মিয়ানমারের মুসলিম অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যের গ্রামগুলোতে গত ৫ দিনে ৬৯ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। এদিকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আসা ২০০ রোহিঙ্গা সীমান্তে আটকা পড়েছে বলে জানা গেছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে ৬৯ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। এসময় নিরাপত্তাবাহিনীর ১৭ জন সদস্য নিহত হন। বিবৃতিতে দাবি করা হয়, নিহত রোহিঙ্গারা সহিংস হামলাকারী। গত মঙ্গলবার টেকনাফের শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গাদের এক নেতা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী দমন–পীড়নের হাত থেকে বাঁচতে ২০০ রোহিঙ্গা রাখাইন প্রদেশ থেকে পালিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে আসে। বিজিবি সোমবার তাদের পুশ–ব্যাক করে। তিনি বলেন, আটকা পড়া রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। সেনাবাহিনী দাবি করেছে, রাখাইন প্রদেশে সম্প্রতি শুরু হওয়া বিদ্রোহ দমনের অংশ হিসেবে চালানো অভিযানে ওই হতাহতের ঘটনা ঘটে। রোহিঙ্গাদের অভিযোগ, সেনাবাহিনী সেখানে বেসামরিক অধিবাসীদের হত্যার পাশাপাশি ধর্ষণও করেছে। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে। খবর এএফপি ও বিবিসির।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ৬৯ জন নিহতের কথা বললেও বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহতের সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে। মিয়ানমারের দেওয়া তথ্য অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ২০১২ সালে ওই রাজ্যের জাতিগত দাঙ্গায় শতাধিক রোহিঙ্গা মুসলিম নিহত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে সেখানে চরম উত্তেজনা চলছে। ৯ অক্টোবর সন্ত্রাসীদের হামলায় ৯ পুলিশ নিহত হয়। ১১ অক্টোবর আরো ১২ জনের মৃত্যুর কথা জানায়। এর পর মিয়ানমার সরকার কথিত হামলাকারীদের খোঁজে অভিযান চালানো শুরু করে। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো অভিযোগ, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে জাতিগত দমন–পীড়ন চালাচ্ছে।
রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না মিয়ানমার সরকার। গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসার পরও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের সেনাপ্রধানের বিবৃতিতে নিহত রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ বলে উল্লেখ করা হচ্ছে।
সোমবার টেকনাফ শরণার্থী শিবির থেকে ১৯ বছর বয়সী রোহিঙ্গা তরুণ মোহাম্মদ তৌহিদ ফোনে এএফপিকে জানান, তারা (সেনাবাহিনী) আমার চোখের সামনে আমার বোনকে গুলি করে হত্যা করেছে। হামলা চালানোর সময় আমি গোবরের নিচে লুকিয়ে ছিলাম। রাত গভীর হওয়ার পর আমি সেখান থেকে সীমান্তে পালিয়ে আসি। মাকে বাড়িতে একা ফেলে এসেছি। তিনি বেঁচে আছেন কিনা জানি না। তিনি জানান, সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের শত শত ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে।
রোহিঙ্গাদের বিশ্বের ‘সবচেয়ে নির্যাতিত জনগোষ্ঠী’ বলে ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ। রাখাইন রাজ্যে সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘ সব পক্ষকে সংযমী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। আজাদী
পাঠকের মতামত: