নিজস্ব প্রতিবেদক
ভারত সীমান্ত বেনাপোল, সোনা মসজিদ, ভোমরা ও হিলি স্থল বন্দরকেন্দ্রিক অন্তত ১৫ আমদানিকারকের নিয়ন্ত্রণে দেশের পেঁয়াজের বাজার। সেই আমদানিকারকদের কারসাজিতে অস্থির পেঁয়াজের বাজার। বার বার বাজার অস্থির করে তুললেও অধরাই থাকছে সেই আমদানিকারকেরা।
আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা জানান, ভারত সীমান্তের ওপারে রয়েছেন ১০-১৫ জন রপ্তানিকারক। এপারে বাংলাদেশের অংশে রয়েছে অন্তত ১৫ জন আমদানিকারক। সেই ১৫ জনের নিয়ন্ত্রণে পেঁয়াজের দেশের পেঁয়াজের বাজার। আমদানিকারকদের কাছ থেকে মধ্যস্বত্বভোগী দুইটি পক্ষ দেশের আড়ত ও ব্যবসায়ীদের কাছে পেঁয়াজ বিক্রি করেন। আড়তদারী দেয়।
চাক্তাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আহসান খালেদ গতকাল পূর্বকোণকে বলেন, ‘সীমান্তের স্থল বন্দরে আমদানিকারক ও মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে মজুত থাকা পেঁয়াজ এখনো সরবরাহ করা হচ্ছে। দাম বাড়ানোর পর এখন আর আড়তদারি নেই। কিনে আনতে হচ্ছে। বেশি দামে কিনে আনতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বাজারের সঠিক নজরদারি ও মনিটরিংয়ের অভাবে হিমশিম খেতে হচ্ছে ব্যবসায়ী এবং ভোক্তাদের। কয়েক হাত ঘুরে বাজার ও আড়তে আসতে আসতে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেড়ে যায়।’
এদিকে, বেশি দামে পেঁয়াজ কিনে এখন বিপাকে পড়েছে খুচরা ব্যবসায়ীরা। পকেট কাটা যাচ্ছে ভোক্তাদের। ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর হু হু করে বেড়ে যায় পেঁয়াজের দাম। যে পেঁয়াজ আকার ও মানভেদে ৩৬-৩৮ টাকায় বিক্রি করা হয়েছিল। সেই পেঁয়াজ দুইদিনের ব্যবধানে ৭০ টাকায় পৌঁছে যায়।
খুচরা বাজারে দেখা যায়, প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। নিম্নমানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা দরে।
গতকাল বৃহস্পতিবার পেঁয়াজের বড় পাইকারি মোকাম খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাই আড়তে উন্নতমানের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০-৬২ টাকা দরে। মধ্যমানের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫০-৫৫ টাকায়। পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কমে আসলেও তার প্রভাব পড়েনি খুচরা বাজারে।
বহদ্দারহাট বাজারের ব্যবসায়ী কামাল হোসেন বলেন, ‘৬৫ টাকা দরে পাইকারি বাজার থেকে কিনেছি। ৪০ কেজির মধ্যে ২-৩ কেজি পচা ছিল। ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি না করলে লোকসান গুনতে হবে।’
২নং গেট ষোলশহর কর্ণফুলী কমপ্লেক্স কাঁচা বাজারে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা দরে। ব্যবসায়ীরা জানায়, পাইকারি বাজার থেকে ৬৫-৭০ টাকায় কিনেছি। তিন কেজির বেশি পচে গেছে। ৮০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। বেশি দামে পেঁয়াজ কিনে এখন বিপাকে পড়েছে খুচরা ব্যবসায়ীরা। পাইকারিতে দাম কমলেও খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েনি।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি মোকামের আড়তদার মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, ‘গতকাল ১০ ট্রাক পেঁয়াজ এসেছে। এখন নতুন এলসি নেই। সবই আগের দামে কেনা পেঁয়াজ। কম দামে কেনা পেঁয়াজ বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আমদানিকারক ও মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজির কারণে বাজার অস্থির হয়ে ওঠেছে।’
চাক্তাই আড়তে ৮ ট্রাক পেঁয়াজ ঢুকেছে। প্রতি ট্রাকে ১৩ টন করে পেঁয়াজ থাকে। তার সাথে রয়েছে কয়েক দিনের আগে মজুত থাকা পেঁয়াজও। কিন্তু গত দুই দিনের পাইকারি মোকামে বেকাকেনা খুবই কম। গত মঙ্গলবার ৭০ টাকায় বিক্রি করা পেঁয়াজ এখন ৬২-৬৩ টাকায় নেমে এসেছে।
চাক্তাই আড়তদার সমিতির আহসান খালেদ বলেন, ‘কাস্টমসের কাছে সব তথ্য রয়েছে। সরকার আমদানিকারকদের চিহিৃত করে এবং তাদের সঙ্গে আমদানি দর বেধে দিলে বাজার অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকতো। খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম এখনো ৬০ টাকার কাছাকাছি থাকতো।’
খাতুনগঞ্জের আড়তদার মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, ‘গতকাল বেচাকেনা কম ছিল। মঙ্গলবারের তুলনায় ২০-৩০ শতাংশ বেচাকেনা হয়েছে। বেচাকেনা কম থাকায় দাম বাড়েনি। প্রতিকেজি পেঁয়াজ মান ও আকারভেদে ৬০-৬৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। মঙ্গলবার সেই পেঁয়াজ ৬৫-৭০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল।’
খাতুনগঞ্জ হামিদ উল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস পূর্বকোণকে বলেন, ‘মঙ্গলবার প্রচুর পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। এসব পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের হাতে রয়েছে। ভোক্তাদের কাছেও কয়েকদিন খাওয়ার মতো পেঁয়াজ রয়েছে। এসব কারণে দাম বাড়ার আর সম্ভাবনা নেই।’
এদিকে, পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ায় মিয়ানমার, চায়না, তুরস্ক ও পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি খুলেছেন আমদানিকারকেরা। নতুন এলসি করা পেঁয়াজ বাজারে আসতে আরও অন্তত ১৫ দিন সময় লাগবে। তবে মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ কয়েক দিনের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে আসতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত সরকার পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য ৮৫০ ডলার বেঁধে দিয়েছিল। সেই সময়েও বাজার অস্থির হয়ে ওঠেছিল। ২৯ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর বাজার একেবারে আকাশচুম্বিতে পৌঁছে যায়। একলাফে পাইকারি বাজারে ভারতীয় আমদানি করা পেঁয়াজের দর ৯০-৯৫ টাকায় পৌঁছে। দুই দফায় পাইকারি বাজারে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ অভিযানের পর পাইকারিতে দর কমে ৭০-৭৫ টাকা নেমে আসে। তারপরও ক্রমান্বয়ে বেড়ে পেঁয়াজের দাম ২৫০ টাকা ছুঁয়েছিল। তাতেও সেই ১৫ আমদানিকারকের কারসাজি ছিল বলে জানিয়েছেন আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা।
পাঠকের মতামত: