লামা প্রতিনিধি:
গত দুুই দিনের মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের ফলে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে বান্দরবানের লামা পৌর এলাকাসহ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মাতামুহুরী নদী, লামাখাল, ইয়াংছা খাল, বগাইছড়িখাল ও পোপা খালসহ পাহাড়ি ঝিরিগুলোতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে বিভিন্ন পেশাজীবির প্রায় ৫ হাজার মানুষ। কর্মহীন হয়ে বেকায়দায় পড়েছে শ্রমজীবি মানুষগুলো। বর্ষণের পানির স্রোতে সড়ক ভেঙ্গে ও সড়কের উপর পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ে আভ্যন্তরীন সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধস দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার বিকাল নাগাদ মাতামহুরী নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছেছে। এ কারনে নদীর দু’পাড়ে বসবাসরত বিশেষ করে পৌরসভা এলাকার শীলেরতুয়া মার্মা পাড়া, পশ্চিমপাড়া, লামা বাজারপাড়া, লাইনঝিরি ফকিরপাড়া, মাষ্টারপাড়া, অংহ্লাপাড়া, বৈল্লারচর, মেরাখোলা, মিশনপাড়ার হাজার হাজার মানুষ নদী ভাঙ্গন আতংকে রয়েছে। গত দ্’ুবর্ষায় এ নদী ভাঙ্গনে গৃহহারা হয়েছে শতাধিক পরিবার। ইতিমধ্যে ভারী বর্ষণে উপজেলার বিভিন্ন স্থানের পাহাড় ধসে প্রান হানির আশঙ্কায় উপজেলা প্রশাসন, লামা পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোর পক্ষ থেকে মাইকিং করে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদেরকে নিরাপদে আশ্রয় নেয়ার জন্য দফায় দফায় বলা হয়েছে। এ টানা বর্ষণ অব্যাহত থাকলে ভয়াবহ বন্যাসহ পাহাড় ধসে মানবিক বিপর্র্যয়ের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, গত সোমবার বিকাল থেকে মুষুলধারে প্রবল বর্ষণ শুরু হয়। আর এ টানা বর্ষণের ফলে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে উপজেলায় অবস্থিত নদী, খাল ও ঝিরির পানি ফুঁসে উঠে বুধবার বিকাল নাগাদ লামা পৌর এলাকার নয়াপাড়া, বাসস্টেন্ড, টিএন্ডটি পাড়া, বাজারপাড়া, লামা বাজার, চেয়ারম্যান পাড়ার একাংশ, ছোট নুনারবিলপাড়া, বড় নুনারবিলপাড়া, লাইনঝিরি, ফকিরপাড়া, কলিঙ্গাবিলপাড়া, উপজেলা পরিষদের আবাসিক কোয়ার্টার সমূহ, থানা এলাকা, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ইয়াংছা বাজার, হারগাজা, বগাইছড়ি, বনপুর ও লামা সদর ইউনিয়নের মেরাখোলা, বৈল্লারচর, অংহ্লাপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে পৌর এলাকার হলিচাইল পাবলিক স্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারী বেসরকারী সংস্থার কার্যালয়সহ সহ¯্রাধিক ঘরবাড়ী রয়েছে। আবার অতি বৃষ্টির কারনে ধ্বস দেখা দেয় বিভিন্ন ইউনিয়নে অবস্থিত পাহাড়গুলোতে। পাহাড় ধসে পড়ে বেশ কয়েকটি অভ্যন্তরীন সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাকের হোসেন মজুমদার জানান, পাহাড়ি ঢলের পানিতে ইয়াংছা বাজার, হারগাজা, বগাইছড়ি এলাকা প্লাবিত হয়। প্রবল বর্ষনে পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ে ও বর্ষণের পানির স্রোতের টানে ইয়াংছা-বনপুর, বগাইছড়ি ও সাফেরঘাটা সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে লামা-ফাঁসিয়াখালী সড়কের বিভিন্ন স্থানে। আজিজনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন জানায়, প্রবল বর্ষনে ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে গ্রামীণ রাস্তাঘাটের ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এছাড়া নদী, খাল ও ঝিরির পানি বৃদ্ধি পেয়ে লামা পৌরসভা, লামা সদর, গজালিয়া ও রুপসীপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানের প্রায় ৫ হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে দুর্ভোগে রয়েছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। লামা-আলীকদম সড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আলীকদমের সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। বন্যার আশংকায় স্থানীয়রা শংকিত হয়ে পড়েছেন। বাজারের ব্যবসায়ীরা তাদের মালামাল এবং উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি দপ্তর সমুহ কন্যার আশংকাং মালামাল ও নথিপত্র নিরাপদে সরাদে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
লামা বাজার পাড়ার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী মো. সেলিম, জাকির হোসেন, পিপলু বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ৪-৫ বার পাহাড়ি ঢলের পানিতে ঘরবাড়ী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়। ঢলের পানি ওঠার সময় ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল নিয়ে বেকায়দায় পড়তে হয়। এমনকি বড় ধরনের আর্থিক ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তাই লামাকে বন্যা মুক্ত করতে নদী গতি পরিবর্তন করা অতিব জরুরী।
লামা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক জাপান বড়–য়া জানান, গত দুই দিনের বর্ষণে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঢলের পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্যবসায়ী ও পরিবারগুলো তাদের মালামাল নিরাপদে সরিয়ে নিচ্ছেন। দ্রুত পানি বৃদ্ধির কারনে কেউ কেউ আবার ক্ষতির সম্মুখিন হয়। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, অতি বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলের কারণে লামা পৌর এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে চলতি মৌসুমের বীজতলা এবং বিভিন্ন ফসলাদি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে চাষীরা হতাশ হয়ে পড়েছে।
পাহাড়ি ঢলে লামা পৌর এলাকার নিচু এলাকা প্লাবিত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে পৌরসভা মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, পৌরসভার কাউন্সিলরদের সমন্বয়ে বন্যার পরিস্থিতি সার্বক্ষনিক তদারকি করার জন্য কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। পাহাড়ী ঢলে প্লাবিত বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে আনার জন্য নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রিত ও পাহাড়ী ঢলে প্লাবিতদের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে মাইকিং করে বন্যায় প্লাবিত ও পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদেরকে নিরাপদে আশ্রয় গ্রহনের জন্য বলা হয়েছে।
লামা লামা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান থোয়াইনু অং চৌধুরী জানান, বন্যা কবলিতদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ইতিমধ্যে পৌর এলাকাসহ ইউনিয়নগুলোতে মাইকিং করে জনসাধারনকে নিরাপদে আশ্রয় নেয়ার জন্য বলা হয়েছে বলে জানান তিনি।
পাঠকের মতামত: