ঢাকা,বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪

ভারত ও থাইল্যান্ড থেকে আমদানি প্রক্রিয়া শুরু, মিয়ানমার থেকে আসছে চাল

বিশেষ প্রতিবেদক. বানিজ্য ::rice

চালের সরকারি মজুদ তলানিতে পৌঁছায় শূন্য মার্জিন বা বিনা জমায় চাল আমদানির সুযোগ দিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে শুল্ক হার ২৮ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে কমানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় বিদেশ থেকে চাল আমদানি শুরু করেছেন বেসরকারি আমদানিকারকরা। এর মধ্যে চট্টগ্রামের কয়েকজন বড় ব্যবসায়ী মিয়ানমার থেকে চাল এনেছেন, নতুন করে আমদানির ঋণপত্র খোলা শুরু করেছেন। একই সঙ্গে ভারত ও থাইল্যান্ড থেকে আমদানিপ্রক্রিয়া শুরু করছেন।

ঈদের কয়েক দিন আগে মিয়ানমার থেকে তিনটি প্রতিষ্ঠানের আসা সাড়ে পাঁচ হাজার টন চাল জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে। যেগুলো বন্দর থেকে খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে।

জানতে চাইলে ভোগ্যপণ্যের বড় আমদানিকারক বিএসএম গ্রুপের আবুল বশর চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের সাড়ে চার হাজার টন চাল মিয়ানমার থেকে কনটেইনার জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে। এর মধ্যে একটি চালান শুল্ক কমানোর আগে, আরেকটি শুল্ক কমানোর পর। ’

শুল্ক কমানোর উদ্যোগকে ইতিবাচক উল্লেখ করে আবুল বশর চৌধুরী বলেন, এর ফলে চালের বাজারে অবশ্যই প্রভাব পড়বে। কিন্তু কী পরিমাণ দাম কমবে আগামী সপ্তাহ থেকে পাইকারি বাজারে বেচাকেনা শুরুর পরই জানা যাবে। ’

তিনি বলছেন, শুল্ক কমার আগে মিয়ানমার থেকে টনপ্রতি ৩২০ ডলারে বুকিং দিলেও এখন দাম একটু বেড়ে ৩৪৫ ডলারে কিনতে হচ্ছে। মিয়ানমারের পাশাপাশি ভারত, থাইল্যান্ডসহ অন্য দেশেও বাজার দর দেখছি। এদিকে মিয়ানমার থেকে তিন হাজার টন চাল আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনামুল হক। তিনি বলেন, ‘দেশে শুল্কহার কমানোর পরপরই আমি মিয়ানমারে যোগাযোগ করে আতপ চাল প্রতি টন ৩৪৫ মার্কিন ডলারে বুকিং দিয়ে ঋণপত্র খুলেছি। ১২ জুলাই নাগাদ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছবে এই চাল। আর গতকাল বৃহস্পতিবার ভারত থেকে আড়াই হাজার টনের ঋণপত্র খুলেছি, সেগুলো স্থলবন্দর হয়ে চট্টগ্রাম পৌঁছতে আগামী সপ্তাহের শেষদিন পর্যন্ত লাগতে পারে। ’

সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজমও ইতিমধ্যে মিয়ানমারের সরবরাহকারীর সঙ্গে কথা বলে টনপ্রতি ৩৩৫ মার্কিন ডলারে ঈদের আগেই ১২০ টন চালের ঋণপত্র খুলেছেন। টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে সেই চাল ট্রাকে করে আগামী সোমবার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পৌঁছবে। একই সঙ্গে ভারত থেকে স্থলপথে ২০০ টন চাল আমদানি করছেন। সেটিও আগামী সপ্তাহে পৌঁছবে। চালের বাজার সম্পর্কে তিনি বলছেন, শুল্ক কমানোর পর ঈদের আগে ব্যাংক খোলা ছিল এক দিন, আর ঈদের পর ব্যাংক খোলা ছিল গতকাল এক দিন। আর একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোর অর্থবছরের শেষদিনের ব্যস্ততা চলছে। এই কারণে ঋণপত্র খোলার সুযোগ হয়নি। আর চালের পাইকারি বাজার এখনো বন্ধ রয়েছে। ফলে চালের বাজার কেমন হবে দেখার অপেক্ষায় আমদানিকারকরা।

উল্লেখ্য, গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চাল আমদানির ঋণপত্র খুলতে ব্যাংকগুলো এখন আর কোনো ‘মার্জিন’ ধার্য করতে পারবে না। অর্থাৎ চাল আমদানির জন্য এলসি (ঋণপত্র) খোলার সময় ব্যবসায়ীদের অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা থাকতে হবে না। তারা বাকিতে চাল আমদানি করতে পারবেন এবং চাল দেশে আসার পর ব্যাংকের ঋণ শোধ করতে পারবেন। এত দিন চাল আমদানিতে ১০ শতাশ কাস্টমস ডিউটি, ১৫ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি এবং ৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্কসহ মোট ২৮ শতাংশ শুল্ক দিতে হতো। দেশে চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ায় সরকার কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণেই ২০১৫ সাল থেকেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। বাজারে অস্থিরতা তৈরি হওয়ায় এখন সেটি কমিয়ে ১০ শতাংশ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রামে চালের বড় পাইকারি বাজার চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলীর ব্যবসায়ীরা বলছেন, হাওরে বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশে চাল উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক আগেই শুল্কহার কমানো এবং আমদানি উৎসাহিত করার পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার ছিল। দেরিতে হলেও এই পদক্ষেপ বাজারে সুফল বয়ে আনবে।

বেসরকারি চাল আমদানিকারকরা সমুদ্রপথের বদলে স্থলপথে চাল আমদানি সহজ ও সময় সাশ্রয়ী বলে মন্তব্য করছেন। তাঁদের মতে, ঋণপত্র খোলার পর মাত্র দুদিনে স্থলপথ দিয়ে চাল আমদানি করা যায়।

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তের ফলে চালের বাজারে অস্থিরতা কমে আসবে। যাঁরা মজুদ করে রেখেছেন তাঁরা চাল বাজারে ছেড়ে দিতে বাধ্য হবেন। নতুন করে দাম বাড়ানোর সুযোগ পাবেন না কেউ। তবে রমজানের শুরুতে এই উদ্যোগ নেওয়া হলে এই পরিস্থিতি তৈরির সুযোগ কেউ পেত না। ’ সরকারি হিসাবে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বেসরকারিভাবে চাল আমদানি হয় ২ লাখ ৫৫ হাজার টন আর সরকারিভাবে ১২ হাজার টন। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৮ জুন পর্যন্ত বেসরকারিভাবে চাল আমদানি হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার টন। সরকারিভাবে কোনো চাল আমদানি হয়নি।

পাঠকের মতামত: