ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

বিএনপির নেতৃত্বে যারা আসতে পারেন, সম্ভাব্য তালিকা

bnp-gs-sp-news-1_1নিজস্ব প্রতিবেদক ::

আগামীকাল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির বহু প্রত্যাশিত ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল। নতুন করে দলকে সংগঠিত করে ‘ঘুরে দাঁড়ানো’র প্রত্যয় রয়েছে তাদের। সে লক্ষ্যে কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে দলের নেতৃত্বে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে দলটি। সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় মাঠে থাকা নেতাদের ‘ভূমিকা’ মূল্যায়ন করে এ পদবিন্যাস ঘটছে। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই ত্যাগী ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে আনা হচ্ছে। প্রবীণদের অভিজ্ঞতা ও তরুণদের সাহসী কর্মতৎপরতা কাজে লাগাতে এবার নবীন-প্রবীণ সমন্বয়ে গঠন করা হচ্ছে বিএনপির নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ এবং জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে আসবে অনেক ‘নতুন মুখ’। দলকে শক্তিশালী করতে কমিটির বাইরে থাকা ‘সংস্কারপন্থি’ হিসেবে পরিচিত নেতাদের দু’একজনকেও রাখা হতে পারে কেন্দ্রীয় কমিটিতে। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ছাড়াও দলীয় উপদেষ্টা কাউন্সিল গঠন করা হচ্ছে এবার। দলের বিপুলসংখ্যক নেতাকে পদায়ন করতে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে ‘এক নেতার এক পদ’ নীতিও গ্রহণ করা হচ্ছে। এতে দ্বন্দ্ব ও কোন্দল কমবে বলে মনে করছে বিএনপি হাইকমান্ড। কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির পাশাপাশি গঠন করা হচ্ছে বিষয়ভিত্তিক বেশ কিছু উপকমিটি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। এতে কাউন্সিলের সর্বশেষ প্রস্তুতি পর্যালোচনা করে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কিছু দিকনির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। গঠনতন্ত্র সংশোধন উপকমিটির উপস্থাপিত খসড়া প্রস্তাবনাও চূড়ান্ত করেছে স্থায়ী কমিটি। একই সঙ্গে বৈঠকে ড্রাফটিং উপকমিটির প্রস্তুত করা চেয়ারপারসনের বক্তব্যের খসড়াও চূড়ান্ত করা হয়। কাউন্সিলের উদ্বোধনী অধিবেশনে দলের চেয়ারপারসন এটি পড়বেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সমকালকে বলেন, শত বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও জাতীয় কাউন্সিল সফলভাবে সম্পন্ন হবে। কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে বিএনপি আবার ঘুরে দাঁড়াবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি এ দেশের একটি বড় রাজনৈতিক দল। এ দলে অনেক যোগ্য ও ত্যাগী নেতাকর্মী রয়েছেন। কাউন্সিলে যোগ্য নবীন ও প্রবীণ নেতাদের সমন্বয়েই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে আগামী দিনের জন্য নতুন নেতৃত্ব তৈরি হবে। আগামীকাল রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল। দলটির কেন্দ্রীয় কমিটিতে কারা নেতৃত্বে আসছেন_ এখন তা নিয়ে সর্বত্র চলছে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা। শেষ মুহূর্তেও পদপ্রত্যাশীরা চালিয়ে যাচ্ছেন জোর-তদবির ও লবিং। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের তৈরি করা তালিকায় থাকা ‘পরীক্ষিত ও যোগ্য’ নেতাদের দিয়েই দল পুনর্গঠন করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে লবিং-তদবির সেভাবে কাজে আসছে না বলে দলের বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, যারা আন্দোলনের সময় মাঠে ছিলেন তিনি দলের যে অবস্থানেই থাকুন না কেন তাকে এবার মূল্যায়ন করবে হাইকমান্ড। যারা বড় পদ নিয়ে সুবিধাবাদী অবস্থানে ছিলেন তারা যতই লবিং-তদবির করুন না কেন, হাইকমান্ড তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেবে না বলে আশা করা যায়। কাউন্সিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটি, উপদেষ্টা পরিষদ ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে আসবেন এমন সম্ভাব্য নেতারা হলেন_ মহাসচিব :দীর্ঘদিন ধরে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব পদে থাকা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব হবেন এটি প্রায় নিশ্চিত। তারপরও দলের একটি অংশ তার বিরোধিতা করছে। তারা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামকে মহাসচিব করার পক্ষে। কাউন্সিলকে সামনে রেখে জোর তদবির ও লবিং চালিয়ে যাচ্ছে ওই গ্রুপটি। অবশ্য তরিকুল ইসলাম শারীরিক অসুস্থার কারণ দেখিয়ে মহাসচিব হতে অনীহা প্রকাশ করে আসছেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে মহাসচিব করার পক্ষেও কথা বলছেন তার সমর্থক-নেতারা। তবে মির্জা ফখরুলের দীর্ঘ কারাভোগ, ত্যাগী ভূমিকা ও ক্লিন ইমেজের (স্বচ্ছ ভাবমূর্তি) কারণে দেশে-বিদেশে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা থাকায় হাইকমান্ড তার পক্ষে রয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, লন্ডনে অবস্থানরত দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও চলতি সপ্তাহে টেলিফোনে মির্জা ফখরুলকে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব করার পক্ষে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ বা ‘সবুজ সংকেত’ দিয়েছেন। একইসঙ্গে কাউন্সিলের পর দলের ব্যাপারে ফখরুলকে নতুন পরিকল্পনা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। জাতীয় স্থায়ী কমিটি :বর্তমান দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ১৯ সদস্যের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি রয়েছে। এবার দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে এর পরিধি বাড়িয়ে ২১ সদস্য করা হতে পারে। দলের সাবেক মহাসচিব অ্যাডভোকেট খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন, ড. আর এ গণির মৃত্যু এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি হওয়ায় ৩টি পদ শূন্য হয়েছে। এ ছাড়া স্থায়ী কমিটির ২ জন সদস্য শামসুল ইসলাম ও বেগম সারোয়ারী রহমান বয়সজনিত কারণে দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ হয়ে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। তাদের দলের উপদেষ্টা কমিটিতে নেওয়া হতে পারে। এ ৫টি পদে নতুন মুখ আনতে পারে দলের হাইকমান্ড। ফলে এসব পদে আসীন হতে দলের বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পূর্র্ণাঙ্গ মহাসচিব হয়ে পদাধিকার বলে স্থায়ী কমিটির সদস্য হতে যাচ্ছেন। নতুন করে স্থায়ী কমিটিতে আসতে পারেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান এম মোরশেদ খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকা, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, সেলিমা রহমান ও মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ড. ওসমান ফারুক, আবদুল আউয়াল মিন্টু, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ও যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান, সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ। সূত্র আরও জানায়, স্থায়ী কমিটির সদস্য পদ নিয়ে দলের ভেতরে তুমুল গ্রুপিং শুরু হয়েছে। স্থায়ী কমিটির বর্তমান প্রভাবশালী সদস্যরা নতুন করে স্থায়ী কমিটি করার ক্ষেত্রে গভীরভাবে হিসাব-নিকাশ করতে দলের চেয়ারপারসনকে পরামর্শ দিচ্ছেন। কেউ কেউ ওয়ান-ইলেভেনের সময়ের ভূমিকা বিবেচনা করে স্থায়ী কমিটির সদস্য করার পরামর্শ দিচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়া দলের আস্থাভাজন নীতিনির্ধারক নেতাদের পাশাপাশি দলসমর্থিত বুদ্ধিজীবীদের পরামর্শ নেবেন বলে সূত্র জানিয়েছে। দলীয় উপদেষ্টা :দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে দলীয় উপদেষ্টা কাউন্সিল করা হচ্ছে। এ উপদেষ্টারা স্থায়ী কমিটির নিচে ও ভাইস চেয়ারম্যানের ওপরে পদমর্যাদা পাবেন। দলীয় উপদেষ্টা হতে পারেন বর্তমান স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য এম শামসুল ইসলাম ও সারোয়ারী রহমান। আরও রয়েছেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান বিচারপতি টিএইচ খান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ব্যারিস্টার আমিনুল হক, শামসুজ্জামান দুদু, আখতার হামিদ সিদ্দিকী, বর্তমান কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সিনহা, স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক আবদুল হাই, পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক মনিরুল হক চৌধুরী, ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলার সভাপতি একেএম মোশাররফ হোসেন, নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম, সাবেক মন্ত্রী ও জাপা নেতা নূর মোহাম্মদ খান প্রমুখ। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ :সাবেক আমলা, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ীসহ পেশাজীবীদের মধ্য থেকে চেয়ারপারসনের বিভিন্ন বিষয়ক উপদেষ্টা করা হবে। বর্তমান উপদেষ্টাদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে স্থায়ী কমিটিতে নেওয়া হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে নতুন করে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হতে বেশ কয়েকজন জোর লবিং করছেন। আবার কাউকে চেয়ারপারসন নিজেই উপদেষ্টা করতে পারেন। বর্তমান উপদেষ্টাদের মধ্যে যারা থাকবেন তাদের পাশাপাশি বিষয়ভিত্তিক নতুন উপদেষ্টা হতে পারেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গাজী মাজহারুল আনোয়ার, ড. তাজমেরী এস ইসলাম, সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ, শফিক রেহমান, আবদুল হাই শিকদার, ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ মুনসিফ আলী প্রমুখ। বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক কাজী আসাদুজ্জামানকে উপদেষ্টা মর্যাদায় দলীয় রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ করা হতে পারে। ভাইস চেয়ারম্যান :বর্তমানে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৭ জন রয়েছেন। এর মধ্যে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বহিষ্কার, রাজিয়া ফয়েজের মৃত্যু, সমশের মবিন চৌধুরীর পদত্যাগ করায় ৩টি পদ শূন্য হয়েছে। কয়েকজন ভাইস চেয়ারম্যানকে স্থায়ী কমিটি ও দলীয় উপদেষ্টা পদে নেওয়া হলে আরও কয়েকটি পদ শূন্য হবে। ওইসব পদে নতুন মুখ আনা হবে। একইসঙ্গে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে এ সংখ্যা বাড়িয়ে ২০ জনের পক্ষে মত দিয়েছে গঠনতন্ত্র সংশোধন উপকমিটি। এ অবস্থায় নতুন কাউন্সিলে ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে বেশ কয়েকজন নেতার নাম আলোচনায় উঠে আসছে। নতুন করে দলের ভাইস চেয়ারম্যান হতে পারেন বর্তমানে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম, মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান, অধ্যাপক এমএ মান্নান, শামসুজ্জামান খান দুদু, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, মুশফিকুর রহমান, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, আবদুল হালিম, অ্যাডভোকেট হারুন উর রশীদ, ফজলুর রহমান পটল, মোসাদ্দেক আলী ফালু, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, বরকতউল্লাহ বুলু, মিজানুর রহমান মিনু, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান। সম্পাদকীয় পদ থেকে আসতে পারেন অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য টিএম গিয়াসউদ্দিন প্রমুখ। বর্তমানে সিলেট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক নিখোঁজ ইলিয়াস আলীকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে রাখা হতে পারে। চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক সচিব :বর্তমান আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপনকে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক সচিব পদ দেওয়া হতে পারে। ইতিমধ্যে তাকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব :গঠনতন্ত্র সংশোধনের প্রস্তাবে এ পদটিকে অতিরিক্ত যুগ্ম মহাসচিব করার কথা বলেছেন কেউ কেউ। আবার অনেকে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদটি রেখে অতিরিক্ত যুগ্ম মহাসচিব পদ তৈরির পক্ষেও প্রস্তাব দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত অতিরিক্ত মহাসচিব পদ না থাকার সম্ভাবনাই বেশি। এ পদে দলের বর্তমান যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান, সালাহউদ্দিন আহমেদ ও রুহুল কবির রিজভীর নাম আলোচনায় রয়েছে। তাদের মধ্য থেকেই একজনকে এ পদে রেখে অন্য দু’জনকে স্থায়ী কমিটির সদস্য অথবা ভাইস চেয়ারম্যান করা হতে পারে। যুগ্ম মহাসচিব :দলের গঠনতন্ত্র অনুসারে ৭ জন যুগ্ম মহাসচিব রয়েছেন। এবার গঠনতন্ত্র সংশোধন করে এ সংখ্যা ১০ জন করা হতে পারে। এ পদের জন্য দলের বেশ কয়েকজন তরুণ নেতা জোর লবিং চালাচ্ছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খন্দকার, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এহছানুল হক মিলন, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খুলনা বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, রাজশাহীর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন উর রশীদ, বর্তমান ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী। স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে দপ্তরের দায়িত্বে যুগ্ম মহাসচিব করা হতে পারে। অন্যদিকে ডাকসুর এজিএস নাজিমউদ্দিন আলমকে বিশেষ সম্পাদক পদে রাখা হতে পারে। যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে আলোচনায় থাকলেও ‘এক নেতার একপদ’ নীতির কারণে হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে ঢাকা মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বেই রাখা হতে পারে। সাংগঠনিক সম্পাদক :সাংগঠনিক সম্পাদক পদের জন্যও তরুণ নেতারাই বেশি তৎপর। বর্তমানে সাংগঠনিক সম্পাদকের ৭টি পদ রয়েছে। নতুন করে সাংগঠনিক বিভাগ বাড়িয়ে ১১টি পদ সৃষ্টি করা হতে পারে। ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক বর্তমান শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন বা বর্তমান সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, চট্টগ্রাম বিভাগে বর্তমান সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের ভূঁইয়া বা বর্তমান সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক লায়ন আসলাম চৌধুরী, রাজশাহীতে সাবেক ছাত্রনেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, খুলনা বিভাগে বর্তমান যশোর জেলার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেরুল হক সাবু, সিলেট বিভাগে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন বা হবিগঞ্জের মেয়র জিকে গউছ, বরিশাল বিভাগে বর্তমান সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক এবিএম মোশাররফ হোসেন, বিলকিস জাহান শিরিন ও মাহবুবুল হক নান্নু, ময়মনসিংহ বিভাগে বর্তমান সহ-প্রচার সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সাবেক ছাত্র নেতা শাহ শহীদ সারোয়ার ও মাহবুবুর রহমান লিটন, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, ফরিদপুর বিভাগে সাংগঠনিক সম্পাদক রাজবাড়ী জেলার সভাপতি আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম বা ফরিদপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোদারেছ আলী ইছা, কুমিল্লা সাংগঠনিক বিভাগে সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বা নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট রফিক শিকদারকে নেওয়া হতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে পারেন যারা :বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলনে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন পদোন্নতি দেওয়া হবে তাদের। বিশেষ করে চেয়ারপারসন ও মহাসচিব যাদের বিভিন্ন সাংগঠনিক দায়-দায়িত্ব দিয়েছেন তাদের মূল্যায়ন করবেন বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে জাতীয় নির্বাহী কমিটির বিভিন্ন সম্পাদক, সহ-সম্পাদক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদের জন্যও অনেক নেতাই তৎপর হয়ে উঠেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন বিগত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল, গৌতম চক্রবর্তী, চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন, খাগড়াছড়ির সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আশরাফ উদ্দিন নিজান, ডা. কাজী মাযহারুল ইসলাম দোলন, সহ-তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক শাকিল ওয়াহেদ সুমন, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক লায়ন হারুনুর রশিদ, ব্যারিস্টার নাসিরউদ্দিন অসীম, ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, খুলনার বরখাস্তকৃত মেয়র মনিরুজ্জামান মনি, রাজশাহীর বরখাস্তকৃত মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, মহিলা দল নেত্রী আফরোজা আব্বাস, শিরিন সুলতানা, সৈয়দা আশিফা আশরাফী পাপিয়া, রেহানা আক্তার রানু, হেলেন জেরিন খান, নিলুফার চৌধুরী মনি, শাম্মী আকতার, আফরোজা খানম রিতা, শাহিদা আক্তার রিতা, আন্তর্জাতিক সম্পাদক জাকারিয়া তাহের সুমন, সহ-দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি, শামীমুর রহমান শামীম, আসাদুল করিম শাহীন, তাইফুল ইসলাম টিপু, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল, কেন্দ্রীয় সদস্য ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, মনিরুজ্জামান মনির, এমএ কাইয়ূম, মুন্সী বজলুল বাসিত আনজু, আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, আবুল কালাম আজাদ, ইঞ্জিনিয়ার মইনুল ইসলাম শান্ত, শামা ওবায়েদ, শাহজাহান মিয়া সম্রাট, মাহমুদুল হক খান বাবু, সারোয়ার আজম খান, এজেডএম রিয়াজউদ্দিন নসু, আবদুল আউয়াল খান, সাবেক ছাত্রদল নেতা রফিক হেলালী, সাবেক ছাত্রদল নেতা জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, শহীদুল ইসলাম বাবুল, নুরুল ইসলাম নয়ন, শামসুজ্জামান মেহেদী, ডা. সালাহউদ্দিন মোল্লা, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, বেলাল আহমেদ, আনম সাইফুল ইসলাম, কামরুজ্জামান দুলাল, ডা. আরিফুর রহমান মোল্লা, রফিকুল ইসলাম রতন, আকবর হোসেন নান্টু, আবু ইউসুফ, আমিরুল ইসলাম আলীম, একরামুল হক বিপ্লব, সালাহউদ্দিন শিশির প্রমুখ। এ ছাড়া বিএনপি সমর্থিত তরুণদের নিয়ে গঠিত জি-৯ সংগঠনের প্রকৌশলী নেতা সাইফুল ইসলাম, ফয়সল আলীম, অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ, ডা. শায়ন্থ সাখায়াত, ড. সুকুমল বড়ূয়া ও শিল্পীদের মধ্যে আসিফ আকবর, বেবী নাজনীন, কনকচাঁপা প্রমুখ গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে পারেন। কেন্দ্রীয় পদে থাকতে চান প্রবাসী নেতারাও :পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিএনপির প্রবাসী শাখার প্রভাবশালী নেতারাও দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকতে আগ্রহী। কাউন্সিলকে সামনে রেখে তারাও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। গঠনতন্ত্র সংশোধন প্রস্তাবনায় প্রবাসী নেতাদের মধ্যে যারা দেশের মূলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত তাদের আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে রাখার কথা বলা হয়েছে। দেশে শুধু একজন আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক থাকবেন যিনি অন্যদের সমন্বয় করবেন। আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে ইউরোপ ও আমেরিকায় একাধিক নেতাকে রাখার চিন্তা-ভাবনা চলছে। এর মধ্যে বিএনপির যুক্তরাজ্য শাখার নেতা এমএ মালেক, লন্ডনে বর্তমান আন্তর্জাতিক সম্পাদক মহিদুল ইসলাম, কানাডার বিএনপির আহ্বায়ক মো. ফয়সল চৌধুরী ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের আন্তর্জাতিক সম্পাদক সুইডেনপ্রবাসী শহীদুজ্জামান কাকনকে রাখা হতে পারে। এ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের গিয়াস আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নেতা শাহ মোজাম্মেল নান্টু, মালয়েশিয়ার নেতা মাহবুবুল আলম শাহ, জার্মানির আবুল মিয়া ও সাইফুল ইসলাম, হংকংয়ে বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খাইরুল ইসলাম নিজামী স্বপন, ফ্লোরিডার দিনাজ খান, যুক্তরাষ্ট্রের বিএনপি নেতা কাজী সাখাওয়াত হোসেন আজম ও মাহমুদুল্লাহ মামুন, সৌদি আরবের আহমেদ আলী মুকিত, অস্ট্রেলিয়ার ডা. নার্গিস বানু প্রমুখ জোর তদবির চালাচ্ছেন।

পাঠকের মতামত: