ঢাকা,রোববার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

মাতামুহুরীর হাজার একর জমি বালুখেকোদের থাবায় অনাবাদি 

এম. আর মাহমুদ, চকরিয়া :: মাতামুহুরী নদীর দুই পাড়ে কয়েক যুগে জেগে উঠেছে হাজার হাজার একর চর। এর বড় অংশে দরিদ্র ও ভূমিহীন কৃষকরা শীতকালীন সবজি চাষ করেন। বাদাম, গোল আলু, লাউ, ধনেপাতা, লালশাক, পেলমডাল, রেনগুইম্যা শিমের (মায়ানমার প্রজাতি) পাশাপাশি বোরো ধান চাষ হচ্ছে চরের জমিতে। তবে কয়েক বছর ধরে বালুখেকোদের থাবায় এসব জমির বড় অংশ অনাবাদি হয়ে পড়েছে। প্রশাসনের কার্যকর নজরদারি না থাকার সুযোগে অবৈধভাবে বালু তুলে নিচ্ছে প্রভাবশালীরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের চকরিয়ায় নদীর চর থেকে বালু তোলায় জড়িতরা প্রভাবশালী এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মী। প্রভাব খাটিয়ে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বালু তুলছে তারা। এতে মাতামুহুরীর চরে শীতকালীন সবজি চাষের পরিধি ছোট হয়ে এসেছে। কমছে চাষযোগ্য জমি। প্রাকৃতিকভাবে জেগে ওঠা চরে চাষের জায়গা হারিয়ে দরিদ্র কৃষকরা কর্মহীন। শীতকালীন সবজির উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে।

সংশ্নিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নির্বিচারে বালু তোলার ফলে অন্তত এক হাজার একর বালুচরে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ হয়নি। মানিকপুর, সুরাজপুর, কাকারা, ঘুনিয়া, দিঘারপানখালী, হাজিয়ান, কোচপাড়া, পৌরসভার নামার চিরিঙ্গা, মৌলভীরচর, আমান চর, বেতুয়াবাজার, জ্বালিয়াপাড়ার ঘাট, লক্ষ্যাচর, কৈয়ারবিল, পূর্ব ভেওলা, শাহারবিল, রামপুর, বিএমচর ও পহরচাঁদা এলাকায় এসব চর জেগে উঠেছে।

দক্ষিণ কাকারার কৃষক নুরুল ইসলাম নুরু বলেন, বালু লুটেরারা শত শত ট্রাক বালু নিয়ে যাচ্ছে। চরে চাষ করার সুযোগ নেই। বেশিরভাগ কৃষক বিপদে। একই কথা বলেন ঘুনিয়ার কৃষক আবুল ফজল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মানিকপুরের এক কৃষক বলেন, বালু লুটের কারণে বর্ষায় নদীভাঙন দেখা দিতে পারে।

উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্ভিদ কর্মকর্তা মহিউদ্দিন বলেন, শীত মৌসুমে এসব চরে আবাদ করে কৃষক অন্তত ৫০ কোটি টাকা আয় করেন। গত কয়েক বছরে বালুর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় লুটেরা চক্র ড্রেজার ও শ্যালো মেশিন বসিয়ে বালু তুলছে।

এতে হতদরিদ্র কৃষকের জীবন-জীবিকায় আঘাত এসেছে। উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়েও বালু তোলা ঠেকাতে পারছে না।
পরিবেশবাদীরা বলছেন, বালু তোলা বন্ধ করা না গেলে নদীর ভাঙন ঠেকানো সম্ভব হবে না। এসব কারণে মাতামুহুরী নদী মাছশূন্য হয়ে পড়ছে। চিংড়িঘের এলাকায় প্রতি বছর মাছের মড়ক দেখা দিচ্ছে।

পেকুয়া বিএমআই কলেজের অধ্যাপক ইব্রাহীম মুহাম্মদ বলেন, নদীতে জেগে ওঠা চরের বালু গনিমতের মালে পরিণত হয়েছে। এ জন্য ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না।

চকরিয়া পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সদস্য মনছুর রানা বলেন, বালু লুটেরাদের অপকর্ম ঠেকানো জরুরি হয়ে পড়েছে। চরে তামাক কোম্পানির তালিকাভুক্ত চাষিরা তামাক চাষ করছেন। এতে মাছের ক্ষতি হচ্ছে।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাহাত উজ্জামান বলেন, সরকারি দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি বালুখেকোদের বিরুদ্বে অভিযান চলছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, মাতামুহুরী নদী খাস খতিয়ানভুক্ত, বালু তোলা পুরোপুরি অবৈধ। এতে নদীভাঙন, পরিবেশের ক্ষতির পাশাপাশি সরকার বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে। প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরিমানা ও বালু উত্তোলনের উপকরণ জব্দের পর নষ্ট করছে।

পাঠকের মতামত: