অনলাইন ডেস্ক :: খুব শিগগিরই ঘোষিত হতে যাচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহারের খসড়ায় থাকছে- জাতীয় ঐক্য, বিভক্তি আর নয়, কথা বলার অধিকার, গণমাধ্যমের অধিকার, আইনের সংস্কার, সুশাসন ইত্যাদি। এছাড়াও থাকছে বেশ কিছু কৌশল, ঘোষণা ও পরিকল্পনা।
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ইশতেহারে ‘দেশ বাঁচাতে, মানুষ বাঁচাতে, আনবে পরিবর্তন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’, ‘জনগণ এ রাষ্ট্রের মালিক’ এ ধরনের স্লোগান থাকছে।
জানা গেছে,ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে তরুণদের একাংশের দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করার অঙ্গীকার করা হবে, অবসরের বয়স বাড়ানো হবে। শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী সংস্কার করা হবে চাকরিতে প্রবেশের কোটা, কমানো হবে ইন্টারনেটের দাম। এছাড়া পরিবহন সেক্টরে দীর্ঘদিনের নৈরাজ্য বন্ধে থাকছে বিশেষ অঙ্গীকার। গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়া কার্যকর করা, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর মতো পরিবহন খাতকে বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে। যেমন- লাইসেন্স, ফিটনেস ইত্যাদি প্রতিটি জেলার অফিস থেকে দেয়া হবে। এগুলো প্রদানের ক্ষমতা থাকবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে। তবে সরকার ‘বোর্ড সুপারভাইজার’ হিসেবে থাকবে। কৃষকের লাভ বাড়াতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব থাকবে ইশতেহারে। একজন কৃষক যাতে তার পরিশ্রম অনুযায়ী ন্যায্য মূল্য পায়, একই ভাবে শহরগুলোতে যাতে ন্যায্য মূল্যে পণ্য পাওয়া যায় সেই অঙ্গীকার করা হবে। সব কৃষিপণ্য উৎপাদনের জন্য ভর্তুকি দেয়া হবে। কৃষিতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও কৃষিজাত পণ্যের আমদানি কমানোর অঙ্গীকার করা হবে।
সূত্রে আরও জানা গেছে, ইশতেহারে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ, দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) সংস্কার; কৃষক, শ্রমিক ও দরিদ্র জনগণের শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান ও পুষ্টি সরকারি অর্থায়নে নিশ্চিত করা এবং নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিতের কথাও উল্লেখ থাকছে। এছাড়া গ্যাস-বিদ্যুতের দামসহ মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় সেবাসমূহের মূল্য সমন্বয়ের প্রতিশ্রুতি দেয়া হবে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেশে ফেরত পাঠানোর অঙ্গীকার থাকবে।
এছাড়া ক্ষমতায় যাওয়ার দুই বছরের মধ্যে প্রশাসন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পাঠ্যপুস্তক প্রকাশনা, গণপরিবহন, নারী উন্নয়ন ও সমাজকল্যাণ ব্যবস্থাপনা আটটি প্রদেশ বা ১৭টি স্টেটভিত্তিক বিকেন্দ্রীকরণ করার কথা উল্লেখ থাকবে। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে সুপ্রিম কোর্ট, সেনাবাহিনী, পররাষ্ট্র, বৈদেশিক বাণিজ্য, বিমান ও সমুদ্রবন্দর, আন্তঃজেলা মহাসড়ক এবং ইনকাম ট্যাক্স ও শুল্ক ব্যবস্থাপনা অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।
এছাড়া খুনের মামলা ছাড়া অন্য মামলায় আসামিদের হাইকোর্টে জামিন হলে সরকার সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে অহেতুক সময় ও অর্থব্যয় না করাসহ প্রতিটি স্টেটে আলাদা সাংবিধানিক কোর্ট স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে ঐক্যফ্রন্টের। এছাড়াও ইশতেহারে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারা সংশোধনের বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের এ ইশতেহার তৈরির জন্য ছয় সদস্যের কমিটি করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। কমিটিতে বিএনপি থেকে মাহফুজ উল্লাহ, গণফোরাম থেকে আ ও ম শফিক উল্লাহ, নাগরিক ঐক্য থেকে ডা. জাহেদ উর রহমান, জেএসডি থেকে শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের অধ্যক্ষ ইকবাল সিদ্দিকী এবং ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আছেন।
ইশতেহার কমিটির অন্যতম সদস্য গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এ প্রতিবেদককে বলেন,আশা করি আমরা সম্মিলিতভাবে এবং চূড়ান্তভাবে জনবান্ধব একটি ইশতেহার দাঁড় করাতে পারবো। ইশতেহারে প্রয়োজনীয় সময় অনুযায়ী প্রতিশ্রুতি দেয়া হবে। “আইনের নামে বাংলাদেশে যেসব ‘অপআইন’ চলছে এগুলো বন্ধের ঘোষণা থাকবে। এছাড়া আমাদের অন্যতম গুরুত্ব থাকবে কৃষক যাতে তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পায়। ঢাকার মানুষও যেন ন্যায্য মূল্য পায়। সবদিকে সামঞ্জস্য রাখা হবে।
এই কমিটি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ঘোষিত ভিশন-২০৩০ রূপকল্প সামনে রেখে ইশতেহার তৈরি করবে।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ধানমন্ডির অফিসে ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী এ সময় বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার ছাপানো হবে। তিনি বলেন, ১১ দফার ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার তৈরি করা হচ্ছে। তবে এটি আরো বিস্তৃত হবে।
ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী আরো বলেন, আমরা আজ ইশতেহার তৈরি করার জন্য বৈঠকে বসেছি। প্রথমে ড্রাফট তৈরি করব। পরে এটি ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে পাস হবে। ইশতেহার তৈরির বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের চিন্তা আছে, মূল বিষয় থাকবে জাতীয় ঐক্য, বিভক্তি আর নয়, কথা বলার অধিকার, গণমাধ্যমের অধিকার, আইনের সংস্কার, দেশের মেরামত দরকার। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ, গণফোরামের শফিকউল্লাহ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের ডা: জাহেদ উর রহমান প্রমুখ।
জানা গেছে, বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টভুক্ত দলগুলোও ইশতেহারে কোনো কোনো বিষয় প্রাধান্য পাওয়া উচিত, তা লিখিতভাবে ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার কমিটির কাছে জমা দিয়েছে। প্রতিটি দলের নতুন চিন্তাকে ধারণ করে চূড়ান্ত করা হবে নির্বাচনী ইশতেহার।
পাঠকের মতামত: