ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

রোহিঙ্গা নিয়ে অতি উৎসাহী ওরা কারা?

রফিকুল ইসলাম, উখিয়া ::

বাংলাদেশ–মিয়ানমার সীমান্ত ও তৎসংলগ্ন বিভিন্ন স্থানে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নিয়ে দেশি–বিদেশি কিছু ব্যক্তি, সংস্থা ও সহযোগী সংস্থার লোকজনের মাঝে অতি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে এক শ্রেণির বিদেশি লোকজনের অবাধ বিচরণ, ইলেকট্রনিক ডিভাইজ ব্যবহারে প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজনের মাঝেও অস্বস্তি দেখা দিয়েছে।

এ ধরনের বেশ কয়েকজন বিদেশিকে ইতোমধ্যে সীমান্তের নো–ম্যান্স ল্যান্ড ও রোহিঙ্গা শিবির থেকে আটক করে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অবাধ বিচরণ ও কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত বিদেশিদের সংশ্লিষ্ট কাজের বৈধ ভিসা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উখিয়ার জামতলী বাঘঘোনা অস্থায়ী রোহিঙ্গা শিবিরে ড্রোনের মাধ্যমে অবৈধভাবে বিভিন্ন স্থাপনা ও শরণার্থী শিবিরের ছবি ধারণ করার সময় আটক হন তুরস্কের ৪ নাগরিক। একটি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ড্রোনসহ এসব বিদেশিকে আটক করে উখিয়া থানায় হস্তান্তর করেন। থানা পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পর ড্রোনটি হেফাজতে রেখে ছেড়ে দেয়।

পুলিশ বলেছে, বাংলাদেশে ড্রোনের ব্যবহার অবৈধ। এ ব্যাপারে বিদেশিদের কোনো ধারণা ছিল না জানিয়ে তারা দুঃখ প্রকাশ করেছে। পরে মুচলেখা দিয়ে ছাড়া পায়। এর আগে রাতে অবস্থান করার দায়ে চীন ও ব্রিটেনের ৫ নাগরিককে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির থেকে আটক করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে একইভাবে তাদের মুচলেখা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। গত অক্টোবরে অবৈধভাবে সংবাদ সংগ্রহের দায়ে মিয়ানমারেরর দুই সাংবাদিককে আটক করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

গত মাসের মাঝামাঝি কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে উখিয়ার পালংখালী আঞ্জুমান পাড়ার নাফ নদী সীমান্তের জিরো লাইন থেকে একাধিক বিদেশিকে ফেরত পাঠান উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার। বাংলাদেশ থেকে সীমান্তের মিয়ানমার অংশে অবস্থান নেওয়া রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার তৎপরতা চালানোর অভিযোগে তাদের আটক করা হয়েছিল। এসব বিদেশির মধ্যে জাতিসংঘের কয়েকটি সংস্থা, একটি এনজিও ও দাতব্য সংস্থার বেশ কয়েকজন লোক ছিলেন। আরো আগে গোপনে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে মিয়ানমার যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন জার্মানির দুই নাগরিককে নৌকাসহ আটক করে প্রশাসনের নিকট হস্তান্তর করে। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও আইন–শৃংখলা বাহিনী তাদের কাগজপত্র যাচাই করে মুচলেখা নিয়ে ছেড়ে দেয়।

এছাড়া উখিয়ার সীমান্ত ও সীমান্ত সংলগ্ন অস্থায়ী রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে ত্রাণ সহায়তার নামে প্রতিদিন বিভিন্ন চ্যারিটি ও অনেক বিদেশির অবাধ যাতায়াত স্থানীয়ভাবে নানা বিতর্ক ও প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। অনেক বিদেশি ভ্রমণ ভিসা নিয়ে কক্সবাজার এসে বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে অবস্থান নেয়। সেখান থেকে তাদের স্থানীয় এজেন্টের মাধ্যমে রোহিঙ্গা শিবিরকেন্দ্রিক বিভিন্ন তৎপরতায় জড়িয়ে পড়ে।

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ ও প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক অধ্য হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে দেশি–বিদেশি বেশ কিছু ব্যক্তি ও মহলের অতি উৎসাহে স্থানীয় লোকজনের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক বিদেশি ভ্রমণ ভিসা নিয়ে এসে মাসের পর মাস রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে ত্রাণ তৎপরতা, স্যানিটেশন, ওয়াটার সাপহ্মাইয়ের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব লোকজন যে কাজের জন্য রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে আসছে, সেই কাজের ভিসা রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা দরকার এবং তাদের গতিবিধি নজরদারি করা প্রয়োজন।

উখিয়া থানার ওসি মো. আবুল খায়ের বলেন, দেশি–বিদেশি লোকজনের রোহিঙ্গা শিবিরকেন্দ্রিক যাতায়াতে আইন–শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এদের বৈধ ভিসা ও অন্যান্য কাগজপত্র যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে বলে জানান তিনি।

পাঠকের মতামত: