ঘুষের টাকাসহ বাংলাদেশ তার ও টেলিফোন বোর্ডের (বিটিসিএল) বিভাগীয় প্রকৌশলীসহ তিন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সাবেক এক কর্মকর্তার পেনশনের ফাইল ছাড়ার জন্য ঘুষ নেওয়ার সময় হাতেনাতে দুই কর্মচারীকে আটক করে দুদক। পরে ওই কার্যালয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলীকেও আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে ঘুষের ২০ হাজার টাকাসহ নগদ দুই লাখ ৮ টাকা, ৮৯ লাখ ৯ হাজার ৮শ টাকার সঞ্চয়পত্র, স্থায়ী আমানত, প্রাইজবন্ড, চেক ও তিনটি জমির বন্ধকী দলিল উদ্ধার করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার দুপুরে নগরীর কোতোয়ালী থানার নন্দকানন এলাকায় টেলিফোন বোর্ড কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। দুদক চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক আবদুল আজিজ ভূঁইয়া ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাব্বির রহমান সানির নেতৃত্ব অভিযান পরিচালিত হয়।
গ্রেপ্তারকৃত হলেন : বিভাগীয় প্রকৌশলী (ফোনস) প্রদীপ দাশ, প্রধান সহকারী ও হিসাবরক্ষক গিয়াস উদ্দিন এবং টেলিফোন অপারেটর হুমায়ুন কবির।
দুর্নীতি দমন কমিশনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক আবদুল আজিজ ভূঁইয়া পূর্বকোণকে বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতরা অবৈধ ভিওআইপির ব্যবসায় জড়িত বলে আমাদের প্রাথমিক তদন্তে ওঠে এসেছে। না হয় বিপুল পরিমাণ টাকার উৎস কোত্থেকে।’
আবদুল আজিজ ভূঁইয়া জানান, অবসরে যাওয়া এক সহকর্মীর কাছ থেকে ঘুষ নেয়ার সময় বিভাগীয় প্রকৌশলীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনজনকে থানা-হাজতে পাঠানো হয়েছে। দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মানিক লাল দাশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।
গিয়াস উদ্দিন ও হুমায়ুন কবিরকে আটকের পর তাদের কার্যালয় তল্লাশি করা হয়। গিয়াস উদ্দিনের ড্রয়ার, আলমারি ও রেজিস্ট্রার বইয়ের ফাঁক থেকে নগদ টাকা, প্রাইজবন্ড, চেক সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানতের কাগজপত্র পাওয়া যায়। এরপর টেলিফোন অপারেটরের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বিভাগীয় প্রকৌশলীর কক্ষেও তল্লাশি চালানো হয়। ওই কক্ষের আলমারি থেকে নগদ এক লাখ ৫৪ হাজার টাকা ও দুই লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র উদ্ধার করা হয়। বিভাগীয় প্রকৌশলী এই অর্থের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন বলে দাবি করলেও দুদক কর্মকর্তারা তাকেও আটক করেন।
দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর উপ-সহকারী পরিচালক মানিক লাল দাশ জানান, সাত মাস আগে অবসরে যাওয়া উপ-সহকারী প্রকৌশলী মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম ভূঁইয়ার কাছ থেকে অবসরকালীন টাকা উত্তোলনের জন্য ঘুষ দাবি করেন গ্রেপ্তারকৃতরা। এ অভিযোগের ভিত্তিতে দুদকের একটি দল টেলিফোন বোর্ডের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে ‘ঘুষের’ টাকা নেওয়ার সময় গিয়াস ও হুমায়ুন কবিরকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে। পরে বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রদীপ দাশকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রদীপ দাশ সাংবাদিকদের বলেন, আমি এ ঘটনার কিছুই জানি না। কক্ষের সব চাবি কর্মচারীদের কাছে থাকে। তারাই কক্ষের আলমারি ব্যবহার করেন।
দুদক কর্মকর্তা মানিক লাল জানান, প্রধান সহকারী গিয়াস উদ্দিনের কক্ষ তল্লাশি করে তার ও বউয়ের নামে ৮৩ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, প্রাইজবন্ড ও নগদ ৮০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। গিয়াস উদ্দিনের নামে ৪০ লাখ ও বউয়ের নামে ৪৩ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র রয়েছে। বিভাগীয় প্রকৌশলীর কক্ষের আলমারি থেকে নগদ ১ লাখ ৫৪ হাজার টাকা ও দুই লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র উদ্ধার করা হয়। অপারেটর হুমায়ুন কবিরের নামে দুই লাখ টাকার স্থায়ী আমানত ও দুই লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রের কাগজপত্র পাওয়া গেছে।
মুক্তিযোদ্ধা মো. আবুল কাশেম ভূঁইয়া বলেন, ৭ মাস আগে আমি অবসরে গিয়েছি। পেনশন ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকার জন্য ফাইল আগ্রাবাদ অফিসে পাঠাতে হবে নন্দনকানন অফিস থেকে। কিন্তু এ ফাইল পাঠানোর জন্য ৫০ হাজার টাকা ঘুষ চান তারা। আমি মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেবার পর তারা ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। এরপর দুদকের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক বরাবর আমি অভিযোগ করি।
মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম ভূঁইয়া ছাড়াও আরও পাঁচ সহকর্মী সাহাবউদ্দিন, মারুফা, সাধনা, রমা ও কোহিনুরের কাছ থেকেও বিটিসিএল’র কর্তারা ঘুষ চেয়েছেন বলে দাবি করেন আবুল কাশেম ভূঁইয়া।
পাঠকের মতামত: