ঢাকা,বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪

বুয়েট মনে করলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করতে পারে -প্রধানমন্ত্রী

ডেস্ক নিউজ :: অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতি নেই, তবে বুয়েট মনে করলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার (৯ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সম্প্রতি ভারত ও জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেয়া নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ মন্তব্য করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বুয়েটের কমিটি আছে, তারা যদি মনে করে বন্ধ (ছাত্ররাজনীতি) করে দিতে পারে। এখানে আমরা কোনো হস্তক্ষেপ করব না। এই যে ছেলেটাকে (বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ) হত্যা করল, এটা তো কোনো রাজনীতি না। বসুনিয়াকে (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র রাউফুন বসুনিয়া) যে হত্যা করেছিল সেটা রাজনৈতিকভাবে।’

ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতি ব্যান্ড করে দিতে হবে- এটা তো মিলিটারি ডিক্টেটরদের কথা। এখানে রাজনীতিটা কোথায়? এর কারণটা কোথায়? এটা খুঁজে খুঁজে বের করতে হবে।’

শুধু ঢাকা নয়, সারা বাংলাদেশের প্রত্যেকটা হল খুঁজে খুঁজে দেখা হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বুয়েটের ছাত্ররা আছে, বুয়েট সিন্ডিকেট আছে, কমিটি আছে, তারা যদি মনে করে তাহলে বন্ধ করে দেবে। এখানে আমরা কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করব না। তাই বলে ছাত্ররাজনীতিকে দোষারোপ করা, এটা তো রাজনীতি না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই দেশে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা কিন্তু ছাত্ররাই নিয়েছে। সেই ছাত্রলীগ করা থেকেই আমাদের ভাষা আন্দোলন। এই যে একটা সন্ত্রাসী ঘটনা (আবরার হত্যা) বা এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তো সংগঠন করা নিষিদ্ধ আছে। বুয়েট যদি মনে করে তারা সেটা নিষিদ্ধ করে দিতে পারে। এটা তাদের ওপর।’

তিনি বলেন, কিন্তু একেবারে ছাত্ররাজনীতি ব্যান্ড করে দিতে হবে, এটা তো মিলিটারি ডিক্টেটরদের (স্বৈরশাসক) কথা। আসলে তারা এসেই সবসময় পলিটিক্স ব্যান্ড, স্টুডেন্ট পলিটিক্স ব্যান্ড, রাজনীতি ব্যান্ড, এটা তো তারাই করে গেছে।’

ছাত্ররাজনীতি থাকার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমাদের দেশের নেতৃত্ব উঠে এসেছে তো ওই স্টুডেন্ট পলিটিক্স থেকেই। আমি ছাত্ররাজনীতি করেই কিন্তু এখানে এসেছি। দেশের ভালো-মন্দ চিন্তাটা আমার মাথায় ওই ছাত্রজীবন থেকে আছে বলেই আমরা দেশের জন্য কাজ করতে পারি। কিন্তু যারা উড়ে এসে বসেন, তারা আসে ক্ষমতাটাকে উপভোগ করতে। তাদের কাছে তো দেশের ওই চিন্তাভাবনা থাকে না। এইটা একটা শিক্ষার ব্যাপার, জানার ব্যাপার, ট্রেনিংয়ের ব্যাপার। এটা কিন্তু ওই ছাত্ররাজনীতি থেকেই ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে। আর আমাদের দেশের সমস্যা হলো বারবার এই মিলিটারি রুলাররা আসছে আর মানুষের চরিত্র হরণ করে গেছে। তাদেরকে লোভী করে গেছে। তাদেরকে ভোগবিলাসের লোভ দেখিয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘একটা ঘটনা ঘটেছে বলেই কিন্তু আমি ভাবি যে ছাত্ররাজনীতি ব্যান্ড। আমি যেখানে নিজেই ছাত্ররাজনীতি করে আসছি, সেখানে আমরা ব্যান্ড করব কেন? কোনো প্রতিষ্ঠান যদি করতে চায় সেটা করতে পারে। স্বাধীনতা ভালো তবে তা বালকের জন্য নয় এটাও একটা কথা আছে। স্বাধীনতার যে মর্যাদা দিতে পারবে না তার জন্য স্বাধীনতা ভালো না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পুলিশ কিন্তু মোতায়েন আছে সব জায়গায়। আবার পুলিশ যখন আলামত সংগ্রহ করতে গেল সেখানে আবার বুয়েটের ছাত্ররা আপত্তি জানাল, এখানে পুলিশ কেন? আলামত সংগ্রহ করতে গেলে বাধা দিল। এখন এদের সেফটি সিকিউরিটিটা কে দেবে? কীভাবে দেব? এখন যদি পুলিশ পাঠাই, কেউ পুলিশের ওপর একটা ঢিল মারল, কেউ একটা বোমা মারল, যারা এইভাবে মানুষ মারতে পারে তারা মারল, তারপর যদি পুলিশ রিঅ্যাক্ট করে তার দায়-দায়িত্ব কে নেবে?’

‘আমি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি তারা দূরে থাকবে। যারা আন্দোলন করছে করতে থাক। যতদিন খুশি আন্দোলন করতে থাক কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু তাদের নিজেদের ভেতরেই যদি কিছু হয় তো সেটার দায়িত্ব কে নেবে? আমি সেটা জিজ্ঞেস করি। সে দায়িত্ব তো আমরা নিতে পারব না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা এই ধরনের মানুষ খুন করতে পারে, তারা অনেক কিছু করতে পারে। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে এই সিকিউরিটিটা কীভাবে দেযা হবে? তারা ভিসিকে আল্টিমেটাম দিল, ভিসি কিন্তু সেখানো গেল, তারা ভিসিকেই আটকালো। ভিসির সঙ্গে যে টোনে যেভাবে কথা বলছে, কে ছাত্র কে ভিসি সেটাই তো বোঝা মুশকিল। ছাত্রদের আচার-আচরণ অন্তত সম্মানজনক হওয়া উচিত। তারা হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বলছে, একক্ষণই এটা পাস করতে হবে।’

‘আমরা মনে করি এরা হচ্ছে সবচেয়ে ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট, তারা এটা বোঝে না? এত সমর্থন পাওয়ার পর তাদের আন্দোলন আর কন্টিনিউ করার দরকার আছে? আর যদি আন্দোলন করেই আমাদের ল-এনফোর্স এজেন্সি রেডি আছে। এই রকম ঘটনা ঘটলে আমরা নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নিতে পারব। আমি চাই না যে, আমাদের পুলিশ বাহিনী বা কেউ এখানে হস্তক্ষেপ করুক’-যোগ করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘একটা ছাত্র মারা গেছে, তাদের মনে ক্ষোভ আছে, দুঃখ আছে, তারা সেটা দেখাচ্ছে। আন্দোলন করছে, করুক। আমরাও তো আন্দোলন করে করেই তো এই জায়গায় এসেছি। আন্দোলনের বিরুদ্ধে তো আমি কখনো যাই না।’

পাঠকের মতামত: