ইমাম খাইর, কক্সবাজার :: লকডাউনের কারণে তিন মাসের অধিক সময় দোকানপাট বন্ধ থাকায় কক্সবাজার শহরে প্রায় ১২ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী ছাটাই হয়েছে। যারা আছে তারাও চাকুরি হারানোর আতঙ্কে দিন পার করছে।
ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ থাকায় শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে অনেকে। কর্মহীন সময় কাটাচ্ছে দোকান মালিক, কর্মচারী, শ্রমিকেরা। অধিকাংশ দোকানদার অর্থ কষ্টে দিন পার করছে। দোকান ও বাসা ভাড়া নিয়ে রয়েছেন টেনশনে। -সরেজমিন হালচাল জানতে গিয়ে এসব খবর জানিয়েছে দোকানদার, দোকান মালিক, শ্রমিক ও কর্মচারীরা।
তাদের দেয়া তথ্য মতে, কক্সবাজার শহরে ৫ হাজারের অধিক দোকানপাটে ২০ হাজারের বেশী শ্রমিক-কর্মচারী রয়েছে। দোকানগুলোর বেশিভাগ উপভাড়ায়। চলছে ব্যাংক, বিভিন্ন সংস্থার ঋণে। হঠাৎ দীর্ঘ সময় লকডাউনের কারণে দোকানদারেরা পড়েছেন মহাবেকায়দায়। না পারছে দোকান খোলতে, আর না পারছে শ্রমিকদের বেতনভাতা দিতে। নিজেদের সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। ইতোমধ্যে ধারদেনায় পড়ে গেছেন অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারী শ্রেনীর দোকানদার।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে, আর্থিক যোগান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ৫০ শতাংশের বেশী ব্যবসায়ী-কর্মচারী বাসা ছেড়ে দিয়েছে। অনেকে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ভিন্ন পেশা বা কাজের সন্ধান করছে। ১ জুলাই থেকে আবার লকডাউন দেয়া হলে ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখিন হবে। সামাজিক দূরত্ব, স্বাস্থ্যবিধি মেনে তারা ব্যবসা করার পক্ষে।
এসব দাবী জানিয়েছে শহরের ব্যবসায়ী সংগঠন, ব্যবসায়ী নেতারা। তারা জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ ও লিখিত আবেদন জানিয়েছে। মাতামত লিখেছে ফেসবুকে। তুলে ধরেছে নিজস্ব অনুভূতির কথা।
কক্সবাজার দোকান কর্মচারী ইউনিয়নের সেক্রেটারি মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন নিজের ফেসবুক আইডিতে তাদের বর্তমান চিত্র তুলে ধরেছেন।
জেলা প্রশাসককে উদ্দেশ্য করে শনিবার (২৭ জুন) বেলা তিনটার দিকে স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন- ‘আমরা আপনার অধীনে থাকা কক্সবাজার শহরের নিরীহ দোকান কর্মচারী হই। করোনা মহামারীকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আপনি ও আপনার পুরো প্রশাসন রাত দিন অকাল পরিশ্রম, যুদ্ধ করেই যাচ্ছেন। তাতে সফল বললেও চলে। কিন্তু চলমান মহামারীর কারণে আজ আমরা দোকান কর্মচারীরা খুব বেশী অসহায় ও মানবেতর জীবনযাপন করতেছি।’
শ্রমিক নেতা মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন লিখেছেন- ‘কক্সবাজার পৌর শহরে আমাদের ২০ হাজারেরও বেশি কর্মচারী কর্মরত আছে।বিগত ২৪ মার্চ থেকেই দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। যে কারণে থাকাতে সকল কর্মচারীর কর্মসংস্থান নেই। বর্তমানে আমরা সকলেই বেকারত্বের বুঝায় ও ঋণ দেনায় জর্জরিত। আমাদের মধ্যে কারো কাছে জমা টাকা নেই যে, আমরা জমা টাকা হতে চলতে পারব। এ পর্যন্ত আমাদের কক্সবাজার পৌর শহরে অন্তত ১০-১২ হাজার পর্যন্ত দোকান শ্রমিক ছাটাই করা হয়েছে। এখন আমাদের পিঠ একেবারেই দেয়ালে ঠেকেছে। আমরা এখন অসহায় মানবেতর জীবনযাপন করতেছি।’
তার অনুভূতি হলো -‘বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করোনা ভাইরাস সহজেই যাচ্ছেনা এর মর্ম বুঝেই ব্যবসা বানিজ্য খুলে দেয়ার মতো দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমাদের দেশ গরিব দেশ। এ দেশে বেকার ভাতা দেয়া হয়না। এই পৌর শহরের দোকান কর্মচারীরা আবারো তাদের কর্মস্থলে তথা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ফিরে ঘুরে দাঁড়াতে চাই। সারা দেশে আজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে খোলা আছে। আমাদের কক্সবাজারেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে দোকানপাট খোলা রেখে হাজার হাজার দোকান কর্মচারীদের কর্মসংস্থান নিশ্চত করার জন্য মহোদয়ের প্রতি বিনীত প্রার্থনা করছি।’
একইভাবে লিখেছেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি রফিক মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম মুকুল।
১ লা জুলাই হতে দোকান খোলা প্রসঙ্গে তাদের বক্তব্য হলো – ‘আমরা কক্সবাজারের দোকান মালিকগন বিগত ২৪মার্চ থেকে দোকানপাট বন্ধ রেখেছি। গত ১০ এপ্রিল সরকারের পক্ষ হতে দোকানপাট খোলার নির্দেশনা থাকলেও আমরা কক্সবাজারবাসির স্বাস্থ্যঝুঁকি, নিজের পরিবারের এবং কর্মচারীদের সুরক্ষার জন্য সেচ্ছায় দোকান বন্ধ রেখেছি। রেডজোন ঘোষণার পর (৬- ২০ জুন) কঠোর লকডাউন সফল করার নিমিত্তে আমরা সমস্ত দোকান, মার্কেট বন্ধ রেখেছি। পরবর্তীতে ৩০ জুন পর্যন্ত বর্ধিত করলে আমাদের সীমাহীন কষ্ট হলেও তাতে সমর্থন জনিয়েছি।
দোকান মালিক সমিতির নেতারা বলেন- ‘আজ ৪ মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। আমরা অনেক কষ্টের মধ্য দিনাতিপাত করছি। আমাদের দোকান কর্মচারীদের জন্য টাকা পাঠাব সে সামর্থ্যও আমাদের নাই। দোকান ভাড়া, গুদাম ভাড়া, বাসাভাড়া, বিদ্যুতের ভুতুড়ে বিলে আমরা সর্বশান্ত হয়ে গেছি। দীর্ঘ ৪ মাস লকডাউনের জন্য আমরা কেউ প্রস্তুত ছিলাম না। আমাদের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক দোকানদারগন রিক্সা ও কৃষি শ্রমিকে অনেকে নিয়োজিত হয়ে পরিবার পরিজনের নিকট দু’মুটো অন্ন তুলে দিতে প্রানান্ত চেষ্টা করছেন। আজ কৃষি সেক্টরেও কাজ নেই।’
তারা আবেদন করেন- ‘মাননীয় মহোদয়, ঢাকা, চট্টগ্রাম,সিলেট, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশের অনেক জেলায় রেড জোন ঘোষণা করা হলেও কোথাও দোকান মার্কেট বন্ধ নাই। ঈদের পরে ঢাকা চট্টগ্রামসহ সারাদেশের দোকান, মার্কেট সীমিত পরিসরে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ১০-৪টা পর্যন্ত দোকান খোলা আছে । আমাদের অবস্থা অত্যন্ত করুন। মানবেতর জীবন যাপন করছি। আমরা এখন অসহায়। ইতোমধ্যে দোকানের লক্ষ লক্ষ টাকার মালও নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম।’
অতএব, ‘আগামী ১ জুলাই থেকে কক্সবাজার জেলাসহ শহরে আমরা সীমিত পরিসরে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খোলার জন্য যে সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছি তাতে আপনার মহানুভবতা ও সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করি।’
একই আবেদন জানিয়েছেন কক্সবাজার দোকান মালিক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি আলহাজ্ব মোস্তাক আহমদ। নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে দুঃখের কথা তুলে ধরেছেন মেগামার্টের স্বত্ত্বাধিকারী মোঃ জহিরুল ইসলাম।
তাদের দাবী, যে কোন শর্তে ব্যবসায়ীরা তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার তাগিদে দোকানপাট খোলার পক্ষে।
পাঠকের মতামত: