ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

৩০০ বছর আগের হাতে লেখা পাঁচটি কোরআন শরীফের সন্ধান

ডেস্ক রিপোর্ট ::
বগুড়া জেলার পল্লীতে হাতে লেখা পাঁচটি কোরআন শরীফের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। পাঁচটি কোরআনের মধ্যে চারটিই পাওয়া গিয়েছে জেলার কাহালু উপজেলার মুরইল ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসায়। বাকি একটি পাওয়া গেছে বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়া ইউনিয়নের ঈদগাহ্ মাঠপাড়া গ্রামে। পাঁচটি কোরআনের মধ্যে চারটিই পাঠযোগ্য। বাকি একটির পাতাগুলো ছিঁড়ে গেছে।

কাহালুর মুরইলে পাওয়া কোরআন শরীফের পাতাগুলো এখনও মসৃণ এবং রঙও চকচকে। তবে এরুলিয়ার গ্রামে পাওয়া কোরআন শরীফের পাতাগুলো একেবারেই বিবর্ণ এবং ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। ফলে কাছাকাছি দুই এলাকায় পাওয়া বিরল ওই কোরআন শরীফগুলো যে এক সময়ের লিখিত নয় সেটা স্পষ্ট বোঝা যায়।

সংরক্ষণকারী এবং স্থানীয়দের বর্ণনা অনুযায়ী, এরুলিয়ার ঈদগাহ্ মাঠপাড়া গ্রামে পাওয়া কোরআন শরীফের বয়স ৩০০ বছর হতে পারে। অন্যদিকে কাহালুর মুরইল মাদ্রাসায় পাওয়া অপর চারটি কোরআন শরীফ কত আগের সে সম্পর্কে কেউ ধারণা দিতে পারেন নি।

অবশ্য স্থানীয়রা বলছেন, মাদ্রাসাটি যেহেতু প্রায় একশ বছর আগে ১৯২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত তাই কোরআন শরীফগুলো তারও ১০-১৫বছর আগের হতে পারে।

মুরইল ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার শিক্ষকদের বর্ণনা অনুযায়ী শুরুর দিকে যারা প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তারা ভারতের দেওবন্দ এবং সাহারানপুর মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেছেন। শিক্ষাজীবন শেষে দেশে ফেরার পথে তারা হয়তো হাতে লেখা কোরআন শরীফগুলো সঙ্গে এনেছেন।

কিভাবে বগুড়া সদরের এরুলিয়ায় ৩০০ বছর আগের হাতে লেখা কোরআন তা সঠিকভাবে কেউ বলতে না পারলেও স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, সদরের এরুলিয়া গ্রামে হযরত শাহ মিসকীন মাহমুদ (রহ.) নামে এক বুজুর্গ ওলি ছিলেন। তার খানকায় তখন দ্বীন শিক্ষা দেওয়া হতো। ইলমে দ্বীনের প্রচার-প্রসারে ওই ওলির খানকা এই অঞ্চলের দ্বীনদার মুসলমানদের কাছে প্রসিদ্ধ ছিল।

এরুলিয়া ইউনিয়নের ঈদগাহ মাঠ পাড়ার আবু তালেব ফকিরের পূর্ব পুরুষ আব্বাস ফকির স্থানীয় দরগার খাদেম ছিলেন। আবু তালেব ফকির জানান, তাদের বংশের পাঁচ পুরুষ থেকে তাদের বাড়িতে হাতে লেখা কোরআন শরিফ ও পীরের ব্যবহৃত পায়ের খড়ম সংরক্ষণ করা হচ্ছে। তবে সংরক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থার অভাবে অনেক আগেই কোরআন শরীফটির মলাট ও বাঁধাই খুলে গেছে। পাতাগুলোও আলাদা আলাদা হয়ে গেছে।

ওই মাজারের খাদেম মরহুম আব্বাস ফকিরের পরিবার ও গ্রামের অনেকের বিশ্বাস যে, হাতে লেখা কোরআন শরীফ ও পীরের ব্যবহৃত পায়ের খড়ম হযরত শাহ মিসকীন মাহমুদের (রহ.) এবং তা কমপক্ষে ৩০০ বছরের আগের হবে বলে তারা মনে করেন। কালের গর্ভে হযরত শাহ মিসকীন মাহমুদের (রহ.) খানকা হারিয়ে গেলেও খানকাটির সামনে ছিল সান বাঁধানো দিঘি। সান এবং সিঁড়ি না থাকলেও দিঘিটি এখনও আছে।

কাহালু উপজেলার বড়মহর গ্রামে মোঃ আকরাম হোসেন নামে এক মাদ্রাসা শিক্ষকের বাড়িতে পাওয়া গেছে দুটি হাতে লেখা প্রাচীন কোরআন শরীফ। একটিতে রয়েছে উঁই পোকা খাওয়ার চিহ্ন। তবে আয়াত ও আরবি ক্যালিওগ্রাফিতে লেখা হরফগুলো ঠিক আছে। মোঃ আকরাম হোসেন জানান, কোরআন শরিফ দুটি তিনি মুরইল ইসলামিয়া সিনিয়র মাদরাসার লাইব্রেরির বাতিল কাগজের স্তুপ থেকে সংগ্রহ করেছেন। এর আগে মাওলানা আ ন ম আজিজুর রহমান ও কবি মোঃ গাজিউল হক মুরইল মাদরাসায় হাতে লেখা কোরআন শরিফ থাকার খোঁজ দিয়েছিলেন। তাদের কথা অনুযায়ী ২২ জুলাই ওই মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা যায়, হাতে লেখা আরও দুটি কোরআন শরীফ লাইব্রেরি কক্ষের সেলফে বাঁধাই করা অবস্থায় সংরক্ষণ করা হয়েছে।

হাতে লেখা কোরআন শরীফগুলো কিভাবে এ মাদ্রাসায় এসেছে জানতে চাইলে মাদ্রাসার বর্তমান অধ্যক্ষ মাওলানা আবুল কালাম আব্দুল হক জানালেন, দ্বীনি এই প্রতিষ্ঠানটি ১৯২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত। শুরুতে মুরইল মুসলিম জমিদার পরিবারের অনেক অবদান ছিল। অনেকের ধারনা মুসলিম জমিদার পরিবারে অনেক দ্বীনদার মানুষ ছিলেন। যাদের সংগ্রহে হাতে লেখা প্রাচীন কোরআন শরিফ ছিল। যা তারা এই মাদরাসায় দান করেছেন।

লেখক, সাংবাদিক ও গবেষক আব্দুর রহিম বগড়া প্রথম এই খবরটি জানতে পারেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে খোঁজ করতে গিয়ে এই কোরআন শরীফের সন্ধান পান। বেশ কয়েকবার এসব এলাকায় গিয়ে হাতে লেখা এসব কোরআন শরীফ দেখেছেন। তিনি বলেন, তবে সংরক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থার অভাবে অনেক আগেই কোরআন শরীফটির মলাট ও বাঁধাই খুলে গেছে। অবিলম্বে এসব সংরক্ষণ করা উচিত।

পাঠকের মতামত: