নিউজ ডেস্ক :: নতুন সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নের প্রতিবাদে ১০ জেলায় যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন শ্রমিকরা। পূর্ব কোনো ঘোষণা ছাড়াই এ ধর্মঘট পালন করছেন তারা। এতে হঠাৎ এ ধর্মঘটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।
সোমবার সকাল থেকে তাদের আকস্মিক এ কর্মসূচির কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন দূরপাল্লার যাত্রীরা। অনেকেই বাসস্ট্যান্ডে এসে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে ফিরে গেছেন বাস না পেয়ে।
যশোর, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, মাগুরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গার পরিবহন শ্রমিকরা সকাল থেকে ‘স্বেচ্ছায়’ এ কর্মবিরতি পালন করছেন।
খুলনা বিভাগীয় শ্রমিক ফেডারশনের যুগ্ম সম্পাদক মোর্তজা হোসেন বলেন, শ্রমিকরা কাউকে ইচ্ছা করে হত্যা করে না। অনিচ্ছাকৃত দুর্ঘটনার জন্য নতুন সড়ক আইনে তাদের ঘাতক বলা হচ্ছে। নতুন আইনের অনেক ধারার ব্যাপারে শ্রমিকদের আপত্তি রয়েছে। সরকার সমাধানের কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় তারা আন্দোলনে নেমেছে।
খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি নুরুল ইসলাম জানান, নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকরের প্রতিবাদে শ্রমিকরা বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। নতুন পরিবহন আইনে কোনো কারণে দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে চালকদের মৃত্যুদণ্ড এবং আহত হলে ৫ লাখ টাকা দিতে হবে। এত টাকা দেয়ার সামর্থ্য শ্রমিকদের নেই। তাই তারা নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের পর তা কার্যকর করার দাবি জানান।
শ্রমিকরা ফাঁসি ও যাবজ্জীবন দণ্ডের ভয়ে গাড়ি চালানো বন্ধ করে দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে তাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই এ ধর্মঘটে নেমেছেন বলে জানান তিনি।
এদিকে কুষ্টিয়া জেলা বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাহাবুবুল হক বলেন, নতুন সড়ক আইন কার্যকরের প্রতিবাদে মোটর শ্রমিকরা বাস চলাচল বন্ধ করে দেন। শ্রমিকরা চান- এ আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধন করে তার পর কার্যকর করা হোক।
তিনি জানান, আতঙ্ক নিয়ে সড়কে বাস চালাবেন না। খুলনা কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তে শ্রমিকরা গাড়ি চালাচ্ছেন না। ঢাকার সঙ্গেও এ ব্যাপারে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
যশোর জেলা পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর রশিদ বলেন, ১৪ নভেম্বর যশোরে এক সমাবেশ থেকে ২০১৮ সালের সড়ক আইন সংশোধনের দাবি জানিয়েছিলেন তারা। এর পর রোববার থেকে যশোরের ১৮ রুটের শ্রমিকরা কর্মবিরতি শুরু করেন। পরে সোমবার সকালে অন্যান্য জেলাতেও কর্মবিরতি শুরু হয়।
যশোর-বেনাপোল ও যশোর-সাতক্ষীরার অভ্যন্তরীণ রুটে কোনো যাত্রীবাহী বাস চলাচল না করলেও ঢাকা-কলকাতা ও বেনাপোল থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও দেশের অন্যান্য স্থানে দূরপাল্লার বাস চলাচল করছে।
এ ছাড়া প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, ইজিবাইক, মাহেন্দ্র, নসিমন-করিমন ছাড়াও ছোট যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে যশোরে।
এদিকে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ মেইন বাসস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা গেছে, সড়কে মাহেন্দ্র, ইজিবাইকের সিরিয়াল। যাত্রীবাহী বাস চলাচল না করায় যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছাতে এ যানবাহনগুলো ব্যবহার করছেন।
সজল হোসেন নামে এক যাত্রী বলেন, স্বামী-স্ত্রীর দুজনের কোলে দুই বাচ্চা। চিকিৎসার জন্য দুই শিশু ও স্ত্রীকে নিয়ে যশোর যেতে হবে। ঝিনাইদহ থেকে এসেছি। ধর্মঘটের ব্যাপারে আগে থেকে জানলে আজ বাসা থেকে বের হতাম না।
মহেশপুরের স্থানীয় সংবাদকর্মী শহিদুল ইসলাম এসেছিলেন কালীগঞ্জে। তিনি বলেন, কালীগঞ্জ থেকে মহেশপুর প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। এত দূরের পথ স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়াটাই অনেক কষ্টকর।
কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর উপজেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রজব আলী মন্টু বলেন, নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকরের প্রতিবাদে শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছে। নতুন পরিবহন আইনে দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে চালকের মৃত্যুদণ্ড এবং আহত হলে ৫ লাখ টাকা দিতে হবে। এত টাকা শ্রমিকরা কোথায় পাবেন। বাস চালিয়ে তারা জেলখানায় যেতে চান না।
ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মো. হামানুজ্জামান বলেন, শ্রমিকদের অঘোষিত কর্মবিরতিতে লোকাল রুটগুলোতে বাস-মিনিবাস চলছে না। তবে দূরপাল্লার রুটে যানবাহন চলাচল করছে।
অন্যদিক চুয়াডাঙ্গায় সোমবার সকাল থেকে অভ্যন্তরীণ রুটের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
সকাল ১০টার পর থেকে ঢাকা-চুয়াডাঙ্গা রুটের বাসও চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে বলে স্থানীয় পরিবহন শ্রমিক নেতা জানিয়েছেন।
নতুন চালু হওয়া সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে এই অনানুষ্ঠানিক কর্মবিরতি অনির্দিষ্টকালের জন্য বলে জানিয়েছেন শ্রমিক নেতা মোর্তজা হোসেন।
এ ছাড়া বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, মাগুরা, নড়াইল ও মেহেরপুরে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে।
গত বছর ঢাকায় বাসচাপায় দুই ছাত্রছাত্রীর মৃত্যুর পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনের মুখে নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংসদে পাস হয়।
বেপরোয়া মোটরযানের কবলে পড়ে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড, সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এটি এ বছর ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর করার কথা বলা হয়।
পাঠকের মতামত: