ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

বিএনপিকে মাঠে নামতে দেবে না আওয়ামী লীগ

2017-03-09-03অনলাইন ডেস্ক :::

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণে বিএনপির প্রতি সতর্ক দৃষ্টিতে রাখছে   সরকার। নতুন নতুন দাবি তুলে বিএনপি যাতে কোনো ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারে সে জন্য প্রশাসনিক পদক্ষেপের পাশাপাশি আওয়ামী লীগকেও সাংগঠনিকভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে। কোনোভাবেই মাঠে নামতে দেওয়া হবে না— এই মনোভাব নিয়েই যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নিজেদের প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, বর্তমান সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন টিকিয়ে রাখতে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ ছাড়া বিএনপির কাছে কোনো বিকল্প নেই। তবে দলটির মধ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে দুটি মত রয়েছে। একটি অংশ বর্তমান পদ্ধতি মেনে নিয়েই নির্বাচনের পক্ষে। অপরটি কোনো অবস্থাতেই বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ নয়। তারা মনে করে, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে সরকারকে দাবি আদায়ে বাধ্য করতে হবে। এ জন্য আন্দোলনের বিকল্প নেই। অন্যদিকে সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, এখন থেকেই বিএনপিকে চাপে রাখতে পারলে তারা অতীতের মতো নৈরাজ্য, সন্ত্রাস ও ধ্বংসের রাজনীতিমুখী হবে না। কোনো ইস্যু করে দলটি যাতে আন্দোলনের নামে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সে ব্যাপারে আগাম সতর্ক পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। এ কারণেই বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের রাজনৈতিক চাপে রাখতে সরকার পুরনো মামলাগুলো আবার সচল করার কথা ভাবছে। ইতিমধ্যে এসব মামলার কী অবস্থা তার ওপর প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বিএনপি আন্দোলনের নামে দেশকে অশান্ত করার কোনো কর্মসূচি দিলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীও থাকবে কঠোর অবস্থানে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, আওয়ামী লীগ চায় তাদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। তবে সেই নির্বাচনে তাদের নিঃশর্তভাবে আসতে হবে। এ লক্ষ্যে বিএনপির কোনো দাবি বা প্রস্তাব সরকার মানবে না। বিশেষ করে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিএনপি কিছু প্রস্তাব উপস্থাপন করতে পারে বলে সরকার মনে করছে। তবে এ  ব্যাপারে সরকার কিংবা আওয়ামী লীগ কোনো ছাড় দিতে নারাজ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য এই প্রতিবেদককে বলেন, বিএনপি আমাদের কাছে ধরা আছে। একদিকে তারা নিবন্ধন ঝুঁকিতে আছে, অন্যদিকে নাশকতার মামলার। আর বিএনপির নেত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা তো রয়েছেই। এ অবস্থায় নির্বাচনের রাজনীতি থেকে দূরে থাকলে দল এবং দলের নেতা-কর্মী কারও জন্য তা শুভকর হবে না। এমনিতে গত নির্বাচনে অংশ না নিয়ে উল্টো সন্ত্রাস-নাশকতা করে তারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে জামায়াতের ফাঁদে পা দিয়ে নির্বাচন বর্জন করার পরিণামে দলের আজ এই দুর্গতি। এই অবস্থা থেকে বিএনপিকে উদ্ধার করতে নির্বাচনে অংশগ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। তবে তাদের বর্তমান পদ্ধতি অর্থাৎ শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচনে আসতে হবে। এর বিকল্প কোনো প্রস্তাব, চিন্তা বা শর্ত দাঁড় করানোর সুযোগ সরকার বিএনপিকে দেবে না। সরকারের শীর্ষস্থানীয়রা মনে করেন, গত নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে একটা হতাশা তৈরি হয়েছে যেটা দলটির সাংগঠনিক তত্পরতা স্থবিরতার মধ্য দিয়েই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। এরপর এবারও যদি নির্বাচনে অংশ না নেয় তাহলে সাংগঠনিক দিক থেকে দলটি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। আর পরপর দুবার নির্বাচনে অংশ না নিলে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন নিয়ে জটিলতায় পড়তে হবে বিএনপিকে। সবকিছু বিবেচনায় রেখে কঠোর ও নমনীয়তার মধ্যে থেকেই সরকার বিএনপিকে গভীর পর্যবেক্ষণে  রেখেছে। দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে দলের অঙ্গ-সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে রাখছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা।

পাঠকের মতামত: