ডেস্ক নিউজ ::
‘আমিও আপনাদের মতো রক্তে মাংশের একজন মানুষ। অনেকেই আমাকে গজব দিচ্ছেন। অনেকেই প্রকাশ করছেন ঘৃণা ও বিদ্বেষ। ইয়াবা কারবারি নির্মূলে যেহেতু আমিই কাজ করে চলেছি সেহেতু আমার প্রতি আপনাদের ক্ষোভ থাকতেই পারে ’-এমনই কষ্টের কথা বলেছেন টেকনাফের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ।
টেকনাফের ওসি বলেন, আপনারা বিশ্বাস করুন রাতে আমার ঘুম হয় না। টেকনাফ থানায় যোগ দেওয়ার পর আমার ওজন কমেছে ১৫ কেজি। কিভাবে ঘুম হবে? আমার মাথায় কেবল কাজ করছে ইয়াবা কোথায়-ইয়াবাখোর কোথায়-কোথায় ইয়াবার কারবারি? কিভাবে তাদের দমন করব?
গতকাল শুক্রবার টেকনাফের উপকুলীয় ইউনিয়ন বাহারছড়ার শামলাপুরে অনুষ্ঠিত মাদক বিরোধী সমাবেশে বক্তৃতা দিতে গিয়ে ইয়াবা নিয়ে এক দীর্ঘ আবেগঘন বক্তব্য দিয়েছেন ওসি প্রদীপ।
তিনি বলেন- ‘একজন জীবন্ত মানুষ ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিমিষেই প্রাণ হারান। এ জন্য আমিও মনে কষ্ট পাই। আর এ কারণেই রাতে ঘুমাতে গেলে এসব মনে পড়ে বেশি। চোখ বন্ধ করে বিবেককে প্রশ্ন করি। বিবেক আমাকে বলে- একজন ইয়াবা কারবারি হাজারো পরিবারকে গ্রাস করছে। সেই হাজারো পরিবার থেকে আক্রান্ত হচ্ছে লাখো যুবক।
সুতরাং একজন কারবারি যেখানে হাজারো এবং লাখো মানুষের জীবনকে বিপন্ন করছে সেখানে সেই কারবারিকে নির্মূল করার কাজটি অন্যায় নয়। আমার বিবেক আমাকে তাই বলে সান্ত্বনা দেয়। তারপর আমিও বিবেকের এরকম যুক্তিতে শান্তি খুঁজে পাই।’ প্রসঙ্গত, ওসি প্রদীপ টেকনাফ থানায় যোগ দেয়ার পর সীমান্তের অর্ধ শতাধিক কারবারি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে।
টেকনাফের ওসি তার গ্রামের একজন প্রতিবেশী স্বনামধন্য অধ্যাপকের ইয়াবা আসক্ত হবার বাস্তব দুর্দশার কাহিনীসহ আরো অনেক ভুক্তভোগীর তথ্য প্রকাশ করেন সভায়। সভায় ওসির বক্তব্যে অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেনও সভায় বক্তৃতা করেন।
সভায় বাহারছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম, এ মঞ্জুর বলেন, ‘টেকনাফ থানার ওসি’র নাম প্রদীপ। টেকনাফ সীমান্তের ইয়াবা কারবারিদের নির্মূল করে আপনি সীমান্তের ঘরে ঘরে প্রদীপ জ্বালাবেন।’ গতকালের এ সভায় এলাকার কোনো তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারিকে দেখা যায়নি। এ কারণেই এলাকাবাসী আয়োজকদের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।
-কালের কণ্ঠ
পাঠকের মতামত: