ঢাকা,শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

রোহিঙ্গাদের ত্রাণের মাল চলে আসছে ট্রাকে ট্রাকে, পাইকারি বাজারে নেতিবাচক প্রভাব

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার ::

কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিতরণ করা ত্রাণসামগ্রী ক্যাম্পের নিরাপত্তা বলয় পেরিয়েচলে আসছে খাতুনগঞ্জ–চাক্তাই পর্যন্ত। পাইকারি বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাচার হওয়া পণ্যবোঝাই ট্রাক চাক্তাই ঢুকে প্রতিদিন ভোরে। কোন কোন দিন ৮/১০ ট্রাকমাল ঢুকে যায়। ভোগ্যপণ্য আমদানি ও বিপণনকারী এক বহৎ প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীর সাথে যোগাযোগ করাহলে তিনি দৈনিক পূর্বকোণ প্রতিনিধিকে জানান, কমদামের পণ্য চোরাপথে আসার কারণে স্বাভাবিক বাজার ব্যাপকক্ষতির মুখে পড়েছে। প্রতিষ্ঠিত কোন ব্যবসায়ী ত্রাণের পণ্য কিনেন না। অতিলোভী কিছু ব্যবসায়ী জড়িত অপকর্মেরসাথে। আরও জানান, রোহিঙ্গাদের দেয়া সাহায্য সামগ্রী খোলাবাজারে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। একেবারে কমদরে বিক্রি হচ্ছে এসব পণ্য। এরফলে সমগ্র কক্সবাজার জেলায় বিশেষত চাল, ডাল এবং চিনি বিপণন বন্ধ হয়ে গেছে। যেসব ব্যবসায়ী চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার থেকে এসব জিনিস নিয়ে যেতেন, বছর খানেক ধরে তারা আর আসেন না। এমনকি সাতকানিয়া, পটিয়া এবং চন্দনাইশেও ভোগ্যপণ্য যাচ্ছে কম। আশ্রয় শিবির এলাকার কতিপয়সিন্ডিকেট ত্রাণের চাল, ডাল, তেল, গুঁড়োদুধসহ অন্যান্য পণ্য সংগ্রহ করে পাচার করছে বিভিন্ন স্থানে। এরনেতিবাচক প্রভাব পড়েছে চাক্তাই–খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে। অপর এক ব্যবসায়ী জানান, ফেনী পর্যন্ত পৌঁছেযাচ্ছে ত্রাণের চাল, ডাল, চিনি, ভোজ্যতেল, গুঁড়োদুধ। পার্বত্য জেলা বান্দরবান এবং রাঙামাটিতেও অবাধে বিক্রিহচ্ছে রোহিঙাদের ত্রাণের জিনিস।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকারি–বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগে পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী পাচ্ছেন রোহিঙ্গারা। এত সাহায্যতারা পাচ্ছেন যে রাখার জায়গা নেই। স্বল্পমূল্যে তারা বেচে দিচ্ছেন। তাতে উখিয়া টেকনাফসহ কক্সবাজারেরসবখানে ছোট ছোট মুদিদোকানিরা নিদারুণ ক্ষতির মুখে। বেচা–বিক্রি নেই তাদের। আবার স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠাসিন্ডিকেট কমদামের পণ্য সংগ্রহ করে পাচার করছে চট্টগ্রামে। ট্রাকভরে আসলেও পথিমধ্যে কোথাও কোন সমস্যায়পড়তে হয় না। সবাইকে ম্যানেজ করে অবাধে পাচার হয়ে যায়।
আরও জানা যায়, ত্রাণসামগ্রী রাখার জায়গা না থাকা বা পর্যাপ্ত হওয়ার কারণে নামমাত্র মূল্যে রোহিঙ্গারাসাহায্যপণ্য বেচে দিচ্ছেন তা নয়, অন্যান্য

নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য তারা চোরাপথে তাদের মাল বিক্রিকরে দেন। সাহায্য হিসেবে যেসব পণ্য পাওয়া যায় তার বাইরে মাছ, তরকারিসহ আরও পণ্য তাদের প্রয়োজন হয়।সেগুলো কেনার জন্য তারা বিক্রি করে দেন ত্রাণের মাল।
মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের কারণে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন সীমান্তের এপারে উখিয়া ওটেকনাফে গত বছরের ২৫ আগস্টের পর। তাদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে সেখানে সরকারি, বেসরকারি উদ্যোগে রোহিঙ্গাদের দেয়া হয় চাল, ডাল, তেল, চিনি, গুঁড়োদুধসহ হরেক রকম জিনিস। প্রতিসপ্তাহেদু’বার ত্রাণ দেয়া হয় এদেরকে। বাজার দরের চেয়ে অর্ধেকের কম দামে তারা ত্রাণের পণ্য বিক্রি করে দেন। যেচালের কেজি ৫০ টাকার বেশি তা বিক্রি করে দেয়া হয় ২০ টাকা দরে, চিনি বেচে দেয়া হয় ২৫/৩০ টাকা দরেকেজি। একইভাবে ডাল, ভোজ্যতেল, গুঁড়োদুধ, চা পাতা ইত্যাদি।

পাঠকের মতামত: