ঘাড় ও মেরুদণ্ডের ব্যথা নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন, এমন রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আশঙ্কার কথা হলো, এই রোগীদের মধ্যে অধিকাংশই তরুণ। যুক্তরাষ্ট্রে এক গবেষণায় সম্প্রতি জানা গেছে, এ সমস্যার অন্যতম কারণ দীর্ঘ সময় ধরে স্মার্টফোন ব্যবহার করা। দ্য স্পাইন জার্নালে গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণাপত্রের অন্যতম লেখক, লস অ্যাঞ্জেলেসের স্পাইনাল নিউরোসার্জন টড ল্যানম্যান বলেন, ‘যে তরুণেরা ঘাড় ও মেরুদণ্ডের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের দরজায় হাজির হচ্ছেন, এই বয়সে তাদের এমন হওয়ার কথা নয়। দিনের একটা বড় সময় ধরে মাথা নিচু করে মোবাইল ফোনের পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকায় তারা এ সমস্যায় ভুগছে।’ চিকিৎসকেরা ঘাড়ের এ সমস্যাকে আজকাল ‘টেক্সট নেক’ বলে অভিহিত করছেন।
ল্যানম্যান আরও বলেন, ‘এর চেয়েও আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছে এ সময়ের শিশুরা। শরীরের গঠন পুরোপুরি স্থিতিশীল হওয়ার আগেই যে শিশুরা দিনের অধিকাংশ সময় মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকছে, ভবিষ্যতে তাদের মেরুদণ্ডের গঠন বদলে যাবে কি না, আমরা জানি না। আজকে যে শিশুর বয়স ৮, হয়তো বয়স ২৮ হওয়ার আগেই তাকে অস্ত্রোপচার করাতে হবে।’
স্মার্টফোনে লেখার সময় সাধারণত মানুষের ঘাড় প্রায় ৪৫ ডিগ্রি বাঁকা হয়। বসা অবস্থায় বাঁকা হয় আরও বেশি। স্বাভাবিক অবস্থানে মানুষের মাথার ওজন ১০ থেকে ১২ পাউন্ড। কিন্তু ঘাড় ১৫ ডিগ্রি পর্যন্ত বাঁকা করলে ঘাড়ের ওপর প্রায় ২৭ পাউন্ড চাপ পড়ে। ৬০ ডিগ্রি বাঁকা হলে মাথার ওজন দাঁড়ায় প্রায় ৬০ পাউন্ড।
ল্যানম্যানের মতে, জীবনযাপনে খানিকটা পরিবর্তন আনলে আর একটু সচেতন হলেই এ সমস্যা থেকে মুক্তি মিলতে পারে। তিনি বলেছেন, মাথা সোজা রেখে অর্থাৎ ‘আই লেভেল’-এ মোবাইল ফোন রেখে লেখার অভ্যাস করাই শ্রেয়। এ ছাড়া মোবাইল ফোনে লেখার সময় তিনি দুই হাতের বুড়ো আঙুল ব্যবহার করারও পরামর্শ দিয়েছেন। এতে করে শরীরের ভারসাম্য ঠিক থাকবে। গবেষণায় জানা গেছে, সব সময় এক হাতে লিখলে শরীরের ভারসাম্য ব্যাহত হতে পারে।
‘টেক্সট নেক’ সমস্যা থেকে বাঁচতে আরও একটা মজার বুদ্ধি বাতলে দিয়েছেন ল্যানম্যান। তিনি বলেন, ‘আপনি যখন ঘাড় বাঁকা করে মোবাইল ফোনে লেখেন, সেই সময়ের একটা ছবি তুলে রাখুন। ছবিটা আপনার ফোনের ওয়ালপেপার হিসেবে ব্যবহার করুন। এতে করে মোবাইল ফোনের দিকে তাকালেই আপনার ঘাড় সোজা রাখার কথা মনে পড়বে।’
সূত্র: ডেইলি মেইল
পাঠকের মতামত: