দক্ষিণ কোরিয়া মঙ্গলবার জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাসীন দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পিয়ংইয়ংয়ের সম্ভাব্য ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার জোরালো গুজবের পর সিউল যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাদের সামরিক বাহিনীকে পুরোপুরি প্রস্তুত রেখেছে।
উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে সৃষ্ট উত্তেজনা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অনেক বেড়ে গেছে। জাতিসঙ্ঘ আরোপিত অবরোধ উপেক্ষা করে পিয়ংইয়ং একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ষষ্ঠবারের মতো শক্তিশালী পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালানোয় এ অঞ্চলে উত্তেজনা বেড়ে যায়।
উত্তর কোরিয়া দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে প্রায় প্রতি বছর উস্কানিমূলক পরীক্ষা চালায়। দেশটি মঙ্গলবার ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার জয়েন্ট চিফ অব স্টাফের মুখপাত্র জানান, তারা উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর কার্যক্রম গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং এক্ষেত্রে যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনীকে সম্পূর্ণ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির জবাব পরমাণু অস্ত্র : কিম
পিয়ংইয়ংয়ের পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি মোকাবেলায় একটি ‘শক্তিশালী প্রতিরোধ শক্তি’ হিসেবে কাজ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। একই সাথে তার দেশের সামরিক ইস্যুতে ওয়াশিংটনের সমর্থনে আরোপিত জাতিসঙ্ঘের নিষেধাজ্ঞাগুলো ব্যর্থ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাথে বৈঠকে কিম বলেছেন, পরমাণু কর্মসূচি তার দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বকে সুরক্ষা দিয়েছে। রোববার উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এ খবর দিয়েছে।
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, গত কয়েক দশকে মার্কিন প্রশাসনগুলো পিয়ংইয়ংয়ের সাথে অনেক আলোচনা ও চুক্তি সই করা সত্ত্বেও কোরীয় উপদ্বীপের সঙ্কট নিরসন হয়নি। ট্রাম্প হুমকি দিয়েছিলেন, যুদ্ধই হচ্ছে উত্তর কোরিয়াকে মোকাবেলার একমাত্র উপায়। ট্রাম্পের বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টা পরই কিম এসব মন্তব্য করেন। উত্তর কোরিয়াকে প্রয়োজনে ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ করে ফেলারও হুমকি দিয়ে আসছেন ট্রাম্প।
বৈঠকে কিম আরো বলেন, কোরীয় উপদ্বীপ এবং উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় শান্তি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সুরক্ষা দিতে পিয়ংইয়ংয়ের পরমাণু অস্ত্র শক্তিশালী প্রতিরোধ সক্ষমতা হিসেবে কাজ করেছে। এ ছাড়া বৈঠকে কিম তার দেশের জাতীয় নীতি ‘বায়োনজিন’ বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন। এর অর্থ হচ্ছে পরমাণু অস্ত্রের পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটানোর এ পরিকল্পনা একই সময়ে এগিয়ে নিতে হবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে এ এজেন্ডা সম্পূর্ণ সঠিক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।
কিমের বোন শীর্ষ পরিষদের সদস্য
এ দিকে নিজের বোনকে আরো ক্ষমতা দিয়ে দেশের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী পরিষদের সদস্য করেছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। দেশটির পরলোকগত নেতা কিম জং ইলের কনিষ্ঠ কন্যা কিম ইয়ো-জংকে তার ফুপুর বদলে দেশটির ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য করা হয়েছে। শনিবার পার্টির এক বৈঠকে তার পদোন্নতির কথা ঘোষণা করেন উন।
তিন বছর আগে ইয়োকে পার্টির অন্যতম সিনিয়র নেতা করা হয়েছিল। গত বছর ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির কংগ্রেসে তাকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে বসানো হয়। তারপর থেকেই ইয়োকে দেশটির মূল নেতৃবৃন্দের অংশ করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। প্রচারণা ও আন্দোলন বিভাগের উপ-পরিচালক হিসেবে তিনি এইর মধ্যে প্রভাবশালী ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন। বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানে ইয়োকে প্রায় সময়ই তার ভাইয়ের পাশে দেখা যায়। ভাইয়ের ইমেজের বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব তার বলে ধারণা করা হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৮ সালে উত্তর কোরিয়া প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে কিম পরিবার রাষ্ট্রটি শাসন করে আসছে। উত্তর কোরিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে ইয়োর জড়িত থাকার কথিত অভিযোগে তাকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইয়োর পাশাপাশি পদোন্নতি পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী রি ইয়ং হো উল্লেখযোগ্য। তাকে পলিটব্যুরোর পূর্ণ সদস্য করা হয়েছে। গত মাসে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ অধিবেশনের ভাষণে হো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘শয়তান প্রেসিডেন্ট’ বলে অভিহিত করেছিলেন।- এনবিসি নিউজ
পাঠকের মতামত: