কে এম নুরুল হুদা ও রুহুল কবির রিজভী। ফাইল ছবি
নিউজ ডেস্ক ::
বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেনের নির্বাচনী গণসংযোগে হামলার বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্যের যে ব্যাখ্যা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) দিয়েছেন, তার কড়া সমালোচনা করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সিইসকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, মানুষ এতটা নির্লজ্জ ও দলকানা হতে পারে?
বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ইশরাক হোসেনের নির্বাচনী গণসংযোগে হামলার প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, রোববার দুপুরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেনের প্রচারের সময় ওয়ারীতে আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনী আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর বর্বর কায়দায় হামলা করে। সেই হামলায় তাদের মদদ ও সহযোগিতায় ছিল পুলিশ। পরে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে ওয়ারী থানার ওসি (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান তার ওপর মহলের সঙ্গে যে কথাবার্তা বলছিলেন, তার ভিডিও ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। তিনি (ওসি) বলছিলেন, ‘যেখানে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলছেন– পরিস্থিতি ‘নরমাল’ (স্বাভাবিক) আছে। ইশরাকের পার্টি মতিঝিল এলাকায় চলে গেছে। আর আমাদের যে পার্টি আছে, (নৌকার লোকজন) ওরা আছে-সেন্ট্রাল উইমেন্সের (সেন্ট্রাল উইমেন কলেজ) সামনে।’
রিজভী বলেন, এটি নিয়ে সিইসিকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তার জবাবে নূরুল হুদা বললেন– ‘পার্টি মানে পুলিশ, মানে তাদের দল, পুলিশের সঙ্গে যে লোকজন থাকে তাদের পার্টি বলে।’
বিএনপির এ নেতা বলেন, নূরুল হুদা মনে করেন দেশবাসী সব বোকা আর তিনি খুব চতুর চালাক। তিনি দেশের মানুষকে ব্যাকরণ শেখান!
রিজভী বলেন, এসব কল ব্যাখ্যার জন্য সাধারণ মানুষ নূরুল হুদা সাহেবকে অনেক আগে থেকেই বিশ্বাস করে না। তার বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে, সাধারণ আওয়ামী লীগরা এত কঠোর হয় না যতটা সিইসি কঠোর লীগের জন্য কঠোর। কতটা দলকানা হলে মানুষ এতবড় নিলর্জ্জ হতে পারে।
নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার সমালোচনা করে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, পৃথিবীতে যুগে যুগে দুই-একজন গণবিরোধী স্তাবক ও বিশ্বাাসঘাতক সৃষ্টি হয়েছে, যাদের কারণে একটি জাতি স্বাধীনতা হারিয়েছে অথবা করুণদশায় পতিত হয়েছে। এই পা চাটা গোলামরা শুধু নিজেদের পদ ও ক্ষমতার স্বার্থে পুরো জাতিকে ভয়াবহ বিপদের মুখে ফেলে দেয়। তাদের মতোই নতুন এক নিলর্জ্জ, দলকানা, সেবাদাসপ্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদাকে জাতির স্কন্ধে চাপিয়ে দিয়েছে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ। নূরুল হুদার আচার-আচরণ কাজকর্ম ও কথাবার্তায় মনে হয়, তিনি নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক কোনো পদে নয়, বরং তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কোনো পদে দায়িত্ব পালন করছেন। আর নির্বাচন কমিশনারকে লীগের অফিসটি দেয়া হয়েছে ইসি ভবনে।
তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত আওয়ামী লীগের এমপিরা প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। তারা আবার এখন দলীয় নেতাকর্মী ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে ভোট ডাকাতির ছক তৈরি করছেন, যার খবর ইতোমধ্যে আমাদের কাছে এসেছে। তার পরও সব প্রতিকুলতা ও নীলনকশা উপেক্ষা করে জনগণ ভোট দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানাই– নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে যান, নিজের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করুন, দুঃশাসনের জবাব দিন।
রাজধানীতে বিএনপি নেতাদের গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানিয়ে রিজভী বলেন, বুধবার রাতে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সহসভাপতি নাজমুল হাসান রানাকে রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালের সামনে থেকে এবং হাজারীবাগ থানা বিএনপির সহসভাপতি মো. কোরবান আলী এবং তার পুত্র হাজারীবাগ থানাধীন ১৪নং ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফ আলীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আর মাত্র একদিন পরেই ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অথচ বিএনপি নেতাকর্মীদের সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে দেদারসে গ্রেফতার করছে পুলিশ। নির্বাচনের প্রাক্কালে উল্লিখিত নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতারের ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অসত্য ও বানোয়াট মামলা প্রত্যাহারসহ নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।
পাঠকের মতামত: