পক্ষে হাসপাতালে গিয়ে ডেলিভারী করানোর সুযোগ নেই। তবে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদুল হক হাসপাতালে যোগদান করেছেন ১৯ জুলাই ২০২০। ২০ জুলাই থেকে তিনি হাসপাতালে হতদরিদ্রসহ সব শ্রেণির অন্তসত্ত্বা মহিলাদের স্বাভাবিক ডেলিভারী শুরু করেছেন। হাসপাতালের এ টিমটি গত ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ১১২জন গর্ভবতী মহিলার স্বাভাবিক ডেলিভারী করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। প্রবাদটির যথার্থতা ডাঃ মোহাম্মদুল হক প্রমাণ করেছেন। হাসপাতালে সমস্থ সুযোগ সুবিধা থাকলেও পর্যাপ্ত জনবল সংকট রয়েছে। তারপরও মাত্র ৬জন মিডওয়াইফ (ধাত্রী) দিয়ে স্বাভাবিক ডেলিভারীর কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এসব মিডওয়াইফদের সার্বিক তত্ত্বাবধান করে যাচ্ছেন একজন মহিলা ডাক্তার। মিডওয়াইফদের মতে স্বাভাবিক ডেলিভারী হওয়ার কারণে ইতিমধ্যে চকরিয়ায় হাসপাতালে প্রতিদিনই গ্রাম গঞ্জের মহিলারা ধাবিত হচ্ছেন। এতে তাদের পরিবার আর্থিক ভাবে উপকৃত হচ্ছেন। একসময় বেশিরভাগ গর্ভবতী মহিলা ডেলিভারীর জন্য বেসরকারী হাসপাতালমুখী ছিলেন। সেখানে গেলেই নানা পরিক্ষা নিরীক্ষা করে ডাক্তারেরা জানিয়ে দিতেন সিজার/অপারেশন করতে হবে। নাহলে মা-সন্তান দুজনরই ঝুকি আছে। ফলে বাধ্য হয়ে ওইসব পরিবার সিজার করতেন। এতে গুনতে হত মোটা অংকের টাকা। এ টাকা যোগাড় ওইসব পরিবারের কিযে ভোগান্তি হয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার ছাড়া কারো পক্ষে বুঝা সম্ভব নয়। চকরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ডাক্তার মোহাম্মদুল হক জানিয়েছেন তিনি যতদিন আছেন ততদিনই এই সেবা দিয়ে যাবেন। এছাড়া অনেক সময় জটিল প্রসব বেদনায় ভুগা রোগীদের সিজার করা ছাড়া উপায় থাকেনা। তখন তাদেরকে অন্যান্য হাসপাতালে রেফার করতে হয়। কর্তৃপক্ষ চকরিয়া হাসপাতালের জন্য একজন এনেস্তেসিয়া বিশেষজ্ঞ থাকলে চকরিয়া হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটারে এসব জটিল রোগীদের সিজার করা সম্ভব হত। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। গত ১৫ অক্টোবর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মিলনায়তনে চকরিয়া পেকুয়া আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম এম.এ, উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সামশুল তাবরীজ ও চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাকের মোহাম্মদ জুবাইরসহ হাসপাতালের মিডওয়াইফ (ধাত্রী) দের উৎসাহিত করানোর লক্ষ্যে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় আরো অন্তত ২ জন মিডওয়াইফ (ধাত্রী) বাড়ানোসহ তাদের সুযোগ সুবিধার ব্যাপারে সুবিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন মাননীয় সংসদ সদস্য। অথচ ডাক্তারেরা ইচ্ছে করলে একজন গর্ভবর্তী মহিলার সিজার ছাড়া সন্তান প্রসব করতে পারে তার একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। এজন্যই অপ্রাসঙ্গিক হলেও লিখতে হয়েছে যে, পীরের স্ত্রী মুরিদ হয়না, আলেমের বাড়ীতে মিলাদ হয়না, ডাক্তারের স্ত্রীর সিজার হয়না। এক্ষেত্রে পীর সাহেবের স্ত্রী, পুত্র ও কন্যারা হক্কানী পীরের অনুসারী হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। সেক্ষেত্রে হয়তো তারা ঘোষণা দিয়ে মুরিদ হয়না। আর বিজ্ঞ আলেমরা প্রতিদিনই কোন না কোন স্থানে অনুষ্ঠিত মিলাদে উপস্থিত হয়ে ধর্মীয় নিয়মনীতি মুসলমানদের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে বয়ান করেন বিধায় তাদের পরিবারে মিলাদ হয়না। আমার এ লেখা নিয়ে কারো অনুভুতিতে আঘাত লাগলে আমি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ জানিয়ে ইতি টানছি।
পাঠকের মতামত: