ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

লামার ফাঁসিয়াখালীতে অবৈধ বালু উত্তোলনে ৫ বসতবাড়ী বিলীন: ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে শতাধিক পরিবার

Sand Photo 27.05.17 (3)মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা ::

লামার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের খুটাখালীর ছড়া খালের লাইল্যারমার পাড়া থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে প্রতিবছর ভাঙ্গছে খালের দু’পার। গত কয়েক বছরের ব্যাপক ভাঙ্গনে ৫টি বাড়ী সম্পূর্ন বিলীন ও ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে রয়েছে খালপাড়ের ২৫ থেকে ৩০টি বসতভিটা সহ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ ও বৌদ্ধ মন্দির।

এছাড়া ইউনিয়নের আরো তিন শতাধিক পয়েন্ট থেকে সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সরকার দলীয় নেতা ও স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বালু উত্তোলন চলছে। বালু নৈরাজ্যের কারণে ইউনিয়নের শত কোটি টাকার রাস্তাঘাট, ব্রিজ ও কালভার্ট নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানায় স্থানীয়রা।

যাদের বাড়ি-ঘর বিলীন হয়ে গেছে তারা হলেন, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের লাইল্যারমার পাড়ার সাবের আহম্মদ, মৃত গুরা মিয়া, আজগর আলী, মৃত মিয়া ও সেকান্দার। চলতি বর্ষায় বাড়ি-ঘর বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন লাইল্যারমার পাড়া ও সাপের গারা এলাকার আবু তালেব, আফসার, জাকের আহমদ, আক্তার হোসেন, আব্দুল কাদের, নুর বসর, মিজানুর রহমান, মোঃ নাসির উদ্দিন সহ অনেকে।

এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, প্রতিবছর জানুয়ারী থেকে মে মাস পর্যন্ত স্থানীয় ও বহিরাগত প্রভাবশালী একটি বালু উত্তোলনের সিন্ডিকেট সেলু ইঞ্জিন দিয়ে খুটাখালীর ছড়া খাল সহ আরো ৪টি খাল থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে থাকেন। প্রতিদিন গড়ে ৫০ থকে ৭০ ট্রাক বালু উত্তোলন করে নিয়ে যায়।

শুক্রবার ২৬মে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে ১নং ওয়ার্ড এর লাইল্যার মার পাড়ার মসজিদের পাশের অংশের খালের মাঝে বালু উত্তোলন করে পাচারের উদ্দেশ্যে স্তূপ করে রেখেছে। পুরো খাল জুড়ে রয়েছে বালুর স্তূপ।

নদী গর্ভে বিলীন হওয়া বাড়ির মালিক মনর আলী এখনও আর একটি বাড়ী করতে পারেনি বলে জানান। আরো বলেন, দুই বছর পূর্বে আমার বাড়ি খালের ভাঙ্গনের কারণে বিলীন হয়ে যায়। ভাঙ্গনের পূর্বে বাড়ির নিচের অংশ থেকে ব্যাপক হারে বালু উত্তোলন করেছিল। সে বছর বর্ষায় পাড় ভেঙ্গে আমার বাড়ি বিলীন হয়ে যায়।

এলাকার ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার নাসির উদ্দিন বলেন, গত কয়েক বছরে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের ফলে আমার পৈত্রিক ভিটা সহ পাঁচটি বাড়ি সম্পূণ বিলীন হয়ে গেছে। অন্যান্য বছরের চেয়েও চলতি বর্ষা মৌসুমে খালের পাড় আরো ভয়াবহ ভাঙ্গতে পারে। চলতি বর্ষা মৌসুমে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাপের গারা মসজিদ, বৌদ্ধ মন্দির সহ খালপাড়ের আরো ২৫ থেকে ৩০টি বসত ভিটা নদী গর্ভে হারিয়ে যেতে পারে।

নাম প্রকাশ না করা সত্ত্বে লাইল্যারমার পাড়া কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, এলাকার আবুল হোসেন, পিতা- উলা মিয়া, পল্লী চিকিৎসক আজিজুল হক, পিতা- আব্দুস শুক্কুর, মোঃ জোবায়ের, পিতা- আহমদ উল্লাহ মিয়া, জাকের আহমদ, পিতা- উলা মিয়া, আব্দুল কাদের, পিতা- সাবের আহমদ বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত। দ্রুত বালু পাচার বন্ধে প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন স্থানীয়রা। তবে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা এই বিষয়ে কোন বক্তব্য প্রদান না করে সংবাদ পরিবেশন না করতে অনুরোধ করেন।

এ ব্যাপারে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের চেয়্যারম্যান জাকের হোসেন মজুমদার বলেন, লাইল্যার মার পাড়ার খুটাখালীর ছড়া খাল থেকে অপরিকল্পিত ভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে এবং আরো হবে। ইউনিয়নের আরো কয়েকটি খাল থেকে একই ভাবে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বালু পাচারকারীরা অনেক প্রভাবশালী ও বেপরোয়া। প্রশাসন চাইলে বালু পাচার বন্ধ করে দিতে পারে।

লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার খিন ওয়ান নু বলেন, লামা উপজেলার কোথাও বালু উত্তোলনের সরকারী ইজারা দেওয়া হয়নি। বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ বেআইনী। লাইল্যার মার পাড়াসহ অন্যান্য যে সকল জায়গা থেকে বালু উত্তোলন করছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

পাঠকের মতামত: